জাতিসংঘে এসে কী দেখলেন তাঁরা ?

0
1125

তোফাজ্জল লিটন, নিউইয়র্ক:
জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৭সেপ্টেম্বর বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে তাঁর সঙ্গে এই সফরে এসেছিলেন দেশের বরেণ্য জন, তৃনমূলের মানুষ, ব্যবসাহী এবং সাংবাদিকরা। আগত সাংবাদিকরা কথা বলেছেন নিউইয়র্কের বাঙালি এবং অন্যান্য দেশের সাংবাদিকদের সঙ্গেও। তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে সাজানো হয়েছে এই লেখাটি। এই প্রতিবেদক কথা বলেন সাংবাদিক ড.অখিল পোদ্দার, সানাউল হক, শাহ আলী জয়, কাজী সাহেদ এবং রুহুল আমিন রাসেল’র সঙ্গে।


ড.অখিল পোদ্দার

একুশে টিভির হেড অব ইনপুট ড.অখিল পোদ্দার চারবার এসেছেন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন কাভার করতে। তিনি বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন সারা বিশ্বের সাংবাদিকদের জন্য অনেকটা তীর্থক্ষেত্র। এখানে যেমন বিশ্বনেতারা একত্রিত হন তেমনী বিশ্বেও সব মিডিয়ার গুণি সংবাদিকরা এখানে জড়ো হন। তাদের সঙ্গে পারস্পরিক যোগাযোগ হয় , জানা-শোনার আদান প্রদান হয় যা আমার অনেক ভালো লাগে। বাংলাদেশ সম্পর্কে অন্য দেশের সাংবাদিকদের তেমন ইতিবাচক মেনোভাব দেখলাম না । তবে বাংলাদেশ যে বেশ কয়েকটি দিক দিয়ে এগিয়ে চলছে তা তাঁরাও জানে। প্রধানমন্ত্রী আগমন উপলক্ষে বাঙালিদের মধ্যে ব্যপক সারা পরে। আওয়ামী লীগ যেমন কর্মসূচী দেয় তেমন তা প্রতিহত করতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবদী দল (বিএনপি)ও মাঠে থাকে। এটা আমাদেও একটি রাজননৈতিক সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি তাদের জীবন এখানে অনেক পরিশ্রমের। এই কঠিন জীবনে বিনোদন নিয়ে আসতে এখানে অনককেই দেখলাম আষাঢ়ে গল্প করেন। আমরা এই গল্প শুনতেও ভালো লাগে। বিশ্বেও যত প্রবাসী আছেন তাদের পয়সায় দেশ আজ অনেকটা উন্নত। অথচ বিমান বন্দরে তাদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই । আমি তো মনে করি শুধু প্রবাসীদেও জন্য আলাদা ভিআইপি গেট থাকা প্রযোজন।


সানাউল হক

কেউ এই সফরে এসে আক্ষরিক অর্থেই দেশেল মানুষের জন্য কিছু করতে উদ্যমী হন। তেমনী ডেইলী নিউ এজ এর প্রধান ফটো সাংবাদিক সানাউল হক। তিনি বলেন, আমি এর আগেও জাতিসংঘ কাভার করতে এসেছি তবে এবার আমার অন্য একটা উদ্দেশ্যও ছিলো। আমি রোহিঙ্গাদের অসহায় মানবতার জীবনের ছবি তোলে এনেছিলাম দেশ থেকে। তাদের ছবি দিয়ে একটি প্রদর্শনী করেছি ডাইভারসিটি প্লাজায়। মায়নমার যেনো তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় এই গণসচেতনতা তৈরী করাই ছিলো আমার এই প্রদর্শনীর লক্ষ্য। নিউইয়র্কে বিশ্বের নানান দেশের অভিবাসিরা বসবাস করে। আমি তাদের থেকে বেশ সরা পেয়েছি। এই কাজ করতে গিয়ে দেখেছি প্রবাসের বাঙালিরা দেশে এবং দেশের মানুষকে মুখে বলার চেয়েও বেশি ভালোবাসেন।

শাহ আলী জয়

শাহ আলী জয় নিউজ টোয়েন্টিফোর টিভি’র সিনিয়স রিপোর্টার। তিনি এবারই প্রথম এসেছেন। শাহ আলী জয় বলেন, জাতিসংঘের আয়োজনটি আমার কাছে অভূতপূর্ব। অনেক দেশের সাংবাদিকদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাঁদের অনেকেই আমাদের পোশাক শিল্প এবং আমাদের দারিদ্রের হার কমাসহ অনেক উন্নয়নের কথা জানেন। কাজের ফাঁকে তাদের সঙ্গে বিশ্বেও নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে সবার একটাই লক্ষ ‘ শান্তি’। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষনের বিশ্ব শান্তির কথাই বলেছেন বারবার। এবং দিয়েছেন শান্তি বাস্তবায়নের রুপরেখা ।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা ইন্টার প্রেস সার্ভিস (আইপিএস) প্রদত্ত সম্মানজনক ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করেন। মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নাগরিককে আশ্রয়দানের মাধ্যমে মানবিকতার উদাহরণ সৃষ্টি করায় তাঁকে এই পদকে ভূষিত করা হয়ে। পাশাপাশি দূরদৃষ্টির মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলার জন্য গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশনের পরিচালনা পর্ষদ প্রধানমন্ত্রীকে ‘২০১৮ স্পেশাল রিকগনাইজেশন ফর আউটস্ট্যান্ডিং লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত করে। আমরা প্রথম সফরে প্রধানমন্ত্রী তথা দেশের এতা ভালো দুটি খবর আমার সফরকে স্মরনীয় করে রাখবে।


রুহুল আমিন রাসেল

দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন’র স্টাফ রিপোর্টার রুহুল আমিন রাসেল বলেন, আমি শিখার চেষ্টা করেছি অন্য দেশেল বড় সাংবাদিকরা কেমন করে কাজ করেন। অন্য দেশের সংবাদিকরা দেখলাম কেউ আমাদের পোশাক শিল্প সম্পর্কে জানেন। কেউ ক্রিকেট নিয়েও আলাপ করেছে যা আমার খুব ভালো লেগেছে। জাতিসংঘের আয়োজনটি অসাধারণ তবে তাদেও মিডিয়া বিষয়ে অনেক বেশি কড়াকড়ি। নিজ দেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাড়া অন্য কোনো অধিবেশনে যাওয়া যায় না। এটা আমার খারাপ লেগেছে। নিউইয়র্কে বাঙালিদের মধ্যে অনেকেই দলা-দলি করলেও বেশির ভাগ মানুষকে দেখেছি একে অপরের সুখে-দুখে এগিয়ে আসে। যা দেশে অনেক কমে গেছে। তবে প্রধানমন্ত্রী আসাকে কেন্দ্র করে ম্যানহাটনে জাতিসংঘের সামনে দুই দলের পাল্টা-পাল্টি সমাবেশ দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে।

কাজী সাহেদ

জাতিসংঘ কাভার করতে বাংলাদেশ থেকে সাধারণত রাজধানীর সাংবাদিকরাই এসে থাকেন। তবে এবার বিভাগীয় শহর থেকে এসেছেন রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী সাহেদ। তিনি বলেন, সফস্বলের একজন সাংবাদিক হয়ে এতো বড় আয়োজনে আসতে পেরে গর্ববোধ করছি। কমনওয়েলথ কাভার করতে এবার আমি লন্ডনে গিয়েছিলাম । তাদের আয়োজনটি যতো গোছালো ছিলো জাতিসংঘেরটি ততটা না। মিডিয়া সেন্টারটি সাংবাদিকের তুলনায় অপ্রতুল। এই প্রবাসে বাঙালিদের আন্তরিকাতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। জ্যাকসন হাইটস যেনো এক টুকরো বাংলাদেশ। এতো বাঙালি ! যে কয় দিন এখানে ছিলাম কখনো মনে হয়নি দেশের বাহিরে আছি। তবে প্রবাসীরা আমাদের যেমন আন্তরিক ভাবে আপ্যায়ন করেন দেশে আমরা তাদের সে ভাবে গ্রহণ করি না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here