এস এম আজাদ:
সূর্য্যসন্তানের অযোগ্য উত্তরসূরী নুসরাত জাহান রাফির ঘটনা সবার জানা। ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মাদরাসা পড়ুয়া প্রতিবাদী মেয়েটিকে নির্মমভাবে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা এখনো পোড়াচ্ছে দেশবাসীকে। শয়তানদের খুটির জোর আর নেপথ্যের রহস্য তুলে আনতে ঢাকার কোন সাংবাদিক হিসেবে প্রথম পা রেখেছিলাম সোনাগাজীতে। আগে ফেনীতে বাড়ি জানতাম, ঠিক সোনাগাজীতেই যে জন্মে ছিলেন আমার সুপার হিরো জহির রায়হান, তার ভাই শহীদুল্লাহ কায়সার এবং আরেক সূর্যসন্তান সেলিম আল দীন, এটা মাথায় ছিল না। এবার বুঝলাম সোনাগাজীর মাটি সংস্কার ভাঙা আর প্রতিবাদী মেধার জন্য উর্বর। তারই ফসল রাফির আমৃত্যু প্রতিবাদী কণ্ঠ। সোনাগাজীর সজীব নারীকণ্ঠও জাতীয় পর্যায়ে আওয়াজ তোলে। দুটি নাম জানলাম। শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সারের কণ্যা মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শমী কায়সার এবং আরেক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব রোকেয়া প্রাচী। তারা দুজনই জনপ্রতিনিধি হতে চান বলে আলোচনা শুনেছি। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য এলাকার মেয়ে রাফির মৃত্যুর ঘটনায় তাদের কণ্ঠ গর্জে ওঠেনি। রোকেয়া প্রাচীকে চলচ্চিত্র পরিবারের একটি কর্মসূচীতে দেখা গেলেও শমীকে দেখিনি। বক্তব্য, বিবৃতি দিয়েছেন কিনা জানলে কেউ আমাকে জানাবেন। অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, সোনাগাজীর কোন মানুষ জাতির সূর্যসন্তাণের কণ্যা শমীকে নিয়ে কোন আগ্রহ দেখায় না। অথচ দেশে তিনি জনপ্রিয় বটে! তিন গুণীর নামে সোনাগাজী শহরে তেমন কিছু নেই। স্থানীয় সাংবাদিকরা জানালেন, সেলিম আল দীনের গ্রামে তার নামে স্কুল আছে। ফেনী শহরে জহির রায়হান ও শহীদুল্লাহ কায়সারের নামে সড়ক, অডিটোরিয়াম আছে। তবে এই পরিবারের পরবর্তী প্রজন্ম এলাকাবিমুখ। তার ওপর জহির রায়হানের পরিবারের সঙ্গে বাড়ি দখল নিয়ে শমীর বিরোধের গুঞ্জন আছে এলাকায়। শুনে মন খারাপ হয়েছিল আমার। কাজের ফাকে তাদের বাড়ি ঘুরে আসার পরিকল্পনা বাতিল করলাম। সোনাগাজীর লোকজনের ওপর রাগও হয়। আমার বাড়ি ভোলায়। আমরা ভোলার কৃতি সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল, দ্বীপসিংহ- উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক তোফায়েল আহমেদ, মঙ্গলের কবি মোজাম্মেল হক, কবি নাসির আহমেদ, ফুটবলার গজনবী থেকে আমিনুল পর্যন্ত সবাইকে নিয়ে কত গর্ব করি। আর ওরা? তবে ক’ দিনের অভিজ্ঞতা বলছে, সূর্যসন্তানদের উত্তরসূরীদের মাঝে হতাশাই পাচ্ছেন সোনাগাজীর মানুষ। শমী কায়সার গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে তা-ই প্রমাণ করলেন। কতটা টাউট শ্রেণিতে তিনি নাম লিখিয়েছন তা বক্তব্য থেকে পরিষ্কার। তিনি একজন সাংবাদিকের কণ্যা হয়ে সাংবাদিকদের চোর বলেছেন! বিষয়টা তিনি অন্যভাবে মোকাবেলা করতে পারতেন। তার লোকজন সাংবাদিকদের দেহ তল্লাশি করেছে। এর পর তিনি কাজের কারণে বের হতে চাওয়া সাংবাদিকদের চোর বলে সম্বোধন করেন। তিনি ফোন উদ্ধারে সাংবাদিকদের সহায়তা চাইতে পারতেন। পরে সাংবাদিকরাই কিন্তু ফুটেজ বের করে চোর শনাক্ত করে দেন। প্রবাদ আছে- চোর পৃথিবীর সব মানুষকে নিজের মতো, অর্থাৎ চোর মনে করে। আর ভাল মানুষ চোরকেও ভাল মানুষ মনে করে ভুল করে। আমরা কি তেমন ভুল করে আসছিলাম? সোনাগাজীর লোকজন কি বলে? দেখি কেউ প্রতিবাদ করে কিনা!
ইনচার্জ, অপরাধ বিভাগ, দৈনিক কালের কন্ঠ