নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়

0
82

ঢাকায় পৌঁছেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেশব গোখলে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠকে দেশের ১০ বিশিষ্ট নাগরিক অংশ নেন। ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলাসহ হাই কমিশনের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রায় দুই ঘণ্টা স্থায়ী বৈঠকে গোখলে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, রোহিঙ্গা সংকট, চীনা বিনিয়োগসহ ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের নানা বিষয় জানার চেষ্টা করেন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে- ঝুলে থাকা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি, বর্ডার কিলিং এবং প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন লন্ডন সফরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রস্তাবিত বৈঠকের বিষয়েও বৈঠকে কথা হয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচন এবং অন্যান্য বিষয়ে বিস্তারিত শুনেছেন তিনি।
বলেছেন খুবই সামান্য। সেখানে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব যে বার্তাটি দেয়ার চেষ্টা করেছেন তা হলো- নির্বাচনটি একান্তই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের সফরকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ঢাকা সফর করেছিলেন। তার সফরটি সেই সময়কার রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আলোচিত ছিল। রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে দিল্লি বিদেশ সচিব বলেছেন, এটি কেবল দুই দেশের ইস্যু নয়। এর সঙ্গে গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িয়ে গেছে। এ নিয়ে দিল্লির উদ্বেগ রয়েছে জানিয়ে বৈঠকে তিনি বলেন, ভারত চায় সংকটের দ্রুত এবং টেকসই সমাধান। এ নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের আলোচনা হয়েছে। তারা চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যাবাসনের বিষয়েও আশাবাদী। সচিব এ-ও জানান, রাখাইনের উন্নয়নে ভারতের বিনিয়োগ রয়েছে। নাগরিক সমাজের সঙ্গে বৈঠকে তিস্তা ইস্যুতে কোনো সুখবর দিতে পারেননি বিদেশ সচিব। তার কথায় ভারতের ফেডারেল সিস্টেমে রাজ্যের প্রভাবের বিষয়টিই ওঠে এসেছে। তিস্তা ইস্যুতে সরাসরি পরামর্শ দেয়া না হলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর ওপরই জোর ছিল সচিবের কথায়। বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়টি তুলেছেন নাগরিক সমাজের এক প্রতিনিধি। জবাবে সচিব যা বলেছেন তার মর্মার্থ হলো- এখানে চীনের সঙ্গে ভারতের কোনো প্রতিযোগিতা নেই। ভবিষ্যতেও তারা কোনো প্রতিযোগিতায় যেতে চায় না।
বাংলাদেশের সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি যেন দিনে দিনে কমে আসছে। এখানকার অনেক ঘটনার কারণে এমনটি মনে হয় বলে মন্তব্য করেন নাগরিক সমাজের এক প্রতিনিধি। কিন্তু তিনি আর কথা বাড়াননি। দিল্লির বিদেশ সচিবও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। সূত্র মতে, সচিব বিজয় কেশব গোখলের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জামির, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত শমসের মবিন চৌধুরী, ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, মাহজাবিন খালেদ এমপি, অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশ গুপ্ত, বিশ্লেষক মোহাম্মদ এ আরাফাত, ফয়জুল হক রাজু, সিনিয়র সাংবাদিক শ্যামল দত্ত, মোজাম্মেল বাবু প্রমুখ।
আজ প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে বৈঠক: তাৎপর্যপূর্ণ সফরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেশব গোখলে এখন বাংলাদেশে। গতকাল বিকাল সোয়া ৪টার পরে জেট এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। এ সময় পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব গোখলের এটাই প্রথম বাংলাদেশ সফর।
সফরটি পরিচিতিমূলক হলেও তাতে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে। নির্বাচনী বছরে প্রতিবেশী দেশের জ্যেষ্ঠ ওই কূটনীতিকের সফরে বাংলাদেশের রাজনীতি ও জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নে মোদি সরকারের মনোভাবের বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে বলে ধারণা দেয়া হয়েছে। সফর প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, আগামী ১৯-২০শে এপ্রিল লন্ডনে অনুষ্ঠেয় কমনওয়েলথ সামিটের সাইড লাইনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠকের কথাবার্তা চলছে। সেই বৈঠকের প্রেক্ষাপটেও পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলের সফরটি তাৎপর্যপূর্ণ। আজ পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হবে। মূলত বিদেশ সচিবের ঢাকার বৈঠক ও সাক্ষাৎ-আলোচনার মধ্য দিয়ে লন্ডনে প্রস্তাবিত হাসিনা-মোদি বৈঠকটি চূড়ান্ত হবে। কূটনীতিকরা বলছেন, বহুল প্রত্যাশিত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির জন্য মুখিয়ে আছে বাংলাদেশ। হাসিনা-মোদি সরকারের আমলেই চুক্তিটি সম্পাদনে দিল্লির দৃঢ় অঙ্গীকার রয়েছে। যদিও এ নিয়ে এখনো পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে রাজি করাতে পারেনি ভারতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তিস্তা ইস্যুতে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলেও ভারতীয় মিডিয়ার তরফে এরইমধ্যে খবর চাউর হয়েছে চলতি বছরের শেষার্ধে অর্থাৎ বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকা সফর করবেন মোদি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ নিয়ে আগেভাগে কোনো মন্তব্য না করার নীতি নিয়েছেন। তারা সময় ও পরিস্থিতির ওপর পুরো বিষয়টি ঠেলে দিয়েছেন। ভারতীয় হাইকমিশন সূত্র জানিয়েছে, পররাষ্ট্র সচিব গোখলে আজ দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে ইনস্টিটিউট অব পলিসি, অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড গভর্নেন্সের (আইপিএজি) আয়োজিত বাংলাদেশ-ভারত সহযোগিতা এবং আগামীর পথ চলা বিষয়ে একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করবেন। ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করবেন। ওই অনুষ্ঠানে সচিব গোখলে ঢাকা-দিল্লির আগামীর সম্পর্ক, আঞ্চলিক সহযোগিতা বিশেষ করে সার্ক, বিমসটেক, বিসিআইএম ইসিসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত বলবেন বলে আভাস মিলেছে। উল্লেখ্য, সচিবের সফরে গণমাধ্যম ও নাগরিক সেবা বিষয়ে একাধিক সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। সূত্র : মানবজমিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here