‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’ – (পর্ব- ৫)

0
97

শাহজাহান সরদার:
আমার লেখা ‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’ বইটি এই ‘করোনাকালের’ অবসরে ধারাবাহিকভাবে একদিন পর পর পোস্ট করা হবে। আশা করি আপনারা বইটি পড়ে দেশের সংবাদপত্র ও রাজনীতির ভেতরের অনেক খবর জানতে পারবেন।

(পর্ব- ৫)

দীর্ঘ বিরতির পর ফোন করে বাবুল সাহেব একদিন তার অফিসে যেতে বললেন। গেলাম পরদিন সকালে। জানালেন, সারওয়ার সাহেব হয়তো থাকবেন না। কেন জানতে চাইলাম। তিনি বললেন কিছু কথা। আমি বললাম, বসে আলোচনা করে ঠিক করে নিন। সারওয়ার সাহেব যুগান্তরে অনেক শ্রম-মেধা দিয়েছেন। পত্রিকা ভাল চলছে। আপনিও বিনিয়োগ করেছেন চাহিদামতো। তিনি বললেন, সারওয়ার সাহেব চলে গেলে আমি কীভাবে রাখব? আমি আর কথা বাড়ালাম না। একতরফা কথাই শুনলাম। সারওয়ার সাহেব এ বিষয়ে আমাকে কিছু বলেননি। আর আমিও জানতে চাইনি। কথায় কথায় বাবুল সাহেব বললেন, সম্পাদক দেখতে হবে। কাকে সম্পাদক করা যায়? আমি বললাম, আমার কোনো প্রস্তাব নেই। আপনি দেখেন। আসলে তখন আমার এত সময় ছিল না। অফিসের কাজে অনেক ব্যস্ত। এরপর তিনিই বললেন, আবেদ সাহেবের (আবেদ খান) সাথে জানা-শোনা আছে? আমি বললাম থাকবে না কেন? ইত্তেফাকে আমরা একসাথে কাজ করেছি। এখন ভোরের কাগজের সম্পাদক। বাবুল সাহেব জানতে চাইলেন, তাকে নিলে কেমন হয়। আমি বললাম, তিনি তো এখন ভোরের কাগজের সম্পাদক, ছেড়ে আসবেন কি-না? বাবুল সাহেব বললেন, যোগযোগ করেন না।

জানতে চাইলাম, আপনার সাথে কি পরিচয় আছে? বললেন, আছে। কীভাবে জানতে চাইলে বলেন, তিনি জেলে থাকার সময় তার মুক্তি দাবি করে আবেদ সাহেব ভোরের কাগজে একটি লেখা লিখেছিলেন। সেই সুবাদে জেল থেকে বের হবার পর পরিচয় হয়। তখন বললাম, তাহলে আপনি যোগাযোগ করলেই ভাল হয়। আমি তো বাইরের মানুষ। বাবুল সাহেব বললেন, যুগান্তর প্রতিষ্ঠায় আপনার ভূমিকার কথা সবাই জানে। আপনি প্রথম কথা বলেন, পরে আমি বলব। আর রাজি না হয়ে পারলাম না। বললাম ঠিক আছে ফোনে কথা বলব। রাতে আবেদ সাহেবকে ফোন দিলাম। আবেদ খান থাকেন উত্তরায় আর আমি ধানমন্ডি। ভোরের কাগজ অফিস তখন বাংলামটর।

কুশল বিনিময়ের সাথে জানতে চাইলাম কাল সকালে অফিসে আসবেন কিনা। আমি দেখা করতে চাই। কিছু কথা আছে। পরদিন ছিল হরতাল। আবেদ সাহেব জানালেন, হরতালে সকালে তিনি আসবেন না। বিকালে আসবেন। বিকালে সংবাদপত্রে কাজ থাকে বেশি। কথা বলা সম্ভব নয়। তাই বললাম সকালে আমি আপনার বাসায় আসব। হরতালে বেবিট্যাক্সি নিয়ে রিপোর্টররা সংবাদ সংগ্রহের কাজে চলাচল করে, তাই সহজেই উত্তরা যাওয়া যাবে। তিনি বললেন, তুমি এসো, আমি অপেক্ষা করব। রাতে অফিস থেকে যাবার সময় অ্যাসাইনমেন্ট খাতায় দেখি আমারও হরতাল ডিউটি। লেখা ‘হরতাল কম্পাইল’, মানে হল হরতালের সব খবর জেনে মূল নিউজটি তৈরি করতে হবে। অফিস থেকে আসার সময় বেবিট্যাক্সিওয়ালাকে বললাম সকাল ৯টার মধ্যে যেন আমার বাসায় আসে। আমি উত্তরা এলাকায় যাব। পরদিন সকালে বেবিট্যাক্সি এলো। আমি রওনা দিলাম। উঠতেই বেবিট্যাক্সিওয়ালা জানাল, ফেরার সময় মিলন সাহেবকে (জাকারিয়া মিলন) নিয়ে আসতে হবে। তার বাসাও উত্তরায়। মিলন সাহেব ভাল রিপোর্টার ছিলেন। ক্রাইম রিপোর্টার। কয়েকবছর আগে মারা গেছেন। বেবিট্যাক্সি থেকেই আমি মিলন সাহেবকে ফোন দিলাম, আমি উত্তরা আসছি। ফেরার সময় আপনাকে নিয়ে যাব। আবেদ সাহেবও ফোন দিলাম, আমি রওনা হয়েছি। উত্তরা রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্সের কাছে গিয়ে মনে হল, এভাবে খালি হাতে যাওয়া ঠিক হবে না। বেবিট্যাক্সি থেকে নেমে কিছু মিষ্টি নিলাম। ১০টার মধ্যেই আবেদ সাহেবের বাড়িতে পৌঁছি। তখন বাড়িটি ছিল ছোট, ছিমছাম। সামনে লন, যাতে উন্নত রুচির পরিচয় বহন করে। এখন ফ্ল্যাট বাড়ি করেছেন। আবেদ সাহেব আর ভাবি দু’জনই বাসায় থাকেন। একমাত্র ছেলে বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে এসে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। বসতেই চা মিষ্টি এল। কথা হল। খুলে বললাম বাবুল সাহেবের প্রস্তাব। জবাবে আবেদ সাহেব বললেন, এখনই আমর পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। কেননা এখন ভোরের কাগজে আছি। সহসা ছাড়তে পারব না। তবে বিষয়টি নিয়ে আমার দু’জন অভিভাবকের সাথে কথা বলব। তারা সম্মতি দিলে আমি ভোরের কাগজ থেকে গুটিয়ে নিব। এখানেই কথা শেষ। বিদায় নিয়ে মিলন সাহেবকে তুলে প্রেসক্লাবে আসি। প্রেসক্লাবে মিলন সাহেবকে নামিয়ে আমি যাই সেনাকল্যাণ ভবনে বাবুল সাহেবের অফিসে। বাবুল সাহেবকে আবেদ সাহেবের বক্তব্য জানালাম এবং বললাম, সারওয়ার সাহেব তো আছেন। আপনি আলোচনা করুন। না হয় ধৈর্য ধরুন। আমি আবারো বলি সমঝোতায় পৌঁছতে পারলে যুগান্তরের জন্য ভাল হবে।

বাবুল সাহেব বললেন, আমি তো তাকে চলে যেতে বলছি না। কিন্তু উনি চলে যাবেন বুঝতেছি, আমি এত শিল্প-প্রতিষ্ঠান চালাই আমার কাছে খবর থাকবে না? আমি আর কথা না বাড়িয়ে বলি কিছুদিন অপেক্ষা করেন। আগে দেখেন কি হয়। পরে ব্যবস্থা নেয়া যাবে। আসলে আমি ছিলাম অন্ধকারে। ভিতরে ভিতরে যুগান্তরে বড় ধরনের কোন্দল চলছিল। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া দুটি গ্র“পে বিভক্ত হয়ে পড়ে সাংবাদিক কর্মচারীরা। একটি সম্পাদককে ঘিরে, আর একটি মালিককে ঘিরে। আমার সাথে কোনো পক্ষেরই যোগাযোগ না থাকায় আমি জানতাম না। আর ঊর্ধ্বতন দু’এক জন ছিলেন যারা দু’দিকেই সমানভাবে যোগাযোগ রাখতেন। দু’পক্ষের কাছেই খবরাখবর দিয়ে দু’দিকে বেশ ভাল অবস্থান করে নেন। যেদিকে সুবিধা, সুযোগ বুঝে সে দিকে ঝুঁকবেন এমন একটি অবস্থা ছিল। সারওয়ার সাহেবের মধ্যে একধরনের সরলতা আছে। অনেক কথা অনেকের সামনে বলে ফেলতেন। তার এই সরলতার সুযোগ কাজে লাগিয়েছিল উচ্চাভিলাষী কেউ কেউ। দুপক্ষের কাছেই সুযোগ বুঝে কথা লাগিয়ে প্রিয় থাকতে চেয়েছেন। এরা কেউ কেউ দু’জনের মধ্যে সম্পর্কের তিক্ততাও সৃষ্টি করেন। যা আর সমঝোতায় পৌঁছানোর মতো ছিল না। বাবুল সাহেব বেশি কথার মানুষ নন। যা বুঝেন তাই করেন। আগেই বলেছি সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেন না। তার কাছে তথ্যপ্রমাণসহ এমন কেউ হয়তো কিছু বলেছে যে সারওয়ার সাহেব থাকবেন না। তাই তিনিও আগেই নতুন সম্পাদক ঠিক করে রাখতে চান। আমি ওঠার আগে বাবুল সাহেবকে আবার বললাম, কিছুদিন অপেক্ষা করেন দেখেন কী হয়? আমিও ভাবি।

বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে অর্ডার করুন #www.rokomari.com/utso
#www.porua.com.bd
#www.boimela.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here