অনিরাপদ মা-বাবা এবং সমাজ

0
124

মুসবা আলিম তিন্নি:
মানুষ নিজের স্বার্থের প্রয়োজনে এতটাই অন্ধ যে সেই স্বার্থ উদ্ধারের জন্য অমানুষের কাজ করতেও দ্বিধা করে না। সন্তান খুন হচ্ছে মা অথবা বাবার হাতে। এমনকি বাবা কিংবা মা খুন হচ্ছেন সন্তানের হাতে। এতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ছে সচেতন নাগরিক এমনকি জনসাধারণের মাঝে। সে ক্ষেত্রে মানবিক মূল্যবোধ প্রশ্নবিদ্ধ হয়। কখনো কখনো মনে হয়, মূল্যবোধের অবক্ষয় আর কত! নাকি মূল্যবোধ বলতেই আর কিছুর অস্তিত্ব থাকছে না। সামাজিক অশান্তি, পারিবারিক অশান্তি এবং ব্যক্তি পর্যায়ে হতাশা সৃষ্টিকারী একেকটি ঘটনা মানুষের মূল্যবোধ নিয়ে এমন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।
বিষয় গুলো এখন এমন,কোনো একদিন খবরের কাগজে/ফেসবুকের মাধ্যমে জেনেছিলাম যে নারায়নগঞ্জের কোনো ১ মা পরকীয়ার জেরে তার নিজ সন্তানকে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলেছে।
কিছুদিন থেকে আরেকটি খবর ভাইরাল হচ্ছে কোনো এক বাবা তার প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের সন্তানকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। পাঁচ বছরের ঘুমন্ত ছেলেকে কোলে তুলে এনে নিজের ভায়ের সাথে মিলে তার দুই কান, গলা, যৌণাঙ্গ কেটে এক বিকৃত নৃশংসতার পরিচয় দিয়েছে এরকম অসংখ্য অকল্পনীয় ঘটনা অহরহ ঘটে যাচ্ছে। বাবার হাতে কন্যা নির্যাতিত, পরিবারের হাতে অন্য সদস্যরা নির্যাতিত বা হত্যার শিকার। এর মূল কারণ হিসেবে আমি মনেকরি সামাজিক অবক্ষয়, আমাদের মানবিক ও নৈতিক শিক্ষাবোধের অভাব। আমরা সবাই চাই আমাদের সন্তানটা প্রতিষ্ঠিত হোক কিন্তু ভাল একজন সৎ, নীতিবান মানুষ হোক সেটা কখনো চাই না। ঠিক এমনটাই ঘটেছিলো বুয়েটে ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যাকারী অনিক সরকারের মা,বাবার ক্ষেত্রেও । হত্যাকারীরাও কিন্তু সকলেই বুয়েটের মেধাবী ছাত্রই ছিলো! আবরার হত্যার ঘটনার পর হত্যাকারীর মা,বাবা বলেছিলো আমাদের ছেলে খুন করতে পারেনা তাকে ফাঁসানো হয়েছে । যখন সিসি ফুটেজে সত্যটা সামনে এলো তখন তারা মুখ লুকিয়ে চুপ মেরে রইলো । আমাদের সাংবাদিকেরাও তো মহান, ক্রিমিনালের বাবা , মা বাদে ভিকটিমের মা, বাবার কান্নাকাটির পিছে লেগে থাকে। আরে বাবা ক্রিমিনালের মা,বাবার কাছে যান তাদের গিয়ে প্রশ্ন করুণ কিভাবে আপনাদের সন্তান ক্রিমিনাল হলো ? এমন কোনো আস্কারা সারা জীবন পেয়েছে কিনা ? নাকি শৈশব থেকে সন্তানের অপরাধ গুলো অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে সন্তানের অপরাধে পর্দা দিয়ে অস্কারা দিয়ে তাকে বড়ো অপরাধি বানিয়েছেন ? এগুলো আসলে মায়া বা ভালোবাসা না, সন্তানকে অন্যের জন্য ক্ষতিকর করে বানালে সেটা এক সময় ইতিহাস কলঙকিত করে । ধিক্কার সে সব মা-বাবার প্রতি ,যারা এই পবিত্র সম্পর্ক টাকে কুলষিত করে আসছে ।
আসলে জন্ম দিলে শুধুমাত্র জন্মদাতা আর গর্ভে ধারণ করলে শুধুমাত্র গর্ভধারিণী হওয়া যায় না । বাবা-মা হতে গেলে অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়। বাবা-মা হচ্ছে সন্তানের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ নিরাপদ আশ্রয়স্থল। ঐসকল কুলাংগারদের পশু-পাখিদের কাছ থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত যে বাবা-মা কাকে বলে, কিভাবে সন্তানকে আগলে রাখতে হয়।
এবারে আসি সমাজ রাষ্ট্র, পৈচাশিকতা, রাষ্ট্রীয় এবং আন্তরাষ্ট্রীয় দুঃশাসনের ব্যপারে।একটু সচেতণ হলেই দেখাযাবে-যেসব দেশে এমন অনৈতিকতা, পৈচাশিক বর্বরতা বেশী সেইসব দেশে ব্যক্তি, পারিবারিক ও রাস্ট্রীয়ভাবেই ধর্মীয় অনুশাসন নাই, রাস্ট্রীয় শাসনব্যবস্থাও অস্বচ্ছ।
বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ নামের ছেলেটা’র বাবা ঢাকা মেডিকেলের মর্গে মৃত ছেলে’র দেহের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছেন, -” আমি আওয়ামীলীগ করি, আমার পরিবারের সবাই আওয়ামীলীগ করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি আমার ছেলে হত্যা’র বিচার চাই!”বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে এই কথা শুনে আমি লজ্জিত হয়েছি। প্রতিটা বাংলাদেশির’ই এই কথা শুনে লজ্জিত হওয়া উচিত। অথচ খেয়াল করে দেখছি, অনেকে’ই বলছে, -ছেলেটার পুরো পরিবার আওয়ামীলীগ করে, অথচ ছেলেটাকে এভাবে মেরে ফেলা হলো! কি অবাক কাণ্ড! এর মানে কি? আওয়ামীলীগ না করলে, তাকে মেরে ফেলা যাবে? কিংবা আওয়ামীলীগ না করলে বিচার পাওয়া যাবে না? এক জন পিতা, যার ছেলেকে কিছুক্ষণ আগে হত্যা করা হয়েছে; সে পিতাকে তার মৃত ছেলে’র দেহে’র পাশে কেঁদে কেঁদে বলতে হচ্ছে , – “আমি আওয়ামীলীগ করি, আমার পরিবার আওয়ামীলীগ করে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই”মৃত ছেলের পাশে দাঁড়িয়ে এই পিতাকে রাজনৈতিক পরিচয় দিতে হচ্ছে। আপনাদের কি একটুও লজ্জা হচ্ছে না? সভ্যতার কোন পর্যায়ে আসলে আপনারা বাস করছেন? সভ্যতা এবং অসভ্যতা’র মাঝে একটা ফাইন লাইন আছে। সেটা বুঝতে শিখুন। নইলে এভাবে’ই চলবে!

লেখক: সাংবাদিক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here