বাংলা খবর, নিউইয়র্ক:
এবার দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে দুই বাংলাদেশী-আমেরিকান পুলিশ সদস্য। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করা এ বাংলাদেশীরা এদেশে এসে পুলিশ বিভাগে চাকরি পান। নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ (এনওয়াইপিডি) তে প্রায় এক হাজার বাংলাদেশী-আমেরিকান পুলিশ সদস্য কাজ করছেন। সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে বেশ ভাল করছেন বলে এখানকার সিটি মেয়র এবং এনওয়াইপিডি’র কর্মকর্তারা বেশ খুশি। এমনিতেই এনওয়াইপিডি পৃথিবীর সবচেয়ে পারদর্শী পুলিশ বাহিনী বলে খ্যাত বলে আখ্যায়িত রয়েছে। তার ওপর সম্প্রতি
পুলিশের অন্যতম শীর্ষ পদে আসীন হয়েছেন এক বাংলাদেশী। খন্দকার আব্দুল্লাহ নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টে (এনওয়াইপিডি) ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি পেয়েছেন যা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গৌরবময়। ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ তাঁর যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতার মাধ্যমে এনওয়াইপিডিতে এই সম্মানজনক পদ লাভ করেন। অপর বাংলাদেশী-আমেরিকান পুলিশ সদস্যের সাহসিকতা কাজের বিষয়টি ইতোমধ্যে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ কর্মকর্তা সাইদ আলী সম্প্রতি সাবওয়ে স্টেশনে একাই পাঁচজন দুস্কৃতিকারীকে প্রতিহত করে ডিপার্টমেন্টের সুনাম বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। নববর্ষের পূর্বমুহূর্তের ঘটনাটি সেসময় নিউইয়র্কে এবং বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়ায় বেশ আলোচিত হয়েছিল এবং নিউইয়র্ক সিটি মেয়র বিল দ্যা ব্লাজিও তাঁর এক টুইটার বার্তায় পুলিশ অফিসার আলীর পেশাদারিত্ব ও সাহসিকতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। এ দুই বাংলাদেশী পুলিশ কর্মকর্তাকে সম্মানিত করতে ভুল করেনি বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল নিউইয়র্ক অফিস। শুক্রবার এক বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশী-আমেরিকান দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে সম্মাননা প্রদান করেছেন।
অনুষ্ঠানটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মান্যবর জনাব মাসুদ বিন মোমেন। নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের পুলিশ কমিশনার এর প্রতিনিধি হিসেবে ব্রুকলীন ব্যুরো সাউথ পেট্রল এর নির্বাহী কর্মকর্তা ও ডেপুটি চীফ চার্লস শল , বাংলাদেশী-আমেরিকান পুলিশ এসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি সুজাত খান এবং সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরসহ বাপার অন্যান্য কর্মকর্তাগণও উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানস্থলে প্রদর্শিত একটি ব্যানারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাস্যোজ্জ্বল ছবি দেখিয়ে চার্লস স্কল বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের অন্যাতম সফল নারী নেত্রী। তিনি নারী ক্ষমতায়নের প্রতিভূ। তাঁর মত বিশ্বনেতার গতিশীল নেতৃত্বে আরো এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ”।
রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, “আমার প্রত্যাশা, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাঙালিসহ সারা বিশ্বের সকল প্রবাসী বাঙালি সম্প্রদায়ের বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্ম ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ ও অফিসার আলীর সাফল্যে অনুপ্রাণিত হবে। তারা মেধা ও জ্ঞানের সৌকর্যে উজ্জ্বীবিত হয়ে বর্হিঃবিশ্বে স্ব স্ব দেশ ও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে”।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা সম্মাননা প্রাপ্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে অভিনন্দন জানান। এ সময় তিনি বলেন, “কনস্যুলেটের এই হল ঘরে প্রতিদিন অসংখ্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের আমরা কনস্যুলার সেবা দিয়ে থাকি, আজ এই ঘরেই এমন দু’জন সফল বাংলাদেশী-আমেরিকানকে আমরা সম্মাননা জানালাম যাঁরা শুধু আমেরিকারই নয় বাংলাদেশের জন্যও সমান গর্বের। যদি আজ জাতির পিতা বেঁচে থাকতেন বাংলাদেশের অদম্য অগ্রযাত্রার পাশাপাশি বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত প্রবাসীদের এমন অব্যাহত সাফল্য দেখে নিশ্চয়ই মুগ্ধ হতেন”। কনসাল জেনারেল বাংলাদেশী-আমেরিকান পুলিশ কর্মকর্তাগণের প্রতি আহবান জানান, যেন তাঁরা অর্জিত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে আমেরিকা তথা সারা বিশ্ব এবং স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর স্বপ্নের ’সোনার বাংলা’-কে আরো এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী-আমেরিকান সাংবাদিককৃন্দ ছাড়াও মিশন ও কনস্যুলেটের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান চলাকালে বাংলাদেশের দেশাত্বকবোধক গান পরিবেশনা অনুষ্ঠানটিকে আরো উজ্জ্বল করে তোলে।
ছবি: নিহার সিদ্দিক