জেট এয়ারওয়েজের কোনও বিনিয়োগকারী পাওয়া যায়নি। ভারতের বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থাটির বিরুদ্ধে ন্যাশনাল কোম্পানি ল’ ট্রাইব্যুনালে দেউলিয়া মামলা শুরু করার আবেদন জানিয়েছে দেশটির স্টেট ব্যাঙ্কের নেতৃত্বাধীন পাওনাদার ব্যাঙ্কগুলি। আদালত সেই মামলা শুরুর মঞ্জুরি দেয়। গত বৃহস্পতিবার শেয়ার বাজার দেখে মনে হচ্ছিল বুঝি জেট এয়ারওয়েজ কেনার উপযুক্ত খরিদ্দার মিলেছে। গত ১৭ এপ্রিল থেকে বন্ধ বিমান সংস্থাটির শেয়ার দর এ দিন সকালে ২৯.৮০ টাকায় খোলে এবং খানিকক্ষণের মধ্যে ওই দর আড়াই গুণেরও বেশি লাফিয়ে শেয়ার প্রতি ৭৪.৫০ টাকায় পৌঁছোয়! দিনের শেষে অবশ্য খানিকটা নেমে ৬৪ টাকায় বন্ধ হয়।
এক বিবৃতিতে জেট এয়ারওয়েজ প্রতিষ্ঠাতা নরেশ গোয়েল বলেছেন, ‘আমি শুধুই আশা ও প্রার্থনা করতে পারি, এ বার হয়তো সমস্যা সমাধানের একটা উপায় খুঁজে পাওয়া যাবে। জেট আবার উড়তে পারবে এবং তা হলে শুধুমাত্র আমাদের কর্মীদেরই আশা-আকাঙ্ক্ষা নয়, জেট এয়ারওয়েজের উড়ান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই সমস্ত যাত্রী যারা ‘ওড়ার আনন্দ’ মিস করছিলেন তাদেরও ইচ্ছাপূরণ হবে।’
ব্যাঙ্কগুলির কাছে ৮,৫০০ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ বকেয়া জেট এয়ারওয়েজের। অন্য জোগানদারের বকেয়া, কর্মীদের বেতন, বিমানবন্দরে বকেয়া মাসুল প্রভৃতি ধরলে দেনার পরিমাণ দাড়ায় ১৫,০০০ কোটি টাকারও বেশি। ইতিমধ্যে কিস্তির টাকা না পেয়ে জেট এয়ারওয়েজকে ভাড়া দেওয়া বিমান ফিরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে বিভিন্ন সংস্থা। ফলে, ১২৩টি বিমানের মধ্যে নিজস্ব বলতে হাতে পড়ে রয়েছে সামান্য কিছু বিমান।
ভারতের ভেতর বিভিন্ন রুটে জেট-এর বিমান চালানোর লাইসেন্সের আংশিক সাময়িকভাবে অন্য বিমান সংস্থাগুলিকে দিয়ে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সংস্থাটির আন্তর্জাতিক রুটগুলিকেও সাময়িকভাবে অন্য সংস্থাগুলিকে দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে সরকার। এই রুট লাইসেন্সগুলি পাকাপাকিভাবে হাতছাড়া হয়ে গেল, জেট এয়ারওয়েজ কিনতে কোনও সংস্থাই এগিয়ে আসবে না। তাই, জেট এয়ারওয়েজ-এর বিষয়টিকে ‘ন্যাশনাল ইমপর্টেন্ট’ উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার এনসিএলটি বিচারপতি তিন মাসের মধ্যে সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশ দেন এই মামলায় নিযুক্ত ইনসলভেন্সি রেজলিউশন প্রফেশনাল (আইআরপি) গ্রান্ট থ্রন্টনকে। আদালত আরও বলে, ওই সময়ের মধ্যে কোনও পাওনাদার জেট এয়ারওয়েজের কাছ থেকে কোনও বকেয়া উদ্ধার করতে পারবে না। জেট এয়ারওয়েজের সমস্ত অফিস, সম্পত্তি ও দলিল-দস্তাবেজের দখল নিতে আইআরপিকে নির্দেশও দেয় আদালত। ওই দখল নেওয়ার পর আগামী ৫ জুলাই আদালতকে প্রথম রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আইআরপিকে। তার পর প্রতি ১৫ দিন অন্তর সমাধান কতদূর এগোল তা নিয়ে আপ-টু-ডেট রিপোর্ট দিতে হবে।