রোহিঙ্গা গণহত্যা প্রমাণিত, আইসিজের চার আদেশ

0
67

বাংলা খবর ডেস্ক: মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ প্রমাণিত বলে রায় ঘোষণা করেছে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেল ৩টায় নেদারল্যান্ডসের হেগে স্থাপিত আইসিজেতে এ রায় ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন চারটি আদেশও দিয়েছে আইসিজে।

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে গম্বিয়ার করা মামলার রায় ঘোষণা করেন আইসিজে প্রেসিডেন্ট আব্দুল কাওয়াই আহমেদ ইউসুফ। তিনি রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দেয়ার আদেশ দিয়ে বলেন, রোহিঙ্গা গণহত্যার দায় কোনোভাবেই মিয়ানমার এড়াতে পারে না। তাছাড়া গাম্বিয়ার করা মামলার শুনানিতে অসহযোগিতা করেছে মিয়ানমার। তারা গণহত্যার বিষয়টি সম্পর্কেও সঠিক তথ্য দেয়নি।

রোহিঙ্গা গণহত্যার রায়ে যে চারটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে-
১. গণহত্যার দায় নিতে হবে মিয়ানমারকে: রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ প্রমাণিত বলে রায় দিয়েছে আইসিজে। তাদের দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ পাবে না মিয়ানমার।

২. রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দিতে হবে: অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এখন থেকে রোহিঙ্গাদের আর কোনো ধরনের নির্যাতন করা যাবে না। তাদের সুরক্ষা দিতে হবে।

৩. রোহিঙ্গা নির্যাতনের তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে: রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর যে পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা চালানো হয়েছে তার সমস্ত নথিপত্র প্রমণাদি সংরক্ষণ করতে হবে মিয়ানমারকে। কোনো ভাবে সেগুলো সরানো বা নষ্ট করা যাবে না।

৪. চারমাসের মধ্যে নিধনযজ্ঞ বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে: আগামী চার মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা নিষধযজ্ঞ বা নির্যাতন বন্ধ করতে হতে। রাখাইনে হত্যাকাণ্ড, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগে জড়িত মিয়ানমার সেনাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। সেই সঙ্গে মামলার বাদী গাম্বিয়ার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে মিয়ানমারকে।

এছাড়া মামলার রায়ে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় মিয়ানমারের অসহযোগিতার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়। দেশটির স্বাধীন তদন্ত কমিশন যে প্রতিবেদন দিয়েছে সেটা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনী পরিচালিত নৃশংসতাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে গেল বছরের ১১ নভেম্বর আইসিজে মামলা করে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। নেদারল্যান্ডসের হেগে আইসিজেতে গেল বছরের ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর মামলার ওপর শুনানি হয়। মামলায় প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও সংঘাত আরো তীব্রতর না হওয়ার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিতে আদালতের প্রতি আহ্বান জানায় দেশটি।

তবে হেগে শুনানিতে অংশ নেয়া মিয়ানমারের নেত্রী শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সু কি গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, এ বিষয়ে মামলা পরিচালনার এখতিয়ার জাতিসংঘের আদালতের নেই। গণহত্যার অভিযোগ খারিজ করতে বিচারককে আহ্বান জানিয়েছিলেন সু কি।

তবে গত ২০ জানুয়ারি মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতির কাছে রোহিঙ্গা ‘গণহত্যা’ তদন্তের সারসংক্ষেপ জমা দিয়েছে দেশটির স্বাধীন তদন্ত কমিশন (আইসিওই)। প্রতিবেদনে তারা উল্লেখ করে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু কর্মকর্তা নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা, তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়াসহ অসম শক্তিপ্রয়োগ করেছে, যা মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধের সামিল। তবে সেটাকে গণহত্যা বলা যায় না।

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালত মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে রুল জারি করবে কিনা সে বিষয়ে আদেশ দেয়ার আগেই এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মিয়ানমার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here