‘আগুন নেভাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে রোগীদের বাঁচানো যেতো’

0
88

বাংলা খবর ডেস্ক:
ফাইল ছবিইউনাইটেড হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুন নেভাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে রোগীদের জীবন বাঁচানো সম্ভব হতো বলে মনে করছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তদন্ত কমিটি। এছাড়া অগ্নিকাণ্ড সংঘটন ও তা প্রতিরোধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

আজ রোববার গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে আগুনে ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও রাজউকের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার এই তদন্ত প্রতিবেদনগুলো তুলে ধরেন। আগামী ২২শে জুন এর শুনানির জন্য ধার্য রেখেছে হাইকোর্টের এই বেঞ্চ। এ ঘটনায় দুই আইনজীবীর করা রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২রা জুন এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দাখিলকৃত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে অগ্নিদুর্ঘটনা চলাকালে আগুন নেভাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে রোগীদের জীবন বাঁচানো সম্ভব হতো। এছাড়া ইমার্জেন্সি অ্যালার্ম বাজানো, রোগী অপসারণ ও হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপণ দলকে জরুরি উপস্থিত হতে অনুরোধ করলে অগ্নিকান্ড ও রোগীদের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হতো। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এসি থেকে আগুনের স্ফুলিঙ্গ নির্গত হতে দেখেও কর্মরত উপস্থিত ব্যক্তিদের আগুন নেভানোর ব্যাপারে ফায়ার এক্সটিংগুইশার (অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র) বা অন্যান্য আগুন নেভানোর সরঞ্জামাদি ব্যবহারে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

আর স্পর্শকাতর এলাকায় সেবাপ্রদানে পর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া এ ধরনের আইসোলেশন সেন্টার নির্মাণ ঠিক হয়নি এবং অস্থায়ী সরঞ্জামাদি দ্বারা তৈরি না করে স্থায়ী অথবা অগ্নি প্রতিরোধযোগ্য নির্মাণসামগ্রী দ্বারা এ ধরনের আইসোলেশন সেন্টার তৈরি করা উচিত ছিল বলে ফায়ার সার্ভিসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অমিত তালকুদার জানান, রাজউকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ আইসোলেশন সেন্টার নির্মাণ করলেও এ ধরনের স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড অনুসরণ করা হয়নি। এ বিষয়ে রাজউকের কোনো ধরনের অনুমোদন তারা নেয়নি। আর ডিএমপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অগ্নিকাণ্ড সংঘটন ও তা প্রতিরোধে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষের গাফিলতি ও অবহেলা ছিল।

অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে সুপারিশ:
ইউনাইটেড হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকল্পে সার্বক্ষণিক ফায়ার সেফটি অফিসার, কার্যকরী অগ্নিনির্বাপণকারী দলের সদস্যদের সরঞ্জামসহ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। নিয়মিত অগ্নিনির্বাপন প্রশিক্ষণ ও ফায়ার এন্ড ইভাকুয়েশন ড্রিল করা এবং যথাযথভাবে রেজিস্ট্রার রক্ষণাবেক্ষণ করার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। এছাড়া হাসপাতালে কর্মরত ব্যক্তিদের মধ্যে যারা রোগীর সঙ্গে অবস্থান করে তাদের থেকে ২৫ ভাগ জনবলকে অগ্নিনির্বাপন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এছাড়া বিএনএসবির আলোকে ভবনের বেজমেন্টে কোনো স্থাপনা যেমন-অফিস, স্টোর, কিচেন, ডাইনিং ইত্যাদি স্থাপন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বেজমেন্ট শুধুমাত্র গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ব্যবহার করা যাবে বলে কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে।

ইউনাইটেড হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুন নেভাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে রোগীদের জীবন বাঁচানো সম্ভব হতো বলে মনে করছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তদন্ত কমিটি। এছাড়া অগ্নিকাণ্ড সংঘটন ও তা প্রতিরোধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

গত ২৭ মে রাতেগুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনাভাইরাসের রোগীদের জন্য স্থাপিত আইসোলেশন ইউনিটে আগুন লাগে।আধা ঘন্টার মধ্যে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রনে আনলেও পাঁচজন রোগী মারা যান। এর মধ্যে তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়। অগ্নিকান্ডের পর হাসপাতালে নামমাত্র অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থাসহ নানা অব্যবস্থাপনার চিত্র উঠে আসে। ইউনাইটেড হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল, নিহতদের পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ এবং ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে গত ৩০শে মে রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নিয়াজ মুহাম্মদ মাহবুব ও শাহিদা সুলতানা শিলা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here