‘অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুর খবর প্রতিদিন পড়ছি , ভাগ্যে কি আছে সত্যিই জানিনা ‘

0
130


পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য্য:

সুধাংশু আমার বন্ধু। আমরা একই সাথে জগন্নাথ হলে একই বিল্ডিং-এ থাকতাম। অনেক চুপচাপ, মেধাবী ছিল, ২৭তম বিসিএস (ট্যাক্সেশন) কর ক্যাডারে প্রথম হয়েছিল। শেষ পোষ্ট ছিল উপ-কর কমিশনার।
ওর বৌ মানষী আমার অনেক কাছের একজন বন্ধু, সেই বিশ্ববিদ্যায়লয়ের প্রথম বর্ষ থেকেই। ওদের একমাত্র মেয়ে সাঁঝবাতি আমার মেয়ের চাইতে ছোট।
কালও কথা হয়েছে ওদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে, কারন ওরা পুরো পরিবার করোনায় আক্রান্ত ছিল। আজ রাতে সুধাংশু চলে গেল। (দিব্যান্ লোকান্ স্বঃ গচ্ছতু)
‘ঈশ্বর যা কিছু করেন মঙ্গলের জন্য’-এটা জানলেও সুধাংশুর মৃত্যুতে কোন মঙ্গল নিহিত ছিল সেটা জানিনা।
মৃত্যু কি খুব কাছে চলে এসছে আমাদের? ভয়টা আস্তে আস্তে গাড় হচ্ছে । আজকাল রাতে ভাল ঘুম হয় না, মৃত্যু চিন্তা পেয়ে বসেছে। প্রায়ই ঘুমের ট্যাবলেট খেতে হচ্ছে। বারবার হাতের রেখা দেখি, ঠাকুরের ছবির দিকে তাকিয়ে থাকি। আমার আয়ুরেখা অনেক লম্বা, কিন্তু এটা জানি না প্রায় চার লাখ মানুষ যে মারা গেল করোনায় তাদের প্রত্যেকের আয়ু রেখা কম ছিল কিনা!
রোমান্টিকতা করে মাঝে মাঝে “মরণ রে, তুঁহুঁ মম শ্যামসমান” বললেও এ রকম অভুতপূর্ব সময়ে বলতে ইচ্ছা করছে “মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে, মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই। এই সূর্যকরে এই পুষ্পিত কাননে জীবন্ত হৃদয়-মাঝে যদি স্থান পাই।”
স্বভাবগতভাবেই আমি চঞ্চল, দিনে রাতে ঘুরে বেড়ায়, বেড়াতে চাই। সেই আমি আজ প্রায় দুইমাস ঘরবন্দী। জানিনা তাতেও শেষ রক্ষা হবে কিনা।
হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে কিংবা অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুর খবর প্রতিদিন পড়ছি। ভাগ্যে কি আছে সত্যিই জানিনা।
আজকাল গ্রামের কথা, বাড়ীর কথা, বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনদের কথা খুব মনে পড়ছে। আচ্ছা মারা যারা যাবার আগে কি মানুষের প্রিয়জনদের কথা মনে পড়ে? আচ্ছা আমার কেন খালি বাড়ী যেতে ইচ্ছা করে আজকাল?
এমন একটা সময় যখন মারা গেলে প্রিয়জনও কাছে আসবে না, শুধু কি ফেসবুকের টাইমলাইনে কয়েকঘন্টা থেকেই সব স্মৃতি বিলীন হয়ে যাবে?
হাসিখুশি, ঘুরে বেড়ানো, আড্ডা, অফিস, ঝগড়া, মান-অভিমানের সেই দিনগুলো কি আর ফেরত আসবে?
সুধাংশু তোর কি খুব তাড়া ছিল? তুই কি পথ দেখিয়ে গেলি আমাদের? যেখানেই থাকিস, ভাল থাকিস বন্ধু।
পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য্য: সাংবাদিক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here