রংপুরে গ্লাডিওলাস চাষে কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তন

0
79

বাংলা খবর ডেস্ক: কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণে গ্লাডিওলাস ফুল চাষ করে ভাগ্য বদলেছে রংপুরের অনেক কৃষকের। উপযোগী আবহাওয়া ও ভালো দামে বিক্রি করতে পারায় ক্রমেই আগ্রহ বাড়ছে এ ফুল চাষে। গ্লাডিওলাস ফুল চাষ সম্প্রসারণে কাজ করছেন কৃষিবিজ্ঞানীরা।

রংপুর নগরীর বুড়িরহাট এলাকার যুবক আব্দুর রশিদ এক বিঘা জমিতে বারি গ্লাডিওলাস ৩, ৪ ও ৫ জাতের ফুল চাষ করেছেন। সাদা, লাল, বেগুনি, হলুদ- বাহারি রঙের এ ফুল ফাগুনের বাতাসে দোল খাচ্ছে। ধান, আলু, তামাক ক্ষেতের মাঝে ফুলের বাগান মন কেড়েছে এলাকাবাসীর। সৌন্দর্যের প্রতীক ফুল দেখতে নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছেন প্রতিনিয়ত। স্বল্প জমিতে ফুল চাষ করে ভালো লাভ আসায় আব্দুর রশিদের সাদাকালো জীবন এখন রঙিন। তাকে দেখে স্থানীয় বেকার যুবকরা ফুল চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। স্থানীয় বাজারে ফুলের চাহিদা থাকায় বাজারজাতের কোনো সমস্যা নেই। রশিদের ফুল যাচ্ছে রংপুরসহ নীলফামারীর সৈয়দপুর, জলঢাকা, ডালিয়া, লালমনিরহাটের তুষ ভাণ্ডারের বিভিন্ন ফুলের দোকানে।

আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আমার পূর্বপুরুষেরা ধান, পাট, সবজি চাষ করতেন। আমিও এসবই আবাদ করতাম। ধান-আলুর দাম না পেয়ে প্রতিবছর ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতো। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তাদের পরামর্শে ২০১৯ সাল থেকে ফুল চাষের পরিকল্পনা হাতে নিলাম। তাদের দেখানো পদ্ধতি অনুযায়ী ফুলগাছ রোপণ, পরিচর্যা, সার, কীটনাশক দেওয়া শুরু করি। রোপণের ৭০ থেকে ৭৫ দিনের মধ্যেই ফুল আসে এবং ১০০ দিন পর্যন্ত ফুল বিক্রি করা যায়। আমার ২৪ শতক জমিতে গ্লাডিওলাস আবাদ করতে খরচ হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা এবং ফুল বিক্রি হবে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মতো। ফুল চাষে লাভ দ্বিগুণ হওয়ায় আমার অর্থনৈতিক অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, গ্লাডিওলাসের পাশাপাশি গাঁদা, রজনীগন্ধা, গোলাপ চাষ করছি। ফুল বাগান পরিচর্যায় ৫ জন নারী ও আমার পরিবারের সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছে। ফুল চাষ আমার খুব ভালো লাগে। প্রতিদিন মানুষ বাগান দেখতে আসে, ছবি তোলে।’

ফুল চাষে আগ্রহী রাসেল আহমেদ (২৩) বলেন, ‘রশিদ ভাইয়ের ফুলের বাগান দেখে আমরা ফুল চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। আগামীতে বীজ কিংবা গাছের চারা ও কৃষি বিভাগের পরামর্শ পেলে আমি ফুল চাষ করতে চাই।’

স্থানীয় যুবক আনোয়ার হোসেন (২৮) বলেন, ‘তামাক, আলু চাষ করার পর তা বিক্রি করতে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কিন্তু এ থেকে ফুল অনেক লাভজনক। এটি অনায়াসেই বিক্রি হয়। তাই আমরা চাকরির পেছনে না ছুটে ফুল চাষ করে স্বাবলম্বী হতে আগ্রহী।’

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ফুল বিভাগ এবং রংপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ফুল চাষে কৃষককে আগ্রহী করে তুলছে। গ্লাডিওলাসসহ বিভিন্ন ফুলের চাষ সম্প্রসারণে জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করেছে বারি।

রংপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আশিষ কুমার সাহা জানান ফুল চাষের সম্ভাবনার কথা। তিনি বলেন, ‘রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চলের জমি বেশিরভাগ উঁচু ও মাঝারি উঁচু। এ অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগও কম হয়। তাই গ্লাডিওলাসসহ অন্যান্য ফুল চাষের সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল। বারি উদ্ভাবিত গ্লাডিওলাস ফুলের জাতের মান ও বাজার চাহিদা অন্যান্য গ্লাডিওলাসের চেয়ে ভালো। তাই চাষিরা এ ফুল চাষে উদ্বুদ্ধ হলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ফুল গোটা দেশে রপ্তানি করা সম্ভব। গ্লাডিওলাস, গাঁদা ফুল রোপণের তিন মাসের মধ্যে জাতভেদে ফুল আসে এবং প্রায় ৪ থেকে ৫ মাস পর্যন্ত ফুল থাকে।’

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কমলারঞ্জন দাস বলেন, ‘ফুল চাষ লাভজনক হওয়ায় যুবকরা এর চাষে ঝুঁকছেন। গ্লাডিওলাস ফুল চাষ করে দ্বিগুণ লাভ করছে কৃষক। বিভিন্ন জাতীয় ও গুরুত্বপূর্ণ দিবসে অনেক ফুলের প্রয়োজন হয়। ফুলকেন্দ্রিক দিবসগুলোতে সাধারণ মানুষের কাছে ফুলকে সহজলভ্য করতে এবং ব্যবসায়ীদের আয় বৃদ্ধিতে বারি নানা উদ্যোগ নিয়েছে। আশা করি ফুল চাষ করে এ অঞ্চলের কৃষকরা স্বাবলম্বী হবেন এবং নিয়মিত অন্যান্য ফসলের সঙ্গে ফুল চাষ করবেন।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here