কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রার প্রথম ইউনিট চালু হতে যাচ্ছে আগামী আগস্টে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হবে আমদানি করা কয়লা। তবে অপ্রস্তুত সমুদ্রবন্দরের কারণে চাহিদা ও সক্ষমতা অনুযায়ী কয়লা আমদানিতে সংশয় দেখা দিয়েছে। নদীর নাব্যতা কম থাকার কারণে জাহাজের ধারণক্ষমতার চেয়ে কম কয়লা পরিবহন করতে হবে। এতে বেড়ে যাবে পরিবহন ব্যয়। এ ব্যয় স্বাভাবিকের চেয়ে কমপক্ষে তিন গুণ হবে বলে ধারণা বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নকারীদের। ফলে বেড়ে যাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ও।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানি করা হবে ইন্দোনেশিয়া থেকে। আগামী জুলাইয়ে প্রথম চালান আমদানির পরিকল্পনায় এরই মধ্যে কয়লা সরবরাহ চুক্তি (সিএসএ) ও কয়লা পরিবহন চুক্তি (সিটিএ) চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। কয়লার এ চালান আনতে যে জাহাজ ব্যবহার করা হবে, তার ধারণক্ষমতা ৫৫ হাজার টন। তবে এ পরিমাণ কয়লা পরিবহনে জাহাজের গতিপথে যে ধরনের নাব্যতা ও গভীরতা থাকা দরকার, পায়রায় তা নেই। ১৫-২০ হাজার টনের বেশি কয়লা বোঝাই করা জাহাজ এ পথে যাতায়াত করতে গেলে নদীর তলদেশে আটকে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।ধারণক্ষমতা অনুযায়ী কয়লা নিয়ে জাহাজ এলেও নাব্যতা সংকটের কারণে তা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে ভিড়তে পারবে না। ফলে যতদিন পর্যন্ত নদীর প্রয়োজনীয় নাব্যতা তৈরি না হবে, ততদিন জাহাজ অপ‚র্ণ রেখেই কয়লা আমদানি করতে হবে। এতে একই পরিমাণ কয়লার জন্য পরিবহন বাবদ বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে।

বিষয়টি স্বীকার করে পায়রা তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক শাহ আবদুল মাওলা বলেন, বন্দরের কারণে কয়লা পরিবহন খরচটা বেড়ে যাবে। যে খরচে আমরা ৬০ হাজার টন কয়লা আনতে পারতাম, একই পরিমাণ কয়লায় আমাদের তিন গুণ খরচ করতে হবে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যেতে পারে।

পটুয়াখালীর পায়রায় দেশের তৃতীয় এ সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ করছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ভুক্ত পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ। তিন ধাপে কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বন্দর বাস্তবায়নে কাজ করছে সংস্থাটি। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে ভ‚মি অধিগ্রহণ, রাস্তা ও স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে। সমুদ্রবন্দরের নাব্যতা তৈরিতে নদী খননের কাজ রাখা হয়েছে দ্বিতীয় ধাপে, যা এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি। তবে ২০২১ সালের মধ্যে এটি শেষ করার কথা রয়েছে। অপ্রস্তুত এ বন্দরের কারণে কয়লা আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে একমত পায়রা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষও।

এদিকে পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের কমিশনিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পর এর বিভিন্ন মেশিন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিদ্যুৎ প্রয়োজন। ওই বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য পটুয়াখালী থেকে পায়রা পর্যন্ত ১৩২/১১ কেভি ক্ষমতার একটি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। চলতি মাসের মধ্যে ওই লাইনটির নির্মাণ শেষ করে বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ দেয়ার কথা। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৩১ শতাংশ।

এ বিষয়ে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম-আল-বেরুনি বলেন, ওই লাইনটা হওয়ার কথা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য। আমরা ২১ মার্চ থেকে ৩৩ কেভি ট্রান্সফরমার বসিয়ে তাদের ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছি। জুনের মাঝামাঝি আমরা সঞ্চালন লাইনটি চালু করে দেব, যাতে তারা বড় যন্ত্রগুলো পরীক্ষা করতে পারে।

প্রসঙ্গত, পটুয়াখালী জেলার পায়রার আন্ধারমানিক নদীর তীরে এ কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)। বিসিপিসিএল বাংলাদেশের নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি) একটি যৌথ কোম্পানি। ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here