হামলা, গ্রেপ্তার এবং গুম আতঙ্কে আছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা। এই আন্দোলনের তিন যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান, নুরুল হক ও ফারুক হাসানকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের পর ঢাকা মেডিকেলের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি। পরে অবশ্য তাঁদের ছেড়ে দেয়া হয়।

ওই তিনজনের একজন রাশেদ খান বলেন, আমাদের চোখ বেঁধে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় গালাগাল করা হয়। ডিবি অফিসে নিয়ে আমাদের ফ্লোরে বসিয়ে রাখা হয়। তখন আমাদের এক বন্ধু নুরুল অসুস্থ হয়ে পড়লেও তার চোখ খোলা হয়নি।

ডিবি অফিসে আমাকে বলা হয়, তোরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিস। তোরা কোনোদিন সরকারি চাকরি পাবি না। একই সময়ে ঝিনাইদহে আমাদের গ্রামের বাড়ি থেকে আমার বাবাকেও থানায় নিয়ে যাওয়া হয়৷ তাঁকে বলা হয়, তিনি জামায়াতের সঙ্গে জড়িত। আমার বাবা কৃষক। আমি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। কষ্ট করে এ পর্যন্ত এসেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ-তে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু এখন যে পরিমাণ হুমকির মুখে আছি, তাতে শেষ করতে পারব কিনা জানি না। আটকের পর ছাড়া পেয়ে হুমকির মুখে হল ছেড়ে দিয়ে মিরপুরে এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেছি।

রাশেদ খান আরো বলেন, আমি এখন হুমকির মুখে আছি৷ আমাদের ওপর হামলা হতে পারে, আমরা গ্রেপ্তার হতে পারি, আমাদের গুম করে দেয়া হতে পারে। এবং এই সুযোগটা কিন্তু যারা ষড়যন্ত্রকারী আছে, বিরোধীপক্ষ বলেন, জঙ্গিগোষ্ঠী বলেন, তারাও কিন্তু সুযোগ নিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দিতে পারে।

তিনি বলেন, এখন আমাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ তোলা হচ্ছে। এর একটাই কারণ, সামনেই ছাত্রলীগের যে কাউন্সিল, সেই কাউন্সিল যাতে না হতে পারে, দেশে একটা সহিংসতা বাধে।

তিনি যোগ করেন বলেন, আমাদের তুলে নেয়ার সময় অনেকেই দেখেছেন। সাংবাদিকরা দেখেছেন। এই খবর সংবাদ মাধ্যমে আসায় আমাদের ছেড়ে দেয়া হয়।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, আমরা মামলা তুলে নেয়ার আল্টিমেটাম দিয়েছি। যদি তুলে না নেয়া হয়, তাহলে আমরা নতুন কী কর্মসূচি দেবো সে ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি। কিন্তু এরইমধ্যে আমাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থক ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের তিন জনকে তুলে নেয়া হয়েছে ভয় দেখানোর জন্য। আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য। একটি সেটেলড ইস্যুকে নিয়ে নতুন আরেকটি পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে। যারা এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছে, তারা কেউ রাজনৈতিকভাবে অংশ নেয়নি। যার যার রাজনৈতিক বিশ্বাস থাকতে পারে। কিন্তু এখানে সবাই কোটা সংস্কারের জন্য অংশ নিয়েছে। এখন এটাকে একটা রাজনৈতিক কালার দেয়ার চেষ্টা চলছে।

হাসান আল মামুন বলেন, আমরা কখনোই কোটা বাতিল চাইনি। আমরা কোটা সংস্কার চেয়েছি। তারপরও প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আমরা তা মেনে নিয়েছি। আমরা আমাদের আন্দোলন স্থগিত করেছি।

এদিকে ২৪ এপ্রিল শাহবাগে রাজাকার ও স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধেও মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ ডাকা হয়েছে। নৌমন্ত্রী শাহজাহান খানসহ সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী এই সমাবেশের দায়িত্বে আছেন। এর আগে তাঁরা প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করে রাজাকার ও স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা করে তাদের রাষ্ট্রীর সুযোগ-সুবিধা বাতিলের দাবি জানানো হবে। জানা গেছে, শাহবাগের সমাবেশ থেকে স্বাধীনতাবিরোধীদের সন্তানদের সরকারি চাকরি থেকে বাদ এবং রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা বাতিলেরও দাবি জানানো হতে পারে। একইসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটার দাবিও তুলতে পারেন তাঁরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here