বিশ্বের মানুষকে শাস্তি দেওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল

0
74
ছবি: বাসস

বাংলা খবর ডেস্ক:
রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বব্যাপী মানুষ কষ্ট পাচ্ছে উল্লেখ করে একে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, এক দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে বিশ্বের মানুষকে শাস্তি দেওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। তাই এখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা মনে হয় বাঞ্ছনীয়। আমি মনে করি সবাই সেটাই চাইবে। তিনি আরও বলেন, করোনা মহামারী থেকে কেবল আমরা একটু উদ্ধার হচ্ছিলাম। তখনই এই যুদ্ধ আর নিষোধাজ্ঞা আরোপ সত্যিই আমাদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক অনুষ্ঠানে গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

করোনা ভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে সরবরাহ চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সারা বিশ্বের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। নিষেধাজ্ঞার প্রভাব আরোপকারী দেশের ওপরও পড়ে জানিয়ে তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কোনো দেশ বা জাতিকে কখনো নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। সেটা নিশ্চয়ই এখন দেখতে পাচ্ছেন। কাজেই এই নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়ে পণ্য পরিবহন সহজ করা একান্ত জরুরি। যুদ্ধ আপনারা করতে থাকেন, কিন্তু পণ্য পরিবহন, আমদানি-রপ্তানি যাতে সহজভাবে হয় আর সাধারণ মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

তিনি বলেন, খাদ্য মানুষের সবচেয়ে বড় চাহিদা। সেখানে অনেক উন্নত দেশও সমস্যায় পড়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি উৎপাদন বাড়ানোর। কিন্তু উৎপাদন করতে গেলে সার, ডিজেল ও বিভিন্ন উপকরণ প্রয়োজন, সেটা আমরা পাচ্ছি না। এভাবে মানুষকে কষ্ট দেওয়ার কী অর্থ থাকতে পারে? একদিকে বলতে গেলে এটাও তো মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। মানুষের যে অধিকার তা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা ঠিক নয়।

রাশিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে এবং পণ্যসামগ্রী প্রাপ্তির ক্ষেত্রও সংকুচিত হয়ে পড়ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রভাব শুধু বাংলাদেশে নয়। আমেরিকা, ইউরোপ, ইংল্যান্ড থেকে শুরু করে সারা বিশ্বই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উন্নত দেশগুলোকে বিশেষভাবে বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত। আমেরিকা যে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে তাতে তাদের দেশের লোকও কষ্ট পাচ্ছে। এই নিষেধাজ্ঞা যাদের বিরুদ্ধে, তাতে তারা কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে- প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, এর চেয়ে সব দেশের সাধারণ মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উন্নত, উন্নয়নশীল, নিম্নআয়ের সব দেশের মানুষই কষ্ট পাচ্ছে।

বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা আমাদের জন্য বড় বোঝা। করোনা ভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সব দেশই জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। সাড়ে ১৬ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশের জন্য অতিরিক্ত ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বোঝা বহন করা যে কতটা কঠিন, তা সবার উপলব্ধি করা উচিত।

অর্থনৈতিক কূটনীতিকে এখন গুরুত্ব দিতে হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীটা এখন একটা গ্লোবাল ভিলেজ এবং একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের সেভাবেই কাজ করতে হবে। সবার সঙ্গে মিলেই আমরা কাজ করব, যেন মানুষের উন্নতি হয়। এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তি, ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি ও ছিটমহল বিনিময় এবং বিশাল সমুদ্রসীমায় অধিকার অর্জনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন বাঙালি জাতির আত্মমর্যাদা ও সক্ষমতার প্রতীক পদ্মা সেতুর কথাও।

এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ‘বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক উৎকর্ষ পদক’ প্রদান ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৮তলা ভবন উদ্বোধন করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গত বছর এ পদক প্রবর্তন করা হয়। এ বছর এই পদকের জন্য পোল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি মনোনীত হন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কয়েক হাজার বাংলাদেশি ইউক্রেন ছেড়ে পোল্যান্ড ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে আশ্রয় নেওয়ার প্রেক্ষাপটে সুলতানা লায়লা অসাধারণ ভূমিকা রাখেন। ইতো নাওকি ঢাকা-টোকিও সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিজয়ীদের পদক প্রদান করেন। আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। পদক বিজয়ীরাও ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুভূতি ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ‘বিশ্বব্যাপী বঙ্গবন্ধু কর্নার’ নামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন এবং বিদেশে বাংলাদেশের সব মিশনের জন্য অভিন্ন ওয়েবসাইট আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here