বিশ্বভারতী ও নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক হবে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার শান্তি নিকেতনে পৌঁছে সাংবাদিকদের বলেন, আমি হাসিনাজিকে খুব ভালোবাসি এবং উনিও আমাকেও খুব স্নেহ করেন। হাসিনাজি আসছেন সঙ্গে ওনার বোন রেহানাও আসছেন। আরও অনেক মন্ত্রী-মিনিস্টার আসছেন। আমরা খুব খুশি যে তারা আসছেন। আমরা তাদের সবসময় খুব ভালোবাসি। আমাদের এই সম্পর্ক আমাদের এই আন্তরিকতা চিরকাল থাকবে।

শুক্রবার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে যোগ দিতে পশ্চিমবঙ্গ আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন বিশ্বভারতীতে বাংলাদেশ সরকারের অর্থে তৈরি ‘বাংলাদেশ ভবন’-এর উদ্বোধনও করবেন তিনি। একই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও।

বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দুই প্রধানমন্ত্রীর মুখোমুখি বৈঠকের কোনও কর্মসূচি ছিল না।

যদিও শান্তিনিকেতনের বাংলাদেশ ভবনে নরেন্দ্র মোদী ও শেখ হাসিনার ঘণ্টাব্যাপী একান্ত বৈঠক হবে।

সরকারি সূত্রের খবর, শুক্রবার শেখ হাসিনাকে রাজভবনে নৈশভোজে আপ্যায়িত করছেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। এতে যোগ দেবেন রাজ্যের দুই শীর্ষ মন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফর নিয়ে দুই দেশেই দৃষ্টি রয়েছে। এর মধ্যে মমতার সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক না হওয়ার সম্ভবনা নিয়েও নানা কথা বলাবলি হচ্ছিল।

শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন এবং সেখানে বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন এবং পরদিন চুরুলিয়ায় কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলন এবং ডি লিট ডিগ্রি নিতে পশ্চিমবঙ্গ সফরের সূচি রয়েছে শেখ হাসিনার।

আগামী জাতীয় নির্বাচনের মাস ছয়েক বাকি থাকতে এই সফরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে ঝুলে থাকা তিস্তা চুক্তির জট খুলে কি না, এ নিয়ে দৃষ্টি রয়েছে।

যদিও সফরের দুই দিন আগে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, এই সফরের উদ্দেশ্য তিস্তা চুক্তি নয়। তারপরও মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ এবং পরে মমতার সঙ্গে বৈঠকে কী হয় এ নিয়ে উৎসাহ আছে।

২০১১ সালে মমতার আপত্তিতেই আটকে যায় তিস্তাচুক্তি। আর দুই দেশে বর্তমান সরকারের আমলেই এই চুক্তির বিষয়ে আশ্বাস আছে মোদির।

এতদিন শনিবার আসানসোলে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে হাসিনাকে যে সাম্মানিক ডি-লিট দেওয়া হবে তাতে মমতার উপস্থিতির কথা ছিল। কিন্তু সেখানে তিনি যাচ্ছেন না। আর এই খবরে তড়িঘড়ি নতুন আমন্ত্রণপত্র ছেপেছে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আগের আমন্ত্রণপত্রে শেখ হাসিনা, রাজ্যপাল ত্রিপাঠীর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর নাম ছিল।

বুধবার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ বিষয়ে বলেন, ‘যত দূর জানি, ওখানে যাওয়ার কোনও কর্মসূচি মুখ্যমন্ত্রীর ছিল না।’

শুক্রবার ঘণ্টা চারেক শান্তিনিকেতনে থাকবেন নরেন্দ্র মোদি। তার ব্যস্ততার জন্য সমাবর্তনের সূচনা লগ্নের নানা প্রথাগত অনুষ্ঠান এবার বাতিল করার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র। ঠিক হয়েছে, বক্তৃতা শেষ করেই দুই প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ভবনে রওয়ানা হবেন।

প্রথম সফরসূচিতে সেখানে দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের জন্য ৫০ মিনিট রাখা হয়েছিল। কিন্তু দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের আলোচনার পরে সেই সময় আরও বেড়েছে।

নতুন সফরসূচি অনুযায়ী বেলা একটা থেকে দুইটা পর্যন্ত একান্ত বৈঠক করবেন মোদি ও হাসিনা, বাংলাদেশে বছর শেষে নির্বাচনের আগে যা তাৎপর্যপূর্ণ।

শান্তিনিকেতনে দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকটি হবে একান্তে। দুই দেশের কোনও কর্মকর্তাও সেখানে থাকবেন না। তবে লিখিত সফরসূচির বাইরে আলোচনার কোনও স্তরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে ডেকে নেওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না কূটনীতিকরা।

তাদের কথায়, তিস্তা থেকে রোহিঙ্গা— দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ জড়িত। সে ক্ষেত্রে ছকের বাইরে গিয়ে মোদী-হাসিনার আলোচনায় মমতাকে ডেকে নেওয়া হবে কি না, নিশ্চিত ভাবে তা বলা কঠিন।

হাসিনার জন্য তৈরি আসানসোল

আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠান শুরুর আগে আর সময় বেশি নেই। তাতে যোগ দিতে আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর সেই অনুষ্ঠান ঘিরেই কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

কর্তৃপক্ষ তো বটেই, নানা কাজে হাত লাগিয়েছেন পড়ুয়ারাও। তবে আনন্দের পাশাপাশি তাদের আক্ষেপ, কাছ থেকে দেখা হয়তো হবে না প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে। কারণ, শনিবার অনুষ্ঠানের দিন বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরই প্রবেশাধিকার নেই অনুষ্ঠানস্থলে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে প্রকাশিত অনুষ্ঠানসূচিতে জানানো হয়েছে, শনিবার ১১টা থেকে শুরু হবে অনুষ্ঠান। সেখানে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিত থাকার কথা।

বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, পেশাদারি বিশেষজ্ঞরা মঞ্চ ও অনুষ্ঠানস্থলের খুঁটিনাটি পরীক্ষা করছেন। সভাঘরটি অস্থায়ী হলেও তা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত থাকছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রবেশদ্বারেই দেখা গেল, প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে স্বাগত জানাতে বিশেষ কিছু বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছেন ছাত্র-ছাত্রীরা। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর সাজানোর কাজ, তা-ও চলছে জোরকদমে।

শিক্ষার্থীরা জানান, অনুষ্ঠানের শেষে প্রধানমন্ত্রী যে ঘরে বিশ্রাম নেবেন, শুক্রবার সেই ঘর, বারান্দা ও দেওয়ালে আলপনা আঁকা হবে। সুসজ্জিত বাহারি ফুলের টব দিয়ে সাজানো হবে তার হেঁটে যাওয়ার রাস্তা।

উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকারাও ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেককেই কাজের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সদস্য দীনেশ মণ্ডল বলেন, ‘নাওয়াখাওয়া ভুলে প্রধান অতিথিকে বরণের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানের প্রশ্ন। শহরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীসহ সকলকেই স্বাগত জানাতে আমরা তৈরি।’

এরদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্থানাভাবের কারণে ৪৪০ জন সম্মান প্রাপক ছাড়া বাছাই করা মাত্র ৩০ জন শিক্ষার্থী অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকতে পারবেন। ফলে প্রায় ১৩০০ শিক্ষার্থীর বেশির ভাগই ওই দিন ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে পারছেন না।

যদিও পড়ুয়াদের সকলকেই যাতে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়, সে জন্য উপাচার্যের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে বলে জানান ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক আদর্শ শর্মা।
সুত্র: ঢাকাটাইমস

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here