সামরিক জান্তার মুখের ওপর দাঁড়িয়ে প্রতিবাদী বিউটিকুইন হ্যান লে

0
61

বাংলা খবর ডেস্ক:
সামরিক জান্তার মুখের ওপর দাঁড়িয়ে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন মিয়ানমারের বিউটিকুইন হ্যান লে (২২)। দেশের সাধারণ মানুষকে যখন পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে, তখন বিবেকের তাড়নায় তিনি ঘরে বসে থাকেননি। বারুদের গন্ধে ঝাঁঝালো রাজপথে উত্তাপ ছড়িয়েছেন। তিনি মনে করেছেন, তার মতো সেলিব্রেটিরা রাস্তায় নামলে তাতে উদ্বুদ্ধ হবেন বিক্ষোভকারীরা। কিন্তু সেলিব্রেটিদের বিরুদ্ধে সামরিক জান্তা যেভাবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে, তাতে নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তার জন্য তিনি পাশের দেশ থাইল্যান্ডে অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কমপক্ষে পরবর্তী তিন মাসে তিনি দেশে ফিরে আসবেন না। সচরাচর কোনো বিউটিকুইনের বক্তব্য কোন সংবাদ মাধ্যমে আসে না। কিন্তু মিস গ্রান্ড মিয়ানমার গত সপ্তাহে যখন তার দেশের সামরিক জান্তার নৃশংসতার বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছেন তখন তা সংবাদ শিরোনাম হয়েছে।
থাইল্যান্ডে আয়োজিত মিস গ্রান্ড ইন্টারন্যাশনাল ২০২০ অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, আমার দেশ মিয়ানমারে বহু মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। দয়া করে মিয়ানমারকে সাহায্য করুন। ঠিক এখনই আমাদের আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন।

এর এক মাসেরও সামান্য বেশি সময় আগে হ্যান লে ছিলেন মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুনের রাস্তায়। সেখানে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন তিনি। অভ্যুত্থানের পর এর বিরুদ্ধে মিয়ানমারের রাজপথ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এরপর তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে সামরিক জান্তা বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে জলকামান ব্যবহার করে। এক সপ্তাহ পরে এই বিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করে। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে রাবার বুলেট ও গুলি ছোড়া হয়। এ পর্যন্ত সেখানে সামরিক জান্তার গুলিতে কমপক্ষে ৫৫৭ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে। সেভ দ্য চিলড্রেনের মতে, নিহতদের মধ্যে ৪৩ জনই শিশু। এ অবস্থা দেখে ইউনিভার্সিটি অব ইয়াঙ্গুনের মনোবিজ্ঞানের ছাত্রী হ্যান লে তার সেলিব্রেটি ইমেজকে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন। মনে করেন, এটা ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার কাছে বার্তা পাঠাতে পারবেন তিনি। হ্যান লে বলেন, মিয়ানমারে সাংবাদিকদের আটক করা হচ্ছে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি মুখ খোলার। থাইল্যান্ড থেকে বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, তার দু’মিনিটের বক্তব্য সামরিক জান্তার রাডারে হয়তো ধরা পড়বে।

হ্যান লে বলেছেন, তিনি থাইল্যান্ডের উদ্দেশে দেশ ছাড়ার আগে জানতেন যে, তার জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে। তাই তাকে সেখানে কিছুদিন থাকতে হতে পারে। তার ভাষায়, আমি সেনাবাহিনী এবং মিয়ানমারের ভিতরকার পরিস্থিতি নিয়ে অনেক কথা বলেছি। তাই আমার পরিবার এবং আমার নিরাপত্তা নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন। মিয়ানমারে সবাই জানেন, যা ঘটছে সে বিষয়ে সীমিত আকারে কথা বলা যাবে। তাই আমার বন্ধুরা আমাকে অনুরোধ করেছে মিয়ানমারে ফেরত না যাওয়ার জন্য।

তার এই ভীতি অমূলক নয়। গত সপ্তাহে ১৮ জন সেলিব্রেটির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে রয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রভাবশালীরা এবং দু’জন সাংবাদিক। তারা সবাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। হ্যান লে বলেছেন, নিজে বক্তব্য রাখার পরে তিনি কোন কর্মকর্তা বা সামরিক বাহিনীর কারো সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। হ্যান লে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাকে হুমকি দেয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, আমার জন্য মিয়ানমারে জেল অপেক্ষা করছে। এসব হুমকির পিছনে কে বা কারা সে সম্পর্কে জানেন না হ্যান লে। হ্যান লে’ বলেছেন, অভ্যুত্থানের পরে প্রথম সপ্তাহে যেসব শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন প্রতিবাদে তাদেরকে জেলে ঢোকানো হয়েছে। অ্যাসিসট্যান্স এসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস (এএপিপি) অধিকার গ্রুপের মতে, সামরিক জান্তার দমনপীড়নে কমপক্ষে ২৫০০ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হ্যান লে বলেন, এরই মধ্যে তার এক বন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি সে প্রতিবাদ বিক্ষোভও করছিল না। এক সন্ধ্যায় সে একটি দোকানে কফি পান করছিল। এ সময় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

মিয়ানমারে অবস্থানরত হ্যান লে’র পরিবার নিরাপদে আছে। তাদের সঙ্গে মাঝে মধ্যে যোগাযোগ হয় তার। কারণ, মিয়ানমারে নিয়মিতভাবে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের শহরের নাম এবং ঠিকানা প্রকাশ না করতে বিবিসিকে অনুরোধ করেছেন, তাদের নিরাপত্তার জন্য। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, মিস গ্রান্ড ইন্টারন্যাশনাল প্রতিযোগিতায় ভক্তদের রাজনীতি থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মিস গ্রান্ড কম্বোডিয়া লিভ চিলি। কিন্তু হ্যান লে বলেছেন, দেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলা তার দায়িত্ব। এ সময় তিনি অং সান সুচিকে মহীয়সী একজন অনুপ্রেরণাদায়ী হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here