শার্শায় গৃহবধূ নিপীড়নের সত্যতা মিলেছে

0
93

বাংলা খবর ডেস্ক: যশোর জেনারেল হাসপাতালে মেডিকেল পরীক্ষার ফলে শার্শার সেই গৃহবধূকে নিপীড়নের সত্যতা মিলেছে।মঙ্গলবার ওই গৃহবধূর আলামত সংগ্রহ করে তা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে পাওয়া রিপোর্টে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ।

তিনি বলেন, নিপীড়নে কে বা কারা জড়িত ডিএনএ টেস্ট ছাড়া নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়।

এদিকে প্রথমে ভিকটিম শার্শার গোড়পাড়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই খায়রুলের নেতৃত্বে গণধর্ষণ হয়েছে বলে দাবি করেন। কিন্তু ভিকটিমের সামনে ওই খায়রুলকে হাজির করলে তিনি জানান, এই ব্যক্তি সেই খায়রুল নয়। তা হলে খায়রুল নামের অন্য এসআই, নাকি অন্য কেউ পুলিশের নাম ব্যবহার করে ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে। সেটি খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে যশোর জেলা পুলিশ।

জানা যায়, গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে শার্শার লক্ষণপুর এলাকায় ওই গৃহবধূর বাড়িতে গিয়ে তার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন গোড়পাড়া ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই খায়রুল ও তার সোর্স। টাকা দিলে তার স্বামীর বিরুদ্ধে ৫৪ ধারায় মামলা দেখিয়ে জামিনে সহায়তা করবেন বলে জানান।

ফেনসিডিল মামলায় জেলহাজতে থাকা তার স্বামীকে কীভাবে ৫৪ ধারা দেবেন, এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়াও হয়। একপর্যায়ে খায়রুল ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এর পর এসআই ও কামরুল ওই নারীকে নিপীড়ন করেন।

৩ সেপ্টেম্বর সকালে ওই নারী যশোর জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য এলে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আরিফ আহমেদ বলেন, গত ৩ সেপ্টেম্বর ওই গৃহবধূর আলামত সংগ্রহ করে তা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে পাওয়া রিপোর্টে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। কিন্তু সেটি কার বা কাদের তা ডিএনএ টেস্ট ছাড়া বলা যাবে না। সিআইডির মাধ্যমে ডিএনএ টেস্ট করাতে হয়।

ডিএনএ টেস্ট রিপোর্ট পাওয়া গেলেই জানা যাবে এক; নাকি একাধিক ব্যক্তি এতে জড়িত রয়েছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সিআইডির পক্ষ থেকে আমাদের বলা হয়েছে, আলামত প্রস্তুত রাখতে।’

এসআই পরিচয়দানকারী খায়রুলের খোঁজে পুলিশ:

পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী খায়রুল নামের সেই ব্যক্তির সন্ধানে মাঠে নেমেছে যশোর পুলিশ। বুধবার রাতে যশোর পুলিশের বিশেষ শাখার এক বিজ্ঞপ্তি সেই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন শিকদার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, যশোর জেলায় খায়রুল বা খায়রুল আলম নামে কোনো পুলিশ সদস্য আছে কিনা তা যাচাই করা হয়েছে।

জানা গেছে, শার্শা থানার এসআই শেখ খায়রুল বাসার গত ২৫ আগস্ট থেকে ৩০ দিন মেয়াদি বিআইসি প্রশিক্ষণে এসবি ট্রেনিং স্কুল ঢাকায় অবস্থান করছেন। বেনাপোল ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে এসআই খায়রুল ইসলাম কর্মরত আছেন।

এ ছাড়া অন্য কোনো পুলিশ সদস্য ঘটনার সময় ওই স্থানে গিয়েছিলেন কিনা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। অজ্ঞাতনামা পলাতক চতুর্থ ব্যক্তি পুলিশ সদস্য কিংবা অন্য যে কেউ হোক তাকে শনাক্তকরণসহ গ্রেফতারের জোর চেষ্টা অব্যাহত আছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও জানান, গত ৩ সেপ্টেম্বর বেলা অনুমান ১২টার দিকে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মাধ্যমে শার্শার এক নারী (নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হলো না) জরুরি বিভাগে ধর্ষণসংক্রান্ত পরীক্ষা করানোর জন্য আসেন।

হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিক ও অন্যদের তিনি জানান যে, ২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে অর্থাৎ ৩ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক দেড়টা থেকে আড়াইটার মধ্যে গোড়পাড়া পুলিশ ক্যাম্পের এসআই খায়রুল আলমসহ স্থানীয় তিনজন অর্থাৎ চারজনের মধ্যে দুজন তাকে ধর্ষণ করেছে। বাকি দুজন ধর্ষণে সহযোগিতা করেছে।

সংবাদ পাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে কোতোয়ালি থানার ওসিকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ভিকটিমের মেডিকেল পরীক্ষা সম্পন্ন করে পরিধেয় জামাকাপড় আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়।

ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ভিকটিমকে জিজ্ঞাসাবাদ পূর্বক গোড়পাড়া পুলিশ ক্যাম্পের এসআই খায়রুল আলমকে ভিকটিমের সামনে হাজির করা হয়।

ভিকটিম এসআই খায়রুল আলমকে দেখে বলেন, তিনি ধর্ষক ও সহযোগীদের বিদ্যুতের আলোতে দেখেছেন। ধর্ষণের সময় পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় প্রদানকারী ব্যক্তি এই এসআই খায়রুল ছিলেন না। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন শিকদার ঘটনাস্থ পরিদর্শন করেছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here