নিউইয়র্ক : নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল যথাযথ মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস এর ৪৮তম বার্ষিকী উদযাপন করেছে গত মঙ্গলবার। দিবসের কর্মসূচী হিসেবে কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এর মাধ্যমে সকাল ১০টায় প্রথম পর্বের কর্মসূচী শুরু করেন। এ সময় স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এ উপলক্ষ্যে পাঠানো রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের রুহের মাগফেরাত ও দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত ও দোয়ার মাধ্যমে প্রথম পর্ব সমাপ্ত হয়।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে সন্ধ্যা ৬ টায় কনস্যুলেট মিলনায়তনে একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত বাজানো হয় এবং কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা তাঁর স্বাগত বক্তৃতায় মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বীরাঙ্গনাদের অবদান গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশী-আমেরিকানদের অর্থনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও প্রযুক্তিভিত্তিক সহায়তা ও বিনিয়োগকে বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজে লাগানোর জন্য উৎসাহিত করেন এবং তিনি বলেন স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করে একযোগে কাজ করলে বঙ্গবন্ধুর ’সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠা সম্ভবপর হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসাধারণ নের্তৃত্ব কিভাবে বাংলাদেশকে আজ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছে, কনসাল জেনারেল তাঁর বক্তব্যে সেটি তুলে ধরেন।
নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের আটলান্টিক সিটির মেয়র ফ্রান্ক জিলিয়াম, নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের ডেপুটি লিডার এবং সিটি কাউন্সিল মেম্বার জিমি ভ্যান ব্রেমার, নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল মেম্বার জনাব কস্তা কনস্টানটিনিডেস, কুইন্স বোরোর ডেপুটি প্রেসিডেন্ট শ্যারন লী, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের গভর্ণর এর প্রতিনিধি হার্স পরেখসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্য থেকে কয়েকজন শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। নিউইয়র্ক স্টেট গভর্নর এন্ড্রু এম কিউমো, নিউইয়র্ক সিটি মেয়র বিল দ্য ব্লাজিও, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন ল্যুই, সিনেটর জেসিকা রামোস এবং কুইন্স বোরো প্রেসিডেন্ট মেলিন্ডা কাট্জ কর্তৃক প্রেরিত বিশেষ প্রতিনিধিরা অভিনন্দন বার্তা পাঠ করেন।
উল্লেখ্য, গভর্নর এন্ড্রু এম কিউমো স্বাক্ষরিত প্রক্লেমেশনে ২৬ মার্চ ২০১৯ কে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে নিউইয়র্ক স্টেটে স্বীকৃতি দেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের অনন্য প্রাপ্তি হিসেবে নিউইয়র্ক স্টেট গভর্নর এন্ড্রু এম কিউমো এখন থেকে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে বাংলা ভাষায় ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় অন্তর্ভ‚ক্তির বিষয়টি ঘোষণা দেন এবং তাঁর প্রতিনিধি জনাব হার্স পরেখ কনস্যুলেটে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনকালে এই অনন্য প্রাপ্তির বিষয়টি অবগত করেন।
কুইন্স বোরো প্রেসিডেন্ট মেলিন্ডা কাট্জ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে তাঁর বিশেষ প্রতিনিধির মাধ্যমে এক অভিনন্দন বার্তা প্রেরণ করেন। এছাড়াও কুইন্স বোরো প্রেসিডেন্ট মেলিন্ডা কাট্জ বাংলাদেশ কনস্যুলেট প্রদত্ত কমিউনিটির সেবার মান বৃদ্ধি পাওয়াও এবং বাংলাদেশী-আমেরিকান কমিউনিটির সাথে নিবিড় যোগাযোগ স্থাপনে অগ্রণী ভূমিকা পালনের স্বীকৃতি হিসেবে কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসাকে ডিক্লেয়ারেশন অব অনার প্রদান করেন।
নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল মেম্বার কস্তা কনস্টানটিনিডেস তাঁর বক্তব্যে বলেন, কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসার বিশেষ আগ্রহের কারণে নিউইয়র্কে বিভিন্ন এয়ারপোর্টে অন্যান্য ভাষার সাথে বাংলা ভাষায় ’স্বাগতম’ অন্তর্ভূক্তির বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। উল্লেখ্য, কনসাল জেনারেল গত কয়েক মাস যাবত এ বিষয়ে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদ এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন চিত্রশিল্পী খুরশীদ সেলিম এর চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের কনসাল জেনারেল, বিপুল সংখ্যক কূটনীতিক, নিউইয়র্ক ও অন্যান্য স্টেটের প্রতিনিধি, কংগ্রেশনাল স্টাফ, থিংক-ট্যাংক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং বাংলাদেশ কম্যুনিটির সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ বিপুল সংখ্যক অতিথি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
নৃত্য, কবিতা ও গানের সমন্বয়ে ’অদম্য বাংলাদেশ’ থীমে একটি সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে বাংলাদেশকে তুলে ধরা হয়। অতিথিরা দিবসটি উদযাপনের জন্যে কেক কাটায় অংশগ্রহণ করেন। ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশী খাবার অতিথিদের মুগ্ধ করে।