হলি আর্টিজানে হামলার পর কমেছে নাশকতা

0
58

বাংলা খবর ডেস্ক: গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার পর সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে দেশে জঙ্গি হামলা কমেছে। তবে বেড়েছে রেডিক্যালাইজড (উগ্রবাদী মনোভাব) মানুষের সংখ্যা। জঙ্গি সংগঠনে নেতৃত্ব সংকট থাকায় উগ্রবাদীরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়াতে পারছে না। তবে তারা বিভিন্নভাবে তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদের ডিরেডিক্যালাইজড করতে সরকার নানা ধরনের প্রকল্প নিয়েছে বলে জানা গেছে।

পুলিশের দেওয়া তথ্য মতে, ২০১৩ সালে চারটি জঙ্গি হামলায় ৯ জন, ২০১৪ সালে পাঁচটি ঘটনায় তিন জন, ২০১৫ সালে ২৩টি ঘটনায় ২৫ জন, ২০১৬ সালে ২৫টি ঘটনায় ৪৭ জন নিহত হয়। এর মধ্যে ২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনাও রয়েছে। এ হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় ভেঙে যায় জঙ্গি নেটওয়ার্ক।

২০১৮ সালে হামলার সংখ্যা কম হলেও যেক’টি চালানো হয়, তা ছিল চাঞ্চল্যকর। ওই বছর মার্চে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। হামলাকারী ‘সেলফ রেডিক্যালাইজড’ বলে পুলিশের তদন্তে বের হয়। এছাড়া একই বছরের জুনে লেখক, প্রকাশক ও বিশাখা প্রকাশনীর মালিক শাহজাহান বাচ্চুকে গুলি করে হত্যা করে জঙ্গিরা। চলতি বছর এখন পর্যন্ত পুলিশের ওপর পাঁচটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় পুলিশ, পথচারী ও  রিকশাচালক আহত হয়েছেন। পুলিশের ওপর হামলাকারী সেলটিকে এরই মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৩-২০১৬ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত জঙ্গি হামলার সংখ্যা বেশি ছিল। হলি আর্টিজানে হামলার পর সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ পদক্ষেপ ও তৎপরতায় জঙ্গি হামলা দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। জঙ্গি মোকাবিলায় ঢাকা মহানগর পুলিশ ‘কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)’ গঠনের পর জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক দ্রুত ভেঙে দিতে সক্ষম হয়। এছাড়া র‍্যাবের অভিযানও জঙ্গি মোকাবিলায় ভূমিকা রেখেছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও ছিল তৎপর। তাই দ্রুত জঙ্গিদের হামলা কমিয়ে আনা গেছে বলে পুলিশও মনে করছে।

এ বিষয়ে অপরাধ বিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড ক্রিমিনাল জাস্টিস বিভাগের প্রধান ড. জিয়া রহমান বলেন, ‘হলি আর্টিজানের হামলার পর মানুষ উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছে। মানুষ নিজের ও দেশের স্বার্থে তা করেছে। তাছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে জঙ্গি সংগঠনের অনেক নেতৃত্ব স্থানীয় গ্রেফতার হয়েছে এবং মারা গেছে। এতে জঙ্গি সংগঠনগুলোর নেটওয়ার্ক ভেঙে যাওয়ায় তারা আর গুছিয়ে উঠতে পারেনি।’

এ বিষয়ে সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৬ সালের তুলনায় জঙ্গি হামলা ৯০ শতাংশ কমেছে। কিন্তু উগ্রবাদ বেড়েছে। জঙ্গি সংগঠনের নেতৃত্ব সংকট থাকায় এসব উগ্রবাদী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়াতে পারছে না। অনেক উগ্রবাদীর প্রতিক্রিয়া অনলাইনে দেখা যায়। তাদের অনুভূতিতে আঘাত লাগলেই প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করে। তবে তাদেরকে সন্ত্রাসবাদ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য ক্যারেশমেটিক লিডারের অভাব রয়েছে। পুলিশের তৎপরতা রয়েছে।’

উন্মুক্ত ইন্টারনেটের জন্য বাড়ছে উগ্রবাদ

ইন্টারনেটের মাধ্যমে উগ্রবাদ বেশি ছড়িয়ে পড়ছে। জঙ্গিরা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে তাদের মতবাদ এবং হিংসাত্মক বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এতে বিভিন্ন ধর্মীয় রেফারেন্স দেওয়া হচ্ছে, যাতে মানুষ দ্রুত বিশ্বাস করে। এছাড়া ছবি ও ভিডিও এডিট করে মুসলিম নির্যাতনের খবর প্রকাশ করা হয়। এসব তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ইনবক্সে ভাইরাল করা হয়। এসব বার্তা পাঠিয়ে জঙ্গিরা প্রার্থী যাচাই করে। এভাবে অনেকে উগ্রবাদী হচ্ছে নিজের অজান্তেই।

উগ্রবাদীদের ফেরাতে নেওয়া হয়েছে পদক্ষেপ

সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘উগ্রবাদীদের ফিরিয়ে আনতে আমাদের ৩২টি জেলায় কর্মসূচি চলছে। এসব কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, জনপ্রতিনিধি, পুলিশ, কারারক্ষী, সুশীল সমাজ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। তাদের শেখানো হচ্ছে, কারা কীভাবে উগ্রবাদী হচ্ছে, পথ বন্ধ করার উপায় এবং কেউ উগ্রবাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লে বুঝবে কীভাবে?’

তিনি বলেন, ‘জঙ্গি মোকাবিলায় সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছিল। জঙ্গি মোকাবিলায় সরকার আমাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। আমাদের লজিস্টিক সাপোর্টও বেড়েছে।’

আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, শিক্ষা, সচেতনতা এবং দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ জঙ্গিবাদ ও সহিংসতা রুখতে পারে।’

জঙ্গিদের জন্য পুনর্বাসন কার্যক্রম

২০০৪ ও ২০০৫ সালে যেসব জঙ্গি সাজা ভোগ করে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন তাদের পুনর্বাসনেও সরকার কাজ করছে। পুলিশ তাদের কাউন্সিলিংয়ের মধ্যে রেখেছে। মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ৪২ জনের তালিকা সংগ্রহ করেছিলাম। এদের মধ্যে ২২ জনকে নির্বাচন করেছিলাম। পরে দেখা গেল, এদের মধ্যে মাত্র আট জনের আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন আছে। তাদের আর্থিক সহযোগিতা করেছি। বাকিদের অর্থের প্রয়োজন নেই। তবে তারা মূল সমাজে মিশতে পারছিল না। মানুষ তাদের বিশ্বাস করে না। তাদের সমাজে ফিরিয়ে আনতে আমরা কাজ করছি। সব শ্রেণির মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছি।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here