দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপোষহীন ছিলেন বঙ্গবন্ধু

0
94

বাংলা খবর ডেস্ক: দুর্নীতির বিরুদ্ধে সারা জীবন সোচ্চার ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশ থেকে দুর্নীতি উৎখাত করতে তিনি ছিলেন দৃঢ়চেতা। বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে সরব ছিলেন সব সময়। সরকারি কর্তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠিন উচ্চারণের পুরোনো অডিও ও ভিডিও রেকর্ডে এখনো বাজে।

১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে দেওয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘আজকে করাপশনের কথা বলতে হয়। এ বাংলার মাটি থেকে করাপশন উৎখাত করতে হবে। করাপশন আমার বাংলার কৃষকরা করে না। করাপশন আমার বাংলার মজদুর করে না। করাপশন করি আমরা শিক্ষিত সমাজ। যারা আজকে ওদের টাকা দিয়ে লেখাপড়া করেছি। আজ যেখানে যাবেন, করাপশন দেখবেন আমাদের রাস্তা খুঁড়তে যান করাপশন। খাদ্য কিনতে যান করাপশন। জিনিস কিনতে যান করাপশন। বিদেশ গেলে টাকার ওপর করাপশন। তারা কারা? আমরা যে ৫ শতাংশ শিক্ষিত সমাজ, আমরা হলাম দুনিয়ার সবচেয়ে করাপ্ট পিপল, আর আমরাই করি বক্তৃতা। আমরা লিখি খবরের কাগজে, আমরাই বড়াই করি।’

বঙ্গবন্ধু প্রায় প্রতিটি ভাষণেই দুনীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি করেছেন। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনেও আবেগাপ্লুত জাতির জনক বলেন, ‘আজ থেকে আমার অনুরোধ, আজ থেকে আমার আদেশ, আজ থেকে আমার হুকুম ভাই হিসেবে, নেতা হিসেবে নয়, প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, আমি তোমাদের ভাই, তোমরা আমার ভাই, এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না পায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি আমার বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণতা হবে না যদি এ দেশের মানুষ, যারা আমার যুবক শ্রেণি আছে তারা চাকরি না পায় বা কাজ না পায়। দেশের উন্নয়নের জন্য ডাক দিলেন এভাবে- যথেষ্ট কাজ পড়ে রয়েছে। আপনারা জানেন, আমি সমস্ত জনগণকে চাই, যেখানে রাস্তা ভেঙে গেছে, নিজেরা রাস্তা করতে শুরু করে দেও। আমি চাই জমিতে যাও, ধান বোনাও, কর্মচারীদের বলে দেবার চাই, একজনও ঘুষ খাবেন না, ঘুষখোরদের আমি ক্ষমা করব না।’

দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা ছিল ১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারির ভাষণেও। তিনি বলেছিলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকরী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারলে জাতির ভবিষ্যৎ তমিস্রায় ছেয়ে যাবে। দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, চোরাচালানি, মজুদদারি, কালোবাজারি ও মুনাফাখোরদের সমাজ ও রাষ্ট্রের শত্রু বলে আখ্যায়িত করে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এদের শায়েস্তা করে জাতীয় জীবনকে কলুষমুক্ত করতে না পারলে আওয়ামী লীগের দুই যুগের ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্বদানের গৌরবও ম্লান হয়ে যেতে পারে।

এর আগে ১৯৭২ সালের ৭ জুন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও বঙ্গবন্ধু কালোবাজারিদের হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, মুনাফাখোর, আড়তদার ও চোরাকারবারি সাবধান হয়ে যাও। ভবিষ্যতে সোজা পথে না এলে আমি বাধ্য হয়ে আইন পাশ করবো তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য। তিনি দরাজ কণ্ঠে বলেছিলেন, সরকারি কর্মচারী ভায়েরা আপনারা ঘুষ খাবেন না। আমার লোক আছে। আমি সব খবরই পাচ্ছি। ঘুষখোররা নয় নম্বর ধারায় চাকরি হারাবে, জেলখানায় যাবে।’

বঙ্গবন্ধুর দুর্নীতির বিরুদ্ধে সেই যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। বরং সোনার বাংলা গড়তে যুদ্ধের কৌশল ও ব্যাপকতা বেড়েছে বহুগুণ। দুর্নীতি এখন অনেকটা কাঠামোগত সমস্যা হয়ে আছে। উপরি কাঠামোতে দুর্নীতি রেখে, নিচে এর সমাধান খুঁজতে চাইলে তা কেবল রসিকতারই জন্ম দেবে। শাসন কাঠামোর উপরিভাগ যদি দুর্নীতিমুক্ত হয়, দুর্নীতি করলে যদি শাস্তি পায়, এবং দুর্নীতিকে দমন করতে যদি আন্তরিক হয় তবেই নিচ কাঠামোর দুর্নীতি এমনিতেই হাওয়ায় বিলীন হয়ে যাবে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সরকারি চাকুরেদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ার করেছেন বারবার। স্পষ্ট বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার সরকারের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’। বিন্দুমাত্র ছাড় নেই। দুর্নীতির প্রমাণ পেলেই তিনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন শক্ত হাতে। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়তে চান প্রধানমন্ত্রী। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একদিন দুর্নীতিমুক্ত হয়ে বিশ্ব দরবারে মাথা তুলে দাঁড়াবে, এমনটাই প্রত্যাশা দেশবাসীর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here