মাশরাফির বিষণ্ণতা নিয়ে নানা গুঞ্জন

0
62

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দুর্দান্ত খেললেও নিষ্প্রভ মাশরাফি। তার চৌকস নেতৃত্ব নিয়ে কারও মনে প্রশ্ন দেখা না দিলেও বল হাতে তার পারফরম্যান্স নিয়ে নিযুত সমালোচনা। সাত ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন মাত্র ১টি। জোরে বল করতে পারছেন না। ১০ ওভার বল করতে পারছেন না। কত্ত কী!

তবে এসব সমালোচনায় নীরব মাশরাফি। পক্ষে-বিপক্ষে কোনো যুক্তি দিচ্ছেন। দলকে নিংড়ে দেয়ার পরও এ ধরনের সমালোচনায় বিদ্ধ হয়ে কদিন ধরেই বিষন্ন সময় কাটছে টাইগার অধিনায়কের।

গত দুদিন ধরে তো মিডিয়াকেই এড়িয়ে চলছেন মাশরাফি। অথচ সংবাদ সম্মেলনেরও পর মিডিয়াকর্মীদের সঙ্গে আড্ডা না দিলে তার পেটের ভাত হজম হতো না। সেই মাশরাফিই কিনা বৃহস্পতিবার ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে অনুপস্থিত। বিষণ্ন মাশরাফির হঠাৎ চুপসে যাওয়া নিয়ে উঁকি দিয়েছে নানা গুঞ্জন।

২০১৭ সালে শ্রীলংকা সফরে হুট করেই টি-টোয়েন্টি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন মাশরাফি। কাউকে কিছু না বলে, টস করতে গিয়ে ঘোষণা দেন অবসরের। আজকে লর্ডসে এমন কিছু ঘটলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা না দিলেও বিশ্বকাপে যে আজই তার শেষ ম্যাচ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তা ছাড়া মাশরাফি দিনকয়েক আগেই নিশ্চিত করেছেন বিষয়টি।

দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে কানাডার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হয়েছিল মাশরাফির বিশ্বকাপ যাত্রা। সেই যাত্রা শেষ হচ্ছে লর্ডসে পাকিস্তানের বিপক্ষে। এই ম্যাচের আগে মাশরাফির আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ে অবসরের বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু তিনি ‘নীরব’। মাশরাফির এই নীরবতা শ্রীলংকা সফরের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে বারবার। ২০১৭ সালের ৪ এপ্রিলের মতো অবসরের ঘোষণা (টি-টোয়েন্টিতে) দিয়ে বসবেন না তো আবার?

ভারতের সঙ্গে ম্যাচ হারার পর সংবাদ সম্মেলনে আসেননি। পাকিস্তান ম্যাচের আগেও একই চিত্র। কী হলো মাশরাফির? মিডিয়া ম্যানেজার রাবেদ ইমাম জানিয়ে গেলেন, ‘কোনো কারণ নেই। মাশরাফি ভালো আছে, এমনিতেই আসেনি।’ কিন্তু মাশরাফির জীবন দর্শনের সঙ্গে এটি যায় না।

লর্ডস ক্রিকেটের তীর্থস্থান। ঐতিহ্যবাহী স্টেডিয়ামটির ব্যালকনিতে অনেক সুন্দর মুহূর্তের জন্ম হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটে আছে সম্ভবত সৌরভ গাঙ্গুলির জার্সি ওড়ানোর দৃশ্য। সংবাদ সম্মেলনে না আসা মাশরাফিকে পাওয়া সেই ব্যালকনিতে। আনমনে বসে আছেন ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সেরা অধিনায়ক। শূন্যদৃষ্টিতে কী যেন ভাবছেন। যে ভাবনাগুলো হয়তো এক সুতোয় গাঁথতে পারছেন না। বিশ্বকাপে নিজের শেষ ম্যাচ খেলতে যাচ্ছেন বলেই কী তার এই বিষণ্নতা? নাকি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে ইতি জানাবেন বলে এ নীরবতা। নাকি সব সমালোচনার জবাব আজ মাঠেই দিতে চান এই কাপ্তান।

মাশরাফি হয়তো খেলোয়াড়ি জীবনের শেষটা এমনভাবে করতে চাইছিলেন না। তার চাওয়া ছিল সম্মানজনক ও ফর্ম নিয়েই বিদায়। কিন্তু বাদ সাধল তার ইনজুরি। বিশ্বকাপের পুরো আসরে ইনজুরি তাকে ভোগাচ্ছে। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে বড় রানআপ নিয়ে বল করতে পারছেন না। যে মাশরাফি দলের বিপদে নিজের হাতে বল তুলে নিতেন তিনিই কিনা ১০ ওভার বল করতে পারছেন না। এসবই নিশ্চয়ই পীড়া দিচ্ছে তাকে।

এ ছাড়া ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের কারণে কিছুদিন মাশরাফির অবসর নিয়ে প্রচুর কথা হচ্ছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের বাঁকবদলের নায়ক সেই আলোচনায় কিছুটা বিরক্ত। বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছাড়ার আগেই যেখানে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন ক্রিকেট ছাড়ার, এর পরও বারবার একই প্রশ্ন সামলাতে হচ্ছে তাকে। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ হেরে সংবাদ সম্মেলনে আসেননি, পাকিস্তান ম্যাচের আগের দিনও তাই। দুটো সংবাদ সম্মেলনই সামলাতে হয়েছে প্রধান কোচ স্টিভ রোডসকে। এর পরও বেশিরভাগ প্রশ্ন জুড়ে দিলেন মাশরাফি। এ পরিস্থিতি থেকে দূরে থাকতেই কী তার ‘আড়ালে’ থাকা?

অবশ্য গতকাল সংবাদ সম্মেলনের পর পাওয়া যায় মাশরাফিকে। অনুশীলন শেষে দলের সবাই যখন টিম বাসে করে ফিরতে ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে এসেছেন, শেষ মুহূর্তে ধীর পায়ে এগিয়ে এলেন অধিনায়ক। সাংবাদিকরা ঘিরে ধরেন। আপনার অবসর নিয়ে এত আলোচনা? শুকনো হাসিতে মাশরাফি বলে গেলেন, ‘ঘোষণা দিলে তো জানতেই পারবেন।’

নিজের মতো করে জোরে বল করতে না পারা, দলের দুঃসময়ে বল হাতে নিতে না পারা, বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল স্বপ্ন শেষ হয়ে যাওয়া এবং অবসর নিয়ে বাইরের আলোচনা— অনেক ভাবনাই উঁকি দিচ্ছে মাশরাফির মনে। লর্ডসের ব্যালকনিতে সেই ভাবনাগুলোই হয়তো বিষণ্ন করে তুলেছিল মাশরাফিকে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here