করোনা প্রতিরোধে ১২ পূর্ণাঙ্গ বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রস্তুত

0
92

বাংলা খবর ডেস্ক: করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ১২টি হাসপাতালকে পূর্ণাঙ্গ বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা, জেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শয্যা প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত করোনা রোগীদের জন্য সংরক্ষিত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) প্রস্তুত আছে ১৫০টি। আরো ১৫০টি প্রক্রিয়াধীন।

তবে প্রস্তুতি আরো বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন পর্যায় থেকে। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকলেও সামনের আশঙ্কাজনক পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে প্রয়োজনে দেশি-বিদেশি কোনো সংস্থার সহায়তায় অস্থায়ী হাসপাতাল প্রস্তুত করারও প্রস্তাব দিয়েছেন অনেকে। এক্ষেত্রে অন্য দেশগুলোর মতো সবার আগে দেশে কী পরিমাণ আক্রান্ত হতে পারে তার একটি ধারণাকৃত পূর্বাভাস তৈরি করা দরকার বলে মনে করছেন তাঁরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আনুমানিক পূর্বাভাস করতে পারলে খুবই ভালো হবে। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়াটি নিয়ে মানুষের মধ্যে যে উদ্বেগ ও উত্কণ্ঠা তৈরি হয়েছে তা দূর করার জন্যও এমন প্রস্তুতি জরুরি হয়ে পড়েছে বলে অনেকের অভিমত।

তবে কেউ কেউ বলেছেন, এখন পর্যন্ত যে অবস্থা ও প্রস্তুতি আছে তা ঠিকই আছে। আবার সবারই যে আইসিইউ লাগবে তাও নয়। অনেকের শ্বাসকষ্ট থাকলেও তা শুধু ওষুধ দিয়ে বা অক্সিজেন দিয়েও সেরে যাবে। যারা খুবই জটিল অবস্থায় যাবে কেবল তাদের জন্যই হয়তো আইসিইউ অপরিহার্য হয়ে উঠবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ বলেন, বিশ্ব পরিস্থিতি অনুসারে এখন পর্যন্ত যে গতিপ্রকৃতি আছে তাতে দেখা যাচ্ছে মোট আক্রান্তের ৮০ শতাংশের হাসপাতাল প্রয়োজন নেই। কেবল ২০ শতাংশের জন্য হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। মোট আক্রান্তের মাত্র ৫ শতাংশের জন্য আইসিইউ সাপোর্ট দরকার হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে যদি একটি আনুমানিক পূর্বাভাস তৈরি করা যায়, কোনো কোনো দেশের গ্রহণযোগ্য মডেল অনুসরণ করে তবে সুফল পাওয়া যাবে।’

ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, হাসপাতালে প্রস্তুতি এখন যা আছে সেটা আনুপাতিক হারে ঠিক আছে। কিন্তু মানুষের মধ্যে উদ্বেগ আছে সামনের পরিস্থিতি নিয়ে।

যদিও রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘আনুমানিক ধারণা তৈরি করার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে। তবে আগের কিছু অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, আমাদের দেশে এ ধরনের আনুমানিক সংক্রমণ নিয়ে কোনো পরিসংখ্যান তৈরি করার ব্যাপারে অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। মানুষ বিষয়টি সহজভাবে নিতে পারে না। তাই এ ক্ষেত্রে এ ধরনের কিছু করতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।’

ওই বিশেষজ্ঞও বলেন, হাসপাতালের এখন যা প্রস্তুতি আছে সেটা খারাপ নয়। তবে সামনে যদি পরিস্থিতি আরো খারাপ হয় সে জন্য সরকার এরই মধ্যে জেনারেল হাসপাতালগুলোর রোগীদের অন্যত্র স্থানান্তর করে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, দেশে মোট সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালের সংখ্যা ৬৫৪। বিশেষায়িত, মেডিক্যাল কলেজ ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতাল ১৪০টি; যেখানে মোট শয্যাসংখ্যা ৩১ হাজার ২৬০। উপজেলা পর্যায়ে ৫১৪ হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ২০ হাজার ৫৬। বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৫৫, যেগুলোতে শয্যা আছে ৯০ হাজার ৫৮৭টি। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার প্রতি উজেলা হাসপাতালে কমপক্ষে পাঁচটি, জেলা হাসপাতালে কমপক্ষে ১০টি, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কমপক্ষে ১০০টি করে সংরক্ষিত শয্যা প্রস্তুত রাখতে বলেছে।

এ ছাড়া ঢাকায় পূর্ণাঙ্গ করোনা বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে আটটি। সরকারি পাঁচটি আর বেসরকারি তিনটি; যেখানে শয্যাসংখ্যা এক হাজার ৪০০। ঢাকার বাইরে সিলেট, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীতে একটি করে চারটি পূর্ণাঙ্গ বিশেষায়িত করোনা হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে, যেখান ৪০০ শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। ঢাকার অন্যান্য হাসপাতালের প্রতিটিতেই বিভিন্ন হারে বিশেষ করোনা শয্যা প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আরো কিছু হাসপাতাল ও আইসিইউ প্রস্তুত করার প্রক্রিয়ায় রয়েছি।’ তিনি জানান, দেশে সব হাসপাতাল মিলিয়ে মোট আইসিইউ শয্যা আছে সরকারি ৫২০ ও বেসরকারি ৭৩৭টি। ঢাকায় মোট ৯১৬টি ও ঢাকার বাইরে ৩৪১টি। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত করোনা রোগীদের জন্য সংরক্ষিত আইসিইউ প্রস্তুত আছে ১৫০টি। আরো ১৫০টি প্রক্রিয়াধীন।

ডা. আমিনুল জানান, ঢাকায় এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালের মধ্যে প্রস্তুত আছে ২০০ শয্যার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, ৫০০ শয্যার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হাসপাতাল, ২৫০ শয্যার শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলজি ইনস্টিটিউট হাসপাতাল, ২০০ শয্যার মিরপুর লালকুটি হাসপাতাল ও ১৫০ শয্যার মহানগর হাসপাতাল। বেসরকারি তিনটি প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব হাসপাতাল করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবহারের জন্য সরকারকে হস্তান্তর করেছে। এর মধ্যে রিজেন্ট গ্রুপের দুটি (মোট ১০০ শয্যা ও তিনটি আইসিইউ শয্যাসহ) এবং সাজিদা ফাউন্ডেশনের একটি (৫০ শয্যা ও পাঁচটি আইসিইউ শয্যাসহ)।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here