পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনা ফাঁস, গ্রেপ্তার ৪

0
590

বাংলা খবর ডেস্ক: রাজধানীর মিরপুর থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৪। গ্রেপ্তারকৃতরা পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনা করেছিল বলে র‌্যাব জানিয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মোহাম্মদ আরিফুল করিম চৌধুরী ওরফে আদনান চৌধুরী, মেহেদী হাসান শাকিল ওরফে বাবু, আব্দুল আল মামুন ওরফে আসাদুল্লাহ হিল গালিব এবং নাজমুল হাসান।

বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক এ তথ্য জানান। মিরপুরের শাহ আলীর রাইনখোলা ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন এলাকায় বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

মোজাম্মেল হক বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের তল্লাশি করে জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন ধরনের উগ্রবাদী বই, লিফলেটসহ উগ্রবাদী ডিজিটাল কনটেন্ট, বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস সার্কিট, ডিভাইস, ব্যাটারি ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মোবাইল ফোনসেটের ফরেনসিক পরীক্ষা করে কিছু পরিকল্পনার কথা জানা গেছে। তারা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বিশেষ করে পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনার করেছিল। কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস নয়, বরং চাপাতি দিয়ে পুলিশ সদস্যদের টার্গেট করে হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। আর হামলার সময় কোনো ধরনের ইলেকট্রনিকস ডিভাইস বা ফোন ব্যবহার না করার পরিকল্পনা ছিল তাদের। দুই-তিনজন মিলে আলাদা গ্রুপে ভাগ হয়ে পেছন থেকে চাপাতি দিয়ে পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা করে পালানোর পরিকল্পনা করছিল। গত তিন মাসে এই গ্রুপের ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত আরিফুল করিমের বাড়ি চাঁদপুর। তিনি কম্পিউটার সায়েন্সে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা শেষ করে একটি ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি অনলাইনে কম্পিউটারের সামগ্রী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরবরাহের ব্যবসা করছিলেন। এক সময় তিনি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ২০১৫ সালে খিলগাঁও এলাকা থেকে তিনি গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তার হওয়ার পর ব্যাংক তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি আনসার আল ইসলামে যোগ দেন। জোরালো তৎপরতার কারণে সংগঠনের ঢাকা অঞ্চলের একাংশের শীর্ষ স্থানীয় আমির পদ পায়। ফেইসবুকে সংগঠনের অন্যতম শীর্ষ নেতা বর্তমানে কারাবন্দী মো. আব্বাস উদ্দিন ওরফে শুকুর আলীর সঙ্গে পরিচিত হয় এবং তার মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রমে আরও তৎপর হয়। পরে অনলাইনে বিভিন্ন জঙ্গিবাদী আইডি থেকে জঙ্গি সংক্রান্ত পোস্ট ডাউনলোড করে এবং বিভিন্ন জঙ্গির সঙ্গে পরিচিত হয়। প্রায় ৩ বৎসর ধরে এই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে।

গ্রেপ্তার মেহেদী হাসান শাকিলের বাড়ি নোয়াখালী। বর্তমানে প্যারা মেডিকেলে অধ্যয়নরত। তিনি আব্বাস উদ্দিন ওরফে শুকর আলীর সঙ্গে অ্যাপসের মাধ্যমে আনসার আল ইসলাম সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন। তাদের কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে দলে যোগদান করেন। প্রায় ২ বছর ধরে সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। মেসেঞ্জার ও ইমো এবং বিভিন্ন ছদ্ম নামে আইডি ব্যবহার করে অনলাইনে বিভিন্ন রকম জঙ্গি কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন।

আব্দুল আল মামুনের বাড়ি চাঁদপুরে। তিনি আলিম ২য় বর্ষের ছাত্র। জেলে থাকা আব্বাস উদ্দিনের সঙ্গে ফেইসবুক, ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে তার প্রথম পরিচয় হয়। এরপর জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন আইডির সঙ্গে পরিচিত হয় এবং জঙ্গিবাদী বিভিন্ন কার্যকলাপে আগ্রহী হয়। পরে তিনি কুমিল্লা অঞ্চলের শীর্ষস্থানীয় জঙ্গি আব্বাস উদ্দিনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে দীক্ষা নেন। বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের ভিডিও, বইপত্র, মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে সংগ্রহ করত। প্রায় ২ বছর ধরে সংগঠনের সঙ্গে জড়িত।

নাজমুল হাসানের বাড়ি মাগুরায়। একটি ডেভেলপার কোম্পানিতে চাকরি করছিলেন। অনলাইনে তিনি ছদ্মনাম ব্যবহার করে জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম চালাতেন। এবিটির শীর্ষস্থানীয় জঙ্গি গ্রেপ্তার মো. মেহেদী হাসান শাকিল ওরফে বাবু তাকে দাওয়াত দেয় এবং বিভিন্ন বই, লিফলেট ও ভিডিও সরবরাহ করেন। সংগঠনের প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন অনলাইন অ্যাপস ব্যবহারের হাতে কলমে শিক্ষা নেন। প্রায় ৩ বছর ধরে এই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। শীর্ষ জঙ্গিদের মধ্যে সে একজন। তার কাছ থেকে বিভিন্ন উগ্রবাদী ডিজিটাল কনটেন্ট পাওয়া গেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here