স্বীকৃতি

0
57

জহিরুল চৌধুরী:
গত ১১-১২ বছর ধরে অনলাইনে একটানা লিখে চলেছি। তবে লেখালেখির শুরু অনেক আগে, সেই ১৯৭৬ সালে। ঢাকার বিভিন্ন সংবাদপত্রে একটানা সাংবাদিকতা করেছি প্রায় এক যুগ। তখনও মুক্তহাতে, স্বাধীনভাবে লিখতে পারিনি।

স্বাধীনভাবে লিখতে চেয়েছিলাম বলে, রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করতে চেয়েছিলাম বলেই প্রায় কুড়ি বছর আগে পাড়ি জমিয়েছি যুক্তরাষ্ট্রে। কূসংস্কার, কূপমণ্ডুকতা, অজ্ঞানতা মানুষের অগ্রযাত্রার প্রধান শত্রু।

কোনো প্রতিকূলতা আমাকে লেখালেখি থেকে বিরত রাখতে পারেনি। লেখালেখি আমার আনন্দ। নিজের এবং পরিপার্শ্বের আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ নিয়ে লিখে দায়বদ্ধতার খানিকটা পরিশোধের চেষ্টা করেছি মাত্র।

সম্প্রতি একুশে বই মেলায় আমার তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে একসঙ্গে। বাংলাবাজারের সম্ভ্রান্ত প্রকাশনী পুথিনিলয় এগার’শ পৃষ্ঠার তিনটি বই প্রকাশ করে কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করেছে। আমার মত অজ্ঞাত, অখ্যাত কোনো ব্যক্তির লেখা বই আকারে প্রকাশের কাজ দুঃসাহসিকতার দেয়াল টপকানোর মত।

কেউ যদি আমার কাছে জানতে চায়- নিজের কাছে আমার লেখাগুলো কেমন লাগে? উত্তরে আমি বলবো- লেখাগুলো যাতে কালের করাল গ্রাসে হারিয়ে না যায়, সে ব্যবস্থা আমি করে রেখেছি। আজ থেকে সহস্র বছর পর কেউ যদি বর্তমান সময়কে খুঁজে পাবার চেস্টা করে, আমার বইগুলোকে হাতে তুলে নিতে হবে।

প্রকৃতিকে ভালবাসলে কাউকে যেমন রবীন্দ্র সঙ্গীতকে ভালোবাসতেই হবে। তেমনি সমসাময়িক বাংলাদেশ এবং বিশ্বকে খুঁজে পেতে চাইলে আমার বইগুলো পড়তে হবে। আমি প্রকৃতিকে তুলে এনেছি সামান্যই। প্রকৃতির চেয়ে বড় বিষয় আমার কাছে মানুষ। মানুষের জীবন এবং তার প্রয়োজনীয়তা।

একুশে গ্রন্থ মেলা শেষে “দিগন্তধারা” সাহিত্য পুরস্কারের জন্য নির্বাচন করেছে আমার একটি বই। সে বইটি- “আমার যত ঋণ”! এই ঋণ আমার প্রিয় বাংলাদেশ, আর দেশের মানুষের প্রতি। বাংলাদেশের আলো-হাওয়া আর প্রকৃতির ঋণ শোধ করার যোগ্যতা আমার নেই। কেবল সেই ঋণ পরিশোধ না করার বেদনা প্রকাশ করেছি।

আমার বইকে, গ্রন্থ মেলায় প্রকাশিত পাঁচ-ছ’ হাজার বইয়ের স্তুপ থেকে তুলে আনার জন্য দিগন্তধারাকে অশেষ ধন্যবাদ। এর নির্বাচক মণ্ডলীর মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক প্রমুখ।

প্রতিদিন আমি লিখি নিজের দায়বদ্ধতা আর আনন্দ লাভের জন্য, আগেই বলেছি। আরও লিখি- শ্বাসত সুন্দরের জন্য। মানুষের জন্য যা কিছু কল্যাণকর, তার জন্যই লিখি।

মানুষের জীবনে পুরস্কারের প্রয়োজন। পুরস্কার আর প্রেরণা হাত ধরাধরি করে চলে। আমি লিখে যাবো, এমনকি পুরস্কার না পেলেও। আমার সবচেয়ে বড় পুরস্কার আমার পাঠক। কোনো একটি লেখায় বলেছিলাম- একজন পাঠকও যদি আমার লেখা পড়েন, আমি লিখে যাবো।

পুথিনিলয় ছাড়াও আমার বইগুলো পাওয়া যাচ্ছে রকমারি.কম-এ। বইগুলো পাঠকের হাতে না গেলে এর প্রকাশনাও নিরর্থক হয়ে যাবে।

নিউইয়র্ক, ২৪শে মার্চ ২০২০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here