বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করলে রাস্তাতেই ঈদ: ডিএমপি কমিশনার

0
121
ঢাকা মেট্রোপেলিটন পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলাম - ছবি : সংগৃহীত

বাংলা খবর ডেস্ক:
ঈদকে সামনে রেখে লকডাউন ভঙ্গ করে কেউ পায়ে হেঁটেও গ্রামের বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে ঈদ পর্যন্ত রাস্তাতেই রাখা হবে এবং কোথাও যেতে দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপেলিটন পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলাম। বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইর এলাকায় কেন্দ্রীয় ইদগাহ ময়দানে জেলা পুলিশ আয়োজিত দু:স্থদের ঈদ সামগ্রী বিতরণে এসে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।

ডিএমপি কমিশনার দেশব্যাপী করোনার ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করে এবারের ঈদের আনন্দ থেকে বিরত থাকতে সবার প্রতি আহবান জানান। নিজ নিজ জেলায় অবস্থানসহ ঝুঁকি নিয়ে জেলার বাইরে বহির্গমনের চেষ্টা না করতেও অনুরোধ করেন তিনি।

ডিএমপি কমিশনার জানান, ঢাকা এবং আশপাশের জেলাগুলো থেকে কাউকে অন্য জেলায় যেতে দেয়া হবে না। পাশাপাশি বাইরের কোন জেলা থেকেও কাউকে ঢাকায় প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। এরই মধ্যে সব ধরণের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, পুলিশ জেনে শুনে কাউকে মৃত্যুর মুখে পড়তে দেবে না। করোনা ভাইরাস সংক্রমনরোধে দেশ ও জাতির স্বার্থে সরকারের নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে ঈদের অজুহাতে কেউ রাস্তায় বের হলে তাকে আটকে দেয়া হবে এবং ঈদ পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করতে হবে। ডিএমপি কমিশনার বলেন, কারো কোন অজুহাতকে পুলিশ প্রশ্রয় দেবে না। এবারের ঈদ উপলক্ষ্যে পুলিশ দেশের সড়ক মহাসড়কগুলোতে কঠোর ভূমিকা পালন করবে এবং কাউকে ছাড় দিবে না ।

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলমের সভাপতিত্বে ঈদ সামগ্রী বিতরণ কর্মসূচীতে অতিথি হিসেব আরো উপস্থিত ছিলেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট প্রধান মো: মনিরুল ইসলাম, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমানসহ পুলিশ বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তারা।

ওদিকে গতকাল যাত্রী বোঝাই ফেরি দৌলতদিয়া ঘাটে ভিড়তে দেয়নি পুলিশ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি ঠেকাতে গত কয়েক দিন ধরে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে ফেরি চলাচল সীমিত করেছে ঘাট কর্তৃপক্ষ। শুধু মাত্র রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক পারাপারের কথা থাকলেও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বুধবার দুপুরের দিকে কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্সসহ ঈদে ঘরমুখো সহস্রাধিক যাত্রী নিয়ে ছোট ঢাকা নামের ফেরি পাটুরিয়া ঘাট থেকে দৌলতদিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে দেয় বিআইডব্লউটিসির ঘাট কর্তৃপক্ষ।

এ সময় দৌলতদিয়া প্রান্তে ফেরি ভিড়ার আগেই পুনরায় পাটুরিয়া ঘাটের দিকে যাত্রীসহ ফেরি ফিরিয়ে দেয় রাজবাড়ীর পুলিশ প্রশাসন। পরে বিকেলে মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশের নেতুত্বে এসকল যাত্রীদের কয়েকটি যাত্রীবাহী বাস ভাড়া করে পাটুরিয়া ঘাট থেকে ঢাকার দিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সমন্বয় না করে একক সিদ্ধান্তে ফেরি ছাড়ায় অনেকেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে। এ সময় ফেরিতে থাকা বেশ কয়েকজন যাত্রী উত্তেজিত হয়ে ফেরির গ্লাস ভাঙচুর করেন।

জানা গেছে, সম্প্রতি করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে ঈদের ছুটিতে কেউ বাড়ি ফিরতে না পারে তার জন্য নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। একারণে গত দুইদিন ধরে জেলা পুলিশ প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে শুধু মাত্র রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স ও প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রীসহ পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক পারের সিদ্ধান্ত নেয় ঘাট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বুধবার দুপুরে কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্সসহ সহস্রাধিক যাত্রী নিয়ে পাটুরিয়া ঘাট থেকে কে-টাইপের ঢাকা নামের ফেরি ছেড়ে দেয়। এ সময় দৌলদদিয়া প্রান্তে ফেরি ভিড়ার আগেই রাজবাড়ীর পুলিশ প্রশাসন পুনরায় যাত্রী বোঝাই ফেরিটি পাটুরিয়া ঘাটের দিকে ফিরিয়ে দেয়। এতে ফেরির যাত্রীরা উত্তেজিত হয়ে যান। পরে মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম খবর পেয়ে ঘাটে এসে কয়েকটি গাড়ি ভাড়া করে যাত্রীদের ঢাকার দিকে পাঠিয়ে দেন। স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয়হীনতা না করে ঘাট কর্তৃপক্ষের এমন হঠকারিতা সিদ্ধান্তের জন্য উপস্থিত সবাই বিস্মিত হন।

ফেরিতে থাকা কয়েকজন যাত্রী ক্ষোভের সাথে জানান, আমাদেরকে যদি ঘুরিয়েই দেওয়া হবে তাহলে ফেরিতে উঠালো কেন। আবার আমাদের কাছ থেকে নিধারিত ভাড়া থেকে বেশি ভাড়া নিয়ে টিটিক কেন দিল। এখন এরকম দুর্য়োগপূর্ণ আবহাওয়ার ভেতর আমাদের ফিরে যেতে হবে। ঢাকার বাহিরে যাবার নিষেধাজ্ঞার থাকার পর কেন আসলেন জানতে চাইলে তারা আরো বলেন, অফিস নাই। সাথে থাকা টাকা পয়সা ফুড়িয়ে গেছে এ কারণে ছুটিতে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি।

মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম জানান, গত দুই দিন আগে সিদ্ধান্ত হয়েছে শুধু মাত্র জরুরি পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক ও রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স পার করা হবে। কিন্তু আজকের যাত্রী পারের বিষয়টি ঘাট কর্তৃপক্ষ পুলিশকে অবগত করেনি। আমরা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ঢাকা-আরিচা মহসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়েছি। যাতে করে কোনো প্রাইভেটকার বা যাত্রী ঘাটের দিকে না আসতে পারে। এর মধ্যে কিছু লোকজন আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে ঘাটে এসে পৌঁছলে গত দুই দিনে ৫/৬টি গাড়ি করে তাদের পুনরায় ঢাকার দিকে ফিরিয়ে দিয়েছি। এ ছাড়া আরিচা-কাজীর হাট রুটে অবধ্য নৌকা দিয়ে যাত্রী পারের অপরাধে ১০টি ট্রলার ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বিইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ডিজিএম মো. জিল্লুর রহমান জানান, ফেরিতে কয়েটি অ্যাম্বুলেন্স পার করা হচ্ছিল। এ সময় শত শত যাত্রী হুমড়ি খেয়ে ফেরিতে উঠে পরে। এ কারণে তাদের আটকানো সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া বিষয়টি মানবিক উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ওই সময় আমার কিছু করার ছিল না। আমি যাত্রীদের ফেরি থেকে নামানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু তারা নামেনি। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে অবগত করেছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ থাকেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here