ঢাকা ব্যাংকের ফেনী শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার গোলাম সাঈদ রাশেব (৩৫) গ্রাহকদের একাউন্ট হ্যাক করে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। টানা তিন দিন ব্যাংক বন্ধ থাকার পর বিষয়টি জানাজানি হলে সোমবার ব্যাংকে ভিড় করেন গ্রহকরা। লাখ লাখ টাকা খুইয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন গ্রাহকরা।
ফেনী শাখার ব্যবস্থাপক আখতার হোসেন সরকার জানান, ঢাকা ব্যাংকের ফেনী শাখা চালু হলে ফেনী সদর উপজেলার মোটবী ইউনিয়নের বড় বাড়ির আজিজুল হক ভূঁইয়ার ছেলে গোলাম সাঈদ রাশেব যোগদান করেন। মাঝে কিছুদিন তিনি অন্য একটি শাখায় কাজ করলেও ফের বদলি হয়ে ফেনী শাখায় আসেন।
এ শাখায় দুই মেয়াদে প্রায় ৯ বছর চাকরি করে পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ফেনী শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার (ক্রেডিট) পদে দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ সময় চাকুরির সুবাদে এখানকার সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের আস্থাভাজনে পরিণত হন তিনি। গ্রাহকরা নির্দিধায় তার কাছে চেক, নগদ অর্থ ও ঋণের কিস্তির টাকা দিয়ে যেতেন।
বিশস্ততার সুযোগ নিয়ে গোলাম সাঈদ রাশেব অনেক গ্রাহকের কাছ থেকে ঋণ সমন্বয়ের কথা বলে ব্যাংকের ব্লাংক চেক সংগ্রহ করেন। তার গতিবিধি সন্দেহজন হলে গত ১২ মার্চ মঙ্গলবার ব্যাংকের শাখা ম্যানেজার উর্ধ্বতনদের লিখিতভাবে বিষয়টি অবগত করেন।

পরদিন যথারিতি অফিসে এসে সকাল সাড়ে দশটার পর বাইরে গিয়ে উধাও হয়ে যান ওই কর্মকর্তা। চেক উত্তোলনের মেসেজে পেয়ে বৃহস্পতিবার কয়েকজন গ্রাহক ব্যাংকে অভিযোগ করলে বিষটি স্পষ্ট হয়।
ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহক ও ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার সিন্দুরপুর গ্রামের মাহবুবুল হক রিপনের একাউন্ট থেকে তোলা হয়েছে ৩৪ লাখ টাকা। তিনি অভিযোগ করেন, তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরাধনা এন্টারপ্রাইজের অধীনে ব্যাংকের এ শাখায় ৫ কোটি টাকার ঋণ চলমান রয়েছে। ঋণ সমন্বয়ের কথা বলে দুটি ব্লাংক চেক নেন গোলাম সাঈদ রাশেব। পরে একাউন্ট চেক করে দেখা যায় এ দুটো চেক ব্যবহার করে টাকাগুলো উত্তোলন করেন।

তার ছোট ভাই ফজলুল হক পলাশের মুনতাসির এন্টারপ্রাইজের একাউন্ট থেকে ৪২ লাখ টাকা একই কায়দায় তুলে নেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ফেনী শহরের বড় বাজারের কাপড়ের ব্যবসায়ী অজয় কুমার বণিকের একাউন্ট থেকে ৭০ লাখ টাকা, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কাচ্চুটি গ্রামের মোশাররফ হোসেন মজুমদারের একাউন্ট থেকৈ ৮ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, গোলাম সাঈদ রাশেবের সাথে অনেক গ্রাহকের ব্যক্তিগত লেনদেন রয়েছে বলে অনেক গ্রহক মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন।
তবে শাখা ব্যবস্থাপক আখতার হোসেন বলেন, কতজন গ্রাহকের কি পরিমান অর্থ লোপাট হয়েছে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। এ পর্যন্ত টাকা খোয়া গেছে মর্মে প্রায় ১৫জন গ্রাহক লিখিত অভিযোগ করেছেন। সে হিসেবে ব্যাংকিং লেনদের মাধ্যমে ২ থেকে ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ হতে পারে বলে ধারণা করছেন। তারা ব্যাংকের প্রধান কার্যলয়ে বিষয়টি অবগত করেছেন। ইতোমধ্যে প্রধান কার্যালয় থেকে একটি তদন্ত দল (অডিট টিম) ফেনী শাখায় এসে কাজ শুরু করেছেন। রাশেবের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই কর্মকর্তার ভাই স্থানীয়ভাবে বেশ প্রতিষ্ঠিত বলে পরিচিত। এমন পরিস্থিতিতে ওই কর্মকর্তাকে খুঁজে না পাওয়াকে তারা অর্থ আত্মসাতের চেয়েও বড় সংকট বলে মনে করছেন।

সুত্র: মানবজমিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here