রোকেয়া ও তার ছেলেকে অচেতন করে হত্যা করে তানিয়া-মামুন দম্পতি। স্বামী-স্ত্রী মিলে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে তাদের। তবে হত্যার পরিকল্পনায় ছিল রোকেয়ার পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলা। ভাগ্যবশত; বেঁচে যায় শিশু রাইসা।
০৯ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টার দিকে মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হরিদাস কুমারের আদালতে নিজেদের জড়িয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় জোড়া খুনের মামলার গ্রেফতারকৃত দম্পতি।
আদালতে তারা জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী শুক্রবার (৩০ মার্চ) বিকেলে ঝড়ের সময় তার স্বামী মামুনকে নিয়ে রোকেয়ার বাসায় যায় তানিয়া। রাতের খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে। রাত আনুমানিক ২টার দিকে মামুন ছুরা বসায় রোকেয়ার গলায়। মৃত্যু নিশ্চিত করতে রোকেয়ার শরীরে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। এরপর তারা রোকেয়ার ছেলে রোকনকে ছুরিকাঘাত করে।
সিলেট কোতোয়ালি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গৌসুল হোসেন তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পিবিআই থেকে আসামি বুঝে পাওয়ার পর রাতেই ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণের জন্য আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তারা দীর্ঘক্ষণ জবানবন্দি দেয়।
স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বোন হিসেবে নিহত রোকেয়া বেগমের বাসায় আশ্রিত ছিল তানিয়া। রোকেয়া তাকে নিষিদ্ধ পথে নামান। অনৈতিক কাজে বাধ্য করানোয় আক্রোশ থেকে খুন করে তারা। জীবিত উদ্ধার হওয়া রোকেয়া বেগমের পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে রাইসাকেও তারা হত্যার উদ্দেশে ঘুমের ওষুধ খাওয়ায় এবং গলা চেপে ধরে। রাইসাও মারা গেছে এমন ধারণায় তারা রাতেই এই বাসা ত্যাগ করে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছোড়া রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়।
এই দম্পতির জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ আরো জানায়, রোকেয়ার ইয়াবা ব্যবসা ও অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি জবানবন্দিতে তুলে ধরা ছাড়াও বিশদ বর্ণনা দেয় তারা। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে বিচারক তাদের কারাগারে প্রেরণের জন্য নির্দেশ দেন।
গত ১ এপ্রিল নগরের খারপাড়ার ‘মিতালী ১৫/জে’ নম্বর বাসা থেকে রোকেয়া বগেম (৪০) ও তার ছেলে রবিউল ইসলাম রোকনের (১৬) মরদেহ এবং নিহত নারীর শিশুকন্যা রাইসাকে (৫) রক্তাক্ত অবস্থায় জীবিত উদ্ধার করা হয়। নিহতের স্বামী নগরের বারুতখানায় উত্তরণ ৫০ নং বাসায় দ্বিতীয় স্ত্রী পান্না বেগম নিয়ে থাকেন।
২ এপ্রিল নিহতদের ময়না তদন্তে উঠে আসে শরীরে ১০৮টি ধারালো অস্ত্রের কোপ। এরমধ্যে রোকেয়ার শরীরে ৭৬টি ও রোকনের দেহে ৩২টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন মিলে।
পুলিশের ধারণা, পেশাদার খুনিরা ঠান্ডা মাথায় খুন করেছে মা ছেলেকে। একাধিক খুনি অনেক সময় নিয়ে তাদের খুন করেছে। ঘটনার দিন রাতেই দুই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রোকেয়ার ভাই ব্যবসায়ী জাকির হোসেন অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ৩ এপ্রিল রাতে এ মামলায় নাজমুল নামে এক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের পর ৪ এপ্রিল ৭ দিনের রিমাণ্ডে নিয়েছে পুলিশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here