মাহমুদ হাফিজ:
কলকাতা বিমানবন্দরে উবারে হারিয়েছিল ওয়ান প্লাস ফাইভ স্মার্ট ফোন। আমি পাওয়ার আশা ছেড়ে দিলেও কলকাতার কবি বন্ধু তারক নাথ দত্ত আশা ছাড়েননি। উদ্ধার কার্যে লেগেই ছিলেন। এই লেগে থাকার পেছনে প্রেরণাটি ছিল দেশের প্রতি তার অকৃত্রিম মূল্যবোধ। তার সাফ কথা,প্রতিবেশী দেশের বন্ধুর ফোন হারিয়ে যাবে আমার দেশে, তা পাওয়া এবং ফিরিয়ে না দেয়া পর্যন্ত বিষয়টা আমার দেশের লজ্জা। যাহোক, ফোন উদ্ধারে তারক কলকাতার তিনটি থানায় গিয়েছেন, উবার অফিসে কয়েকদিন ধর্ণা দিয়েছেন। শেষমেষ মাসখানেক আগে ফোনটি উদ্ধার হয়ে তার হাতে আসে। খবরটি আমাকে দিতে ছুটে যান কবি বরুণ চক্রবর্তীর কাছে… কারণ তার মাধ্যমে পরিচয় হওয়ায় কবি বরুণ চক্রবর্তীর মুখ দিয়েই খবরটি দিতে চেয়েছিলেন। এখন সেটটি পৌঁছে দেয়ার পালা। আমার তরফে তাড়া ছিল না। ধরে নিয়েছিলাম, তারকের মনের জোর যতোই থাকুক, ওটি খুইয়েছে আর পাওয়া যাবে না। ফোনটি পৌঁছে দেয়ার জন্য তারক ছিলেন ব্যতিব্যস্ত। কারণ, একই লজ্জা। সম্প্রতি সাংবাদিক কাজী রওনক হোসেন কলকাতা গেলে তার হাতে ফোন পৌঁছে দিয়ে তারক নির্ভার হন।
আজ রওনক ভাই সেই ফোন তুলে দিলেন আমার হাতে। ফোন হারিয়ে আমাকে সেদিন দেশে ফিরে আসতে হলেও এটি উদ্ধারে তারক নাথ এর সঙ্গে দিনমান খেটেছিলেন সাংবাদিক খান মোহাম্মদ সালেক। ফোন ফিরে পাওয়ার অবিশ্বাস্য ক্ষণটিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের বাগানে তিনিও ছিলেন উপস্থিত।
তারক দত্তের মতো এখনও অনেক মানুষ আছেন যারা এই ব্যস্ততার পৃথিবীতেও অন্যের উপকারে সময় দিতে পারেন অবলীলায়, বৈষয়িক জীবনের টানাপোড়েনের মধ্যেও ভেতরে লালন করে যান এক চমৎকার শিল্পদর্শন। সেই দর্শনটি হচ্ছে, দেশের প্রতি গভীর মমত্ববোধ । তার এই অতুলনীয় বোধ, আন্তরিকতার প্রতিদান আমার কাছে নেই। তবে তার জন্য আমার পক্ষ থেকে থাকবে অনন্ত ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা এবং অতি অবশ্যই বিশেষ পুরস্কার!!