ঝোল ঝরানো ছবি

0
92

শওকত মিল্টন:

ঝোল ঝরানো আমার প্রিয় একটা কাজ! খেতে যেমন আমি পছন্দ করি, এই ঝোল ঝরানোটাও বলতে পারেন সম পর্যায়ের পছন্দের। আমি খুব খাই এবং খুব ঝোল ঝরাই। এ কাজ কবে যে শুরু করেছিলাম, তা আর মনে নেই। তবে, শুরুটা মনে হয় সেই বরিশালে থাকতে। কি বিষয় হা করে আছেন কেন? হা করে থাকবেন না মশাই, মশা ঢুকবে মুখে। অ, বুঝছি, ঝোল ঝরানোটা বোঝেননি! তেল কমানো বোঝেন? অবশ্য আমরা বরিশাইল্লারা যখন বলি,’ কিরে বেডা তোর তো দেহি তেল বাইরা গেছে! বেশী লাফাইস না তেল কিন্তু কমাইয়া দিমু!!’ অথবা ‘ হালার পো হালা, তেল দেহাও মোর লগে! তোরে পাইলে কোলো ভাঙ্গমু!!!’ তখন আবার এই তেলের অর্থ ভিন্ন,শুদ্ধ বাংলায় মানে হচ্ছে বেশী বাড় বেড়েছে। এখনও ঠিক না হলে তেল কমানো বা ভাঙ্গা মানে মারধোর করে শিক্ষা দেয়া হবে। তবে সাধারন বরিশাইল্লা ভাষায় তেল হওয়া মানে শরীরে চর্বি জমা!!আর আমার ঝোল ঝরানো মানে শরীরের চর্বি নিয়ন্ত্রনের জন্য হাঁটাহাঁটি, সাইকেল চালানো, হাইকিং এসব করা- মানে এসব করলে ঝোলের মতো শরীর থেকে চর্বি ঝরে। বরিশালে থাকতে কিছু দিন অক্সফোর্ড মিশন চার্চের পুকুরে সাঁতার কেটেছিলাম। এই ঝোল ঝরাতে গিয়ে জীবনে কোনদিন পাহাড় বাওয়ার অভিজ্ঞতা না থাকলেও একবারেই কেওক্রাডাং ট্রেক করেছি। চট্রগ্রাম শহর ততোটা চেনা না হলেও পার্বত্য চট্রগ্রামের তিন জেলায় বেশ ঘোরাঘুরি হয়েছে। ঢাকায় লালমাটিয়ায় থাকার অন্যতম কারনও ছিলো ঝোল ঝরানোর এলাকাগুলো কাছাকাছি। আমি প্রতিদিন নিয়ম করে সকাল বিকাল একজন প্রধানমন্ত্রী আর এক মরহুম রাষ্ট্রপতিকে তাওয়াফ করে আসতাম। তেনারা দুজন এবং তাঁদের সমর্থকরা একে অপরকে কালীপূজার পাঁঠাবলির মতো সম্পর্কে থাকলেও আমি এবং আমার মতো ঝোল বিশেষ অজ্ঞরা! তাওয়াফে কিছু মনে করতাম না। বরিশাইল্যাগো কথা আছে, ‘পয়সা হইলে মাইনষে কুত্তা পালে!!’ তো পয়সা কোনদিন হলো না আর কুত্তাও কিনতে পারলাম না। আরও একটা কথা আছে শুদ্ধ বাংলায়,’গরীবের ঘোড়া রোগ।’ এ আবার আমার পুরা মাত্রায় আছে। একবার তো এই ঝোল ঝরানোর জন্য একটা ঘোড়াই কিনে ফেলেছিলাম, থুক্কু, মানে একটা সাইকেল কিনেছিলাম- আমার একদা সেকেন্ড হোম বার্সেলোনা থেকে। ভাঙ্গা সাইকেল- মানে সাইকেল বাবাজীকে ত্রিভঙ্গ করে রাখা যেতো। দেড়শো না দুইশো ইউরোর সেই সাইকেল নিয়ে কত কাহিনী!!! কেনা দামের দ্বিগূনেরও বেশী ইউরো খরচ করে ঢাকার মাটিতে নিতে পেরেছিলাম। তো সেই ঘোড়া মানে সাইকেলে চড়ে লেজেহোমো এরশাদের মতো শুক্র-শনি অফিসে যেতাম। আর প্রতিদিন যখন তাওয়াফ করতে যেতাম-তখন ওই সাইকেল বাবাজী সঙ্গী হতো। দেশ ছাড়ার সময় নগদ কড়কড়ে দশ হাজার তনখা দিয়ে সেই সাইকেল বাবাজীর মালিক হয়ে গেল আমার এক বিশেষ বন্ধু। যিনি টাকার কুমির না হলেও ঘড়িয়াল! ঘড়িয়াল চেনেন তো? মানে কুমির জাতীয় তবে সাইজে ছোট। তবে বন্ধু আমার মোটে হাতের মুঠো খোলে না- মানে অভ্যাস নাই আর কি!!! হা হা হা। তো যাক সে সব কথা। এই সাদা বরফের প্রতিবেশীর দেশেও ঝোল ঝরাই। এখন যেখানে কয়েকদিন ধরে ঝোল ঝরাতে যাচ্ছি, সেখানে একটা টিলা- এই ফুট পঞ্চাশ হতে পারে, বেশী ও হতে পারে। সেটা বাওয়া বাওয়ি করি দুবার, উঁচু নীচু ট্রেইল ধরে হাঁটাহাঁটি চলে। পুরো এলাকা এক চক্কর মারলেই মোটামুটি শ্বাস ঘন হয়ে যায়। আট- সাড়ে আট হাজার কদম হাঁটা হয়ে যায়। কাল সেখান থেকেই মহান লেকে শুয়ে থাকা আকাশটাকে বেশ লাগছিলো। আমার সাথে ছিলো আসাদ। ছবি তোলাতোলি চললো। ঝোল ঝরিয়ে মনে হলো, রাতে জ্যামাইকান রামের কিউবা লিবরে ককটেলটা দারুন হজম হয়ে যাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here