আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার দিবস আজ

0
93

যেকোনো অপরাধে যে কেউ ন্যায়বিচারের দাবি নিয়ে আদালতে যেতে পারেন। সাবেক এক বিচারপতি বলছেন, সেই বিচার আপিল পর্যন্ত শেষ হওয়ার মধ্য দিয়েই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়। আইন কর্মকর্তারা বলছেন, ন্যায়বিচার আপেক্ষিক বিষয়। সরাসরি ন্যায়বিচার হয়েছে এমন মন্তব্য করে সাধারণীকরণের সুযোগ নেই। আর সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, ন্যায়বিচার নিয়ে কথা বলার সময় সেটি সংখ্যাগরিষ্ঠের জন্য ন্যায় কিনা সেটাও ভেবে দেখার দরকার আছে।

আজ বুধবার (১৭ জুলাই) আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার দিবস। যেকোনো দেশে যেকোনো সময়ে ঘটা অপরাধে মানুষ যেন বিচার প্রক্রিয়ার আশ্রয় নিতে পারেন সেই ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পালন করা হয় দিনটি। বিশেষ করে মানবতাবিরোধী অপরাধগুলোকে যেন বিচার প্রক্রিয়ার সন্মুখীন করা যায় সেটি নিয়ে যখন আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত প্রতিষ্ঠা করা হলো তখনই এর ভাবনা শুরু। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশেষ আদালতটির সদর দফতর রয়েছে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে।

ঠিক সেই মানবতাবিরোধী অপরাধে শীর্ষ অপরাধীদের বিচার বাংলাদেশে সম্পন্ন হওয়াকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হিসেবে দেখছেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম। তিনি বলেন, ‘২০১০ সালে আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু করে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে শীর্ষ অপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করতে পেরেছি। সেই সব মাস্টারমাইন্ডদের সাজা কার্যকর করা গেছে। তারা আইনিভাবে নিজেদের লড়াই করার সম্পূর্ণ সুবিধা পেয়েছে। একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট অগ্নিসংযোগের যে অপরাধ করেছিল তারা- তাদের বিচার কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার পেয়েছে।’

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম মনে করেন, ন্যায়বিচার আপেক্ষিক বিষয়। তিনি বলেন, ‘দেশ, কাল হিসেবে ন্যায়বিচার ভিন্ন। এমনকি অনেক সময় বিচার করলেও তা কার্যকর করা যায় না। সেক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলা যায় না। ন্যায়বিচার হতে পারে পানির জন্য, শিক্ষার জন্য কিংবা অন্য যেকোনো বিষয়ে।’

প্লেটোর রিপাবলিক বইয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই বইয়ের জাস্টিস অধ্যায়টি এক্ষেত্রে পড়ে দেখা যেতে পারে যেখানে বিস্তারিত বলা আছে- কেন ন্যায়বিচার আপেক্ষিক।
সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম মনে করেন, বিচার হওয়ার মধ্য দিয়েই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পায়।

তিনি বলেন, ‘যখন আমরা বিচার চাই তখন সেই বিচার কাজ শেষ হওয়ার পরে সবগুলো স্তর শেষে বলতে পারি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।’

ন্যায়বিচার প্রসঙ্গে প্লেটোর কথাই স্মরণ করেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস এর শিক্ষক সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেন, ‘সমাজ কীভাবে তৈরি হয় সেটির প্রাচীন তত্ত্ব প্লেটোর। ন্যায়ের মাধ্যমে সমাজ তৈরি হয়। ঘরের মধ্যে, সমাজের মধ্যে ন্যায়বিচার হচ্ছে কিনা, ধনী দেশের সঙ্গে সম্পর্কে গরীবের ন্যায়বিচার হচ্ছে কিনা সে প্রশ্ন তুলতে হবে। সেই বিচারের মধ্য দিয়েই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পায়। দৃশ্যমান বিচারের বাইরেও একটা বিচার আছে। সেখানে মৌলিক ন্যায়বিচার করতে পারছেন কিনা সেটি বিবেচনায় নিতে হবে।’ তিনি মনে করেন সংখ্যাগরিষ্ঠের জন্য ন্যায়বিচার করা সম্ভব না হলে সিস্টেম বদলাতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here