বিমানের ৬০০ কোটি টাকা গচ্চা দিয়ে বিদায় নিল মিশরের ২ এয়ারক্রাফট

0
60

বিমানের প্রায় ৬০০ কোটি টাকা গচ্চার পর অবশেষে বিদায় নিল মিসর (ইজিপ্ট এয়ালাইন্স) থেকে ভাড়ায় আনা দুই ত্রুটিপূর্ণ এয়ারক্রাফট। ১৬ জুলাই প্রথম উড়োজাহাজটি মিসর পাঠানো হলেও দ্বিতীয় উড়োজাহাজটি বিদায় নিচ্ছে আজ।

উড়োজাহাজটি এখন ফিলিপাইনের একটি মেরামত শপে রয়েছে। এটি ফেরত পাঠাতে এরই মধ্যে বিমানের পরিচালক ফ্লাইট অপারেশন (ডিএফও) ক্যাপ্টেন এবিএম ইসমাইল ও ক্যাপ্টেন ইসহাকের নেতৃত্বে একটি টিম ফিলিপাইন পৌঁছেছে। আজ সকালে তারা উড়োজাহাজটি নিয়ে মিসরের উদ্দেশে রওনা হবেন।

যাওয়ার সময় বাংলাদেশের আকাশসীমা স্পর্শ করে প্রায় ৮ ঘণ্টা বিমান চালিয়ে তাদের মিসর পৌঁছানোর কথা রয়েছে। জাহাজটি তারা ইজিপ্ট এয়ারলাইন্সের কাছে পৌঁছে দিয়ে অন্য এয়ারলাইন্সের টিকিট কেটে ঢাকায় ফিরবেন। এসব তথ্য বিমান সূত্রে জানা গেছে। দুটি উড়োজাহাজই দীর্ঘদিন ফিলিপাইনে ওভারহোলিংয়ের কাজে হ্যাঙ্গারে পড়ে ছিল।

চুক্তি অনুযায়ী ভাড়া নেয়ার সময় উড়োজাহাজ দুটি যে অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল, ফেরত দেয়ার সময় সে অবস্থা করে দিতে হবে। এ কারণে প্রায় ৬ মাস উড়োজাহাজ দুটি ফিলিপাইনের একটি ওভারহোলিং শপের হ্যাঙ্গারে রাখা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিমানের ‘গলার কাঁটা’ নামে পরিচিত এ দুটি এয়ারক্রাফট নেয়ার সময় অসম চুক্তি করায় ফেরত দিতে এ বিশাল অঙ্কের টাকা গুনতে হয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হকের নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব ও বর্তমান বিমান এমডি মোকাব্বির হোসেনের অক্লান্ত চেষ্টায় অবশেষে বিমানের এ কলঙ্ক মোচন সম্ভব হয়েছে।

বিমান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ দুটি লিজ চুক্তিতে আনা হয়েছিল মিথ্যা তথ্য দিয়ে। যে কারণে লাভের চেয়ে ক্ষতি হয়েছে বেশি। মাসে ১১ কোটি টাকা হারে পাঁচ বছরে ৬৫০ কোটি টাকার ওপরে মাশুল গুনতে হয়েছে। দুটি উড়োজাহাজ লিজের নামে হাতি পুষেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এ কারণে বছরে বিমানকে গচ্চা দিতে হয়েছে প্রায় ১৩২ কোটি টাকা।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিকল্পনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের মার্চে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট এয়ারলাইন্সের কাছ থেকে দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর লিজ নেয় বিমান। এর একটি বিমানের বহরে যুক্ত হয় ওই বছরের মার্চে ও অন্যটি একই বছরের মে মাসে।

কিন্তু উড়োজাহাজ দুটি এতটাই লক্কড়ঝক্কড় ছিল ১১ মাস পার হতে না হতেই ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতেই বিকল হয়ে পড়ে একটির ইঞ্জিন। ওই উড়োজাহাজটি মেরামত করতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। অপরদিকে দেড় বছরের মাথায় নষ্ট হয় বাকি ইঞ্জিনটিও।

আবারও চড়া দামে ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। এরপর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে নষ্ট হতে থাকে উড়োজাহাজ দুটি। একপর্যায়ে নষ্ট হয়ে যায় ভাড়ায় আনা ইঞ্জিনও। এরপর ইঞ্জিনগুলো মেরামত করতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি শপে পাঠানো হয়।

কারণ ইঞ্জিনগুলো এমনই দুষ্কর মডেলের ছিল যে যুক্তরাষ্ট্রের ওই শপ ছাড়া বিশ্বের আর কোনো কারখানায় মেরামত সম্ভব ছিল না। এতে মোটা অঙ্ক হাতিয়ে নেয় ওই শপ। মেরামত করতে পাঠানোর কারণে বিমানকে উড়োজাহাজ না চালিয়ে ভাড়ার ১১ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে প্রতিমাসে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, লিজে আনা বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ দুটির কারণে বিমানের ৬৫০ কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমানের একজন পরিচালক যুগান্তরকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিমানের গলার কাঁটা হয়ে যুক্ত ছিল এ দুটি উড়োজাহাজ।

দীর্ঘদিন পরে হলেও বিমান কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, অসম চুক্তির জন্য দায়ী বিমানের পরিকল্পনা বিভাগ। তার মতে, বিমানের পরিকল্পনা বিভাগে ভালো মানের কোনো কর্মকর্তা নেই। বিদেশি বিমান সংস্থাগুলো যেভাবে চুক্তির খসড়া তৈরি করে দেয়, পরিকল্পনা বিভাগ সেটা বাস্তবায়ন করে। এখন সময় হয়েছে বিমানের পরিকল্পনা বিভাগ ঢেলে সাজানোর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here