বাংলা খবর ডেস্ক: ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্য দিয়ে তেহরানের এ শীর্ষ কূটনীতিকের জন্য নিজের দরজা বন্ধ করে দিল দেশটি। এতে ক্রমাগত উত্তেজনার মধ্যে দুই দেশের কূটনৈতিক আলোচনার পথও সম্ভাব্য রুদ্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।-খবর এএফপি ও রয়টার্সের
নিষেধাজ্ঞার ফলে জাভেদ জারিফের কোনো অর্থ যুক্তরাষ্ট্র কিংবা দেশটির কোনো সংস্থায় থাকলে তা বাজেয়াপ্ত করে দেয়া হবে। এছাড়া তার বিদেশ সফরও সীমিত হয়ে পড়বে।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মানুচিন এক বিবৃতিতে বলেন, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার বেপরোয়া এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন জারিফ এবং বিশ্বব্যাপী দেশটির প্রধান মুখপাত্রের ভূমিকা রাখছেন তিনি।
মানুচিন বলেন, ইরান সরকারকে যুক্তরাষ্ট স্পষ্ট বার্তা দিতে চায় যে, তাদের সাম্প্রতিক ব্যবহার একেবারে অগ্রহণযোগ্য। আলোচনার মাধ্যমে পারমাণবিক উত্তেজনা নিরসনে ওবামা প্রশাসনের চেষ্টায় সর্বশেষ আঘাত হচ্ছে জারিফের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা। এর আগে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ওপরও একই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
ইরানের পরমাণু শক্তি কারখানা নিয়ে বিদেশি রাজধানীগুলোতে জটিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন জারিফ। তেহরান নিজের পরমাণু কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করে আসছে। কিন্তু ওয়াশিংটন ও তার আঞ্চলিক মিত্র ইসরাইল বলছে, ইরান গোপনে অস্ত্র বানাচ্ছে।
কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলেন, জারিফের কূটনৈতিক ভাবমর্যাদা কৃত্রিম। তার সাবলীল ইংরেজি বলা, মৃদু হাস্যকৌতুক ও যুক্তরাষ্ট্রের পড়াশোনা দিয়ে এটিকে শক্তিশালী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারের জন্য স্পর্শকাতর ও যৌক্তিক আলোচক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে তিনি প্রলেপ দিয়ে রেখেছেন। আমাদের কথা হচ্ছে- তিনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু করবেন না। কিংবা তাকে দিয়ে তা সম্ভব না।
জাভেদ জারিফকে একজন প্রপাগান্ডা মন্ত্রী হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আজ এসব বন্ধ করে দিতে চেয়েছেন।
নিষেধাজ্ঞার জবাবে ইরানের এ কূটনীতিক বলেন, আন্তর্জাতিক মঞ্চে ইরানকে নিশ্চুপ করে দিতে চেষ্টা করছে ওয়াশিংটন।
তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমি ইরানের প্রধান মুখপাত্র, এই সত্য কি বাস্তবিকভাবে এতটাই বেদনাদায়ক?
যুক্তরাষ্ট্র তার সম্পদ জব্দ করা ছাড়াও বিশ্ব আসরে তার কূটনৈতিক কার্যক্রমকে সংকুচিত করে দিয়েছে। তবে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে তিনি অব্যাহত সফর করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
কর্মকর্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বাধ্যবাধকতার প্রতি অব্যাহত সমর্থন বজায় রাখবে। মধ্য জুলাইয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার ভিসা ইস্যু করলেও জাতিসংঘের সদর দফতরের সিক্স ব্লকের মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ থাকবে।
গত বছর জারিফের আলোচনায় ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে সই হওয়া পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে আসার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসনের অধীন ওই চুক্তি হয়েছিল।
এটি থেকে বের হয়ে আসার পর ইরানের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিতে দেশটির ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তেহরানের আঞ্চলিক প্রভাবে লাগাম ধরারও প্রতিশ্রুতি দেন ট্রাম্প।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে পড়াশুনার সূত্রে জারিফ ১৭ বছর বয়স থেকে সান ফ্রানসিসকো ও ডেনভারে বসবাস করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের একজন কূটনীতিকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ইরানি রাষ্ট্রদূত ছিলেন।