তলানিতে ইরাক-মার্কিন সম্পর্ক

0
498

বাংলা খবর ডেস্ক: ইরাকের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে শীতলতম সম্পর্ক চলছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

বুধবার বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। মিলিশিয়াদের ওপর মার্কিন প্রাণঘাতি হামলা সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন দাবি করে প্রতিবাদে দূতাবাস ভবনের বাইরে রাতভর অবস্থান করেছেন প্রতিবাদকারীরা।

বার্তা সংস্থা এএফপির এক আলোকচিত্রী এমন তথ্য জানিয়েছেন। মার্কিন বিমান হামলায় ইরাকের একটি আধা সামরিক বাহিনীর ২৫ যোদ্ধা নিহত হওয়ার পর ক্ষেপে উঠেছেন দেশটির সাধারণ মানুষ।

এরপর মঙ্গলবার কয়েক হাজার ইরাকি মার্কিন দূতাবাসে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছেন। অতি সুরক্ষিত গ্রিনজোনের নিরাপত্তা চৌকিগুলো তারা সহজেই পার হয়ে ভেতরে ঢুকেছেন।

এসময় তারা একটি নিরাপত্তা অভ্যর্থনা এলাকা ভেঙে তেহরানের সমর্থনে গ্রাফিতি আঁকেন। দূতাবাসের বাইরে অর্ধশতাধিক তাঁবু গেড়ে মার্কিন বাহিনী দেশটি ছেড়ে না যাওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

সকালে বৃহৎ কূটনৈতিক কম্পাউন্ডের বাইরে জমায়েত হয়ে মার্কিন পতাকায় আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদ জানান তারা।

জবাবে নিরাপত্তা বাহিনীও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেন। এতে বেশ কয়েক জন আহত হলে তাদের অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।

এসময় দূতাবাস ঘিরে থাকা ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যূহ সরে যায়। কিন্তু কেন্দ্রীয় পুলিশ চলে আসলে তারা আবার জড়ো হন।

হামলার জন্য প্রথম ইরানকে দায়ী করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনীকেও পদক্ষেপ নিতে চাপ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কোনো ধরনের বাঁধার মুখোমুখি না হয়েই বিক্ষোভকারীরা দূতাবাস ফটকে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন।

সুরক্ষিত গ্রিন জোন এলাকায় স্বাভাবিক নিরাপত্তা পদক্ষেপ বাড়িয়েছে ইরাকি বাহিনী। সাধারণত অনুমতি ছাড়া এই এলাকায় কেউ প্রবেশ করতে পারেন না।

কিন্তু বিক্ষোভকারীরা সেখানে থেকে বের করে দেয়া হয়নি। যে কারণে গ্রিন জোনের ভেতরেই ইরাক থেকে মার্কিন বাহিনীর অপসারণ দাবিতে রাতভর তারা প্রতিবাদ চালিয়ে গেছেন।

তবে মার্কিন দূতাবাসে এই হামলাই বলে দিচ্ছে উপসাগরীয় দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কতটা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এই সম্পর্ককে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে শীতলতম বলে আখ্যা দিয়েছেন দুই দেশের কর্মকর্তারা।

এতদিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলছে ইরাক। কিন্তু বর্তমানে এই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইরাকের চলমান ঘটনাকে ১৯৭৯ সালে তেহরানে মার্কিন দূতাবাসের জিম্মি সংকট ও ২০১২ সালে লিবিয়ায় মার্কিন মিশনে প্রাণঘাতি হামলার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে।

পেন্টাগন বলছে, দূতাবাস কর্মকর্তাদের রক্ষায় অতিরিক্ত মেরিন সেনা পাঠানো হয়েছে। ৮২তম এয়ারবোর্ন ডিভিশনের সাড়ে সাতশ সেনাকে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানো হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এসব অতিরিক্ত সেনাকে মোতায়েনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মার্ক এসপার বলেন, মার্কিন স্থাপনা ও নাগরিকদের বিরুদ্ধে হুমকির মাত্রা বাড়তে থাকায় যথাযথ এবং অতিরিক্ত সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে এই সেনা মোতায়েন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, এই সাড়ে সাতশ সেনা বর্তমানে কুয়েতে অবস্থান করবেন। প্রয়োজন অনুসারে চার হাজার সেনা অঞ্চলটিতে পাঠানো হবে। স্থানীয় বাহিনীকে সমর্থন করতে পাঁচ হাজারের বেশি মার্কিন সেনা বর্তমানে ইরাকে অবস্থান করছে।

মিলিশিয়াদের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যাযজ্ঞের পর ইরাকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ছায়াযুদ্ধ হঠাৎ করেই নতুন উত্তেজনা পেয়েছে। বর্তমানে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক তলানিতে রয়েছে।

২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইরাকে হামলা চালায়। তখনকার প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুত করে হত্যা করলেও দেশটিতে আর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসেনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here