এক মাসে চার নেতা হারাল আওয়ামী লীগ

0
90

বাংলা খবর ডেস্ক:
এক মাসের মধ্যে সামনের সারির চার নেতাকে হারাল বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের মৃত্যু হয়। এর আগে মোহাম্মদ নাসিম, শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ও বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের মৃত্যু হয়।

রাজনৈতিক জীবনে তারা প্রত্যেকেই প্রভাবশালী ছিলেন এবং দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংকট উত্তরণ ও উন্নয়নে নিজেদের মেধার সর্বোচ্চ পরিচয় দিয়েছেন। এই চার নেতার মধ্যে মোহাম্মদ নাসিম, শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ও বদরউদ্দিন আহমদ কামরান করোনা পজিটিভ ছিলেন।

১৩ জুন শনিবার রাজধানীর ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, ১৪ দলের মুখপাত্র ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

৫ জুন থেকে তিনি কোমায় ছিলেন। করোনা উপসর্গ নিয়ে ১ জুন রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হন মোহাম্মদ নাসিম। পরে তার করোনা টেস্ট করা হয়। ওইদিন রাতে তার করোনা পজিটিভ আসে।

করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হলেও পরদিন মোহাম্মদ নাসিমের অবস্থার উন্নতি হয়। ৫ জুন ভোরে তিনি স্ট্রোক করেন। ওই দিনই তার অপারেশন করা হয়। পরদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। অপারেশনের পর চিকিৎসকরা তাকে ৭২ ঘণ্টা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখেন। ওই সময় পার হওয়ার পরও তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় মেডিকেল বোর্ড নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। ওই বোর্ডের তত্ত্বাবধানেই তিনি কোমায় ছিলেন। এরমধ্যে ৯ জুন তার করোনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসে।

মোহাম্মদ নাসিম স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী। ১৯৯৬ সালে স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক জীবনে ৬ বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন।

বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। তার বয়স হয়েছিলো ৭৭ বছর। তিনি নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন।

গত ২ জুন জ্বর, অ্যালার্জিসহ বার্ধক্যজনিত নানা অসুস্থতায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য সাহারা খাতুনকে। অবস্থার অবনতি হলে ১৯ জুন সকালে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। এরপর অবস্থার উন্নতি হলে ২২ জুন দুপুরে তাকে আইসিইউ থেকে এইচডিইউতে (হাইডিপেন্ডেন্সি ইউনিট) স্থানান্তর করা হয়। পরে ২৬ জুন সকালে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আবার তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়।

এরপর তার অধিকতর উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৬ জুলাই চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে থাইল্যান্ড নেয়া হয়। সেখানে বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ২৫ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

সাহারা খাতুন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া, তিনি আন্তর্জাতিক মহিলা আইনজীবী সমিতি ও আন্তর্জাতিক মহিলা জোটের সদস্য। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে একজন আইনজীবী হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন।

সাহারা খাতুন ছাত্র জীবনেই রাজনীতিতে যুক্ত হন। বাংলাদেশ সরকারের প্রথম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ছিলেন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন।

১৩ জুন রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনিও করোনা পজেটিভ ছিলেন। শেখ আবদুল্লাহ ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি টেকনোক্র্যাট কোটায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

আবদুল্লাহ কর্মজীবনের শুরুতে সুলতানশাহী কেকানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরে গোপালগঞ্জ ও ঢাকা জজকোর্টে ওকালতি পেশায় জড়িত হন। প্রথমে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের বোর্ড অব গভর্নরস’র সদস্য ও পরবর্তীকালে ওই বোর্ডের চেয়ারম্যান হন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক ছিলেন তিনি।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৫ জুন সোমবার ভোররাত তিনটায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।

৫ জুন সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে কামরানের নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়। পরদিন তীব্র জ্বর ও বমির জন্য নগরীর শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ৭ জুন তাকে ঢাকায় এনে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। ৮ জুন তাকে প্লাজমা থেরাপি দেয়া হয়। প্লাজমা থেরাপির পর কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। তবে তাকে সেখানে আইসিইউতে রেখে অক্সিজেন সাপোর্টে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় এবং তিনি মারা যান।

কামরান সিলেট পৌরসভার কনিষ্ঠ কমিশনার হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি সিলেট পৌরসভায় কমিশনার হিসাবে তিনবার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৫ সালে সিলেট পৌরসভার চেয়ারম্যান হন। ১৯৮৯ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের সিলেট নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন হলে তিনি হন ভারপ্রাপ্ত মেয়র হন।

২০০৩ সালের মার্চে মুহাম্মদ আবদুল হককে পরাজিত করে তিনি সিলেট মহানগরের মেয়র হন। ২০০৫ সালে, একটি টেনিস কোর্টের উদ্বোধন করতে গেলে, হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামী বাংলাদেশ সদস্যরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা চালায়।
২০০৭ সালে তিনি সিলেট কিচেন মার্কেট ঘুষ মামলায় গ্রেপ্তার হন। মামলায় জামিন পেলেও কামরানকে জরুরি ক্ষমতা বিধিমালার দায়ের করা অন্য মামলায় আটক করা হয়। ২০০৮ সালে কারাবন্দি অবস্থায় মেয়র নির্বাচনের প্রতিযোগিতা করার জন্য মনোনয়ন ফরম জমা দেন ও মেয়র হিসেবে দ্বিতীয়বার নির্বাচনে জয় লাভ করেন। ২০০৮ সালের ১৭ আগস্ট তাকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়। ২০০৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান। পরে, ২০১৩ ও ২০১৮ সালের মেয়র নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন তিনি।

২০০২ সালের সম্মেলনে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর ২০০৫ এবং ২০১১ সালের সম্মেলনেও পুনরায় নির্বাচিত হয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here