মনির হোসেন
আকাশপথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমানো বিদেশীদের অবৈধভাবে কোম্পানিতে কাজ দেয়ার অভিযোগে পৌনে দুইশতাধিক মালিককে জেলে পাঠিয়েছে দেশটির ইমিগ্রেশন পুলিশ। এই অভিযোগে কোনো কোনো মালিককে বিপুল জরিমানা গুনতে হয়েছে। তারপরও বাংলাদেশ থেকে অবৈধপথে ট্যুরিস্ট নামধারী ‘গলাকাটা’ লোকজন আসা কমছে না। অবৈধ লোক আসার কারণে বাংলাদেশীরা এখানে ইমেজ সঙ্কটে পড়ছে।
মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো: শহীদুল ইসলামের সাথে গত সপ্তাহে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্র্রতিবেদককে আক্ষেপ সহকারে এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, অবৈধ লোক আসার কারণে আমাদের অবস্থা এখন সিরিয়াস খারাপ। বাংলাদেশ সম্পর্কে আমরা দিন দিন চেষ্টা করছি, কিভাবে ইমেজ বাড়ানো যায়। ইমেজ বাড়ছেও। কিন্তু অবৈধভাবে লোক আসতে থাকায় সেই ইমেজ কিছুটা আবার ক্ষুণœ হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মালয়েশিয়া হাইকমিশনের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, এখন মালয়েশিয়ার আইন প্রয়োগাকারী সংস্থার সদস্যরা বিশেষ করে ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারা কঠোর অবস্থানে আছেন। তারা প্রতিনিয়ত অবৈধ লোক গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছেন। অভিযান পরিচালনার সময় তারা যে কোম্পানি বা অন্যত্র অবৈধ লোক হিসেবে যাদের পাচ্ছেন তাদের আটক করছে। পাশাপাশি অবৈধ লোক রাখার কারণে কোম্পানির মালিককেও তারা গ্রেফতার করছে। আমরা যতদূর জানতে পেরেছি, এখন পর্যন্ত অবৈধ লোক কাজে রাখা ও এক কোম্পানির লোককে অন্য কোম্পানিতে কাজ করার অপরাধে ১৭৯ জন মালিককে গ্রেফতার করে ইমিগ্রেশন পুলিশ জেলে পাঠিয়েছে। জরিমানা করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৭ সালে বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার পর হাজার হাজার শ্রমিক দেশটিতে গিয়ে বিপদে পড়েন। তাদের বেশির ভাগ চাকরি না পেয়ে, খেয়ে না খেয়ে একপর্যায়ে জেল খেটে খালি হাতে দেশে ফিরে আসেন। তাদের জন্য হাইকমিশন থেকে খোলা হয় শেল্টার হোম। একপর্যায়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের এসব তথ্য প্রকাশ হওয়ায় দেশটির সরকার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে। উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে দেশটির সরকার ৪৯ হাজার ভিসা থাকার পরও বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া বন্ধের ঘোষণা দেয়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর জি টু জি ফর্মুলায় (সরকারিভাবে) শ্রমিক প্রেরণ শুরু হলেও মাত্র ১১ হাজার শ্রমিক যাওয়ার পর সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দুই দেশের শীর্ষপর্যায়ে বৈঠকের পর ২০১৭ সালের ১০ মার্চ জি টু জি প্লাস পদ্ধতিতে ৯৮ শ্রমিক নিয়ে জনশক্তি রপ্তানির নতুন বাজার শুরু হয়। ইতোমধ্যে সোয়া লাখ শ্রমিক দেশটিতে পাড়ি জমিয়েছে। আরো ৫০-৬০ হাজার শ্রমিকের নামে এপ্রুভাল বের হয়েছে। তারাও যাবার অপেক্ষায় রয়েছে। তবে এসব শ্রমিকের অভিবাসন ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সর্বত্র।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের সার্বিক প্রসঙ্গে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এ প্রতিবেদককে বলেন, মালয়েশিয়ায় এখন প্রচুর শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে। নতুন পদ্ধতিতে লোক আসা শুরুর পর ৭ মাসেই পৌনে দুই লাখ শ্রমিকের নামে চাহিদাপত্র বের হয়েছে। আমরা আশা করছি প্রতি বছর গড়ে তিন লাখ শ্রমিক অনায়াসে এ দেশে আসতে পারবে। সেই হিসাবে পাঁচ বছরে ১৫ লাখ শ্রমিক মালয়েশিয়ায় চলে আসবে।
আকাশপথে অবৈধ লোক আসার বিষয়টি শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো অবশ্যই হুমকি। তবে এটি ঢাকার বিষয়। মালয়েশিয়ার এয়ারপোর্টে বাংলাদেশীদের হয়রানি হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে আমরা মালয়েশিয়ার এয়ারপোর্টও ঠিক করে ফেলব। এত দিন ম্যানপাওয়ার নিয়ে ঝামেলায় ছিলাম। এখন ফ্রি। আমি বলছি, সেই দিন বেশি দূর নয়, বাঙালিদের রিসিভ করার জন্য এয়ারপোর্টে ওরা ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেÑ সেই অবস্থানটা আমরা তৈরি করে ফেলব।
এর আগে মালয়েশিয়ার শিপাং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনৈক কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, আগে মালয়েশিয়া এয়ারপোর্টে বাংলাদেশীরা অ্যারাইভ্যালের গেটের সামনে এলেই ট্যাক্সিক্যাবওয়ালা নামধারীরা ভাড়ার কথা বলে গাড়িতে তুলতো। পরে মাঝপথে ডলার, রিংগিটসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে রাস্তায় ফেলে যেত। ছিনতাই, কিডন্যাপের এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের জানানোর পর এখন পুলিশ, সিআইডি প্রতিনিয়ত বিমানবন্দরে নজরদারি করছে। এর পর থেকেই পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে। এখন কিডন্যাপার চক্রের সংখ্যা অনেক কমেছে। তারপরও ঢাকা থেকে যেসব ফ্লাইট রাতে এসে নামছে সেই ফ্লাইটের যাত্রীরা ভয়ে ভোর ৬টার আগ পর্যন্ত বিমানবন্দরে অবস্থান করছে। তবে যাদের প্রয়োজন তারা তার আগেই বিমানবন্দর ত্যাগ করছেন।