রোহিঙ্গা সংকটে দায়ী জাতিসংঘ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

0
65

রোহিঙ্গা সংকটের জন্য জাতিসংঘও দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, অনেক কিছু গোপন রাখার জন্যই জাতিসংঘ দায়ী। রোহিঙ্গাদের রক্ষায় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিসংঘের অবস্থান অত্যন্ত দুর্বল বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে (বিস) জেনেভা কনভেনশনের ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও আজকের মানবিক বিশ্ব’ শীর্ষক সেমিনারের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব মন্তব্য করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের অবশ্যই পদ্ধতিগত ভুল ছিল।

এমন পরিস্থিতি একদিনে সৃষ্টি হয়নি। মিয়ানমারে বহু বছর ধরে এক জাতিগোষ্ঠীর প্রতি আরেক জাতিগোষ্ঠী হিংসা-বিদ্বেষ ছড়িয়েছে। কিন্তু তা রোধে জাতিসংঘ দৃষ্টি দেয়নি। তিনি বলেন, আমাদের এমন একটা মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা উচিত- যা ধর্ম-বর্ণ ও জাতি নির্বিশেষে সবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে। এতে জাতিসংঘও বিশ্বাস করে। কিন্তু সে অনুযায়ী কাজ করে না।

এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেন, আমরা চাই না আর কোথাও হত্যা, গণহত্যা বা জাতিগত নির্মূল করা হোক। আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যাতে আর কোথাও এসব না হয়। যারা রোহিঙ্গাদের হত্যার জন্য দায়ী তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা উচিত।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা জেনেভা কনভেশনের ৭০তম জন্মতিথি উদযাপন করছি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মানবতা সুরক্ষায় একাধিক আইন পাস হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, সম্প্রতি এ মানবতার আইনগুলো খুব বৈষম্যমূলকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।

অতএব মানবকল্যাণে আজকের দিনে আমাদের নতুন করে প্রতিজ্ঞা করতে হবে। সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার দিকটি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, সম্প্রতি প্রতিবেশী মিয়ানমারে নিরীহ জনগোষ্ঠীর মানবতা লঙ্ঘন করা হয়েছে। যদিও তারা কোনোভাবেই যুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আমাদের আশ্রয় দিতে হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ চায় জেনেভা কনভেশনের সব ধারা বৈষম্যহীনভাবে সারা দুনিয়ায় প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করা হোক। এটা হলে বহু রকম নির্যাতন দূর হবে। বিনা কারণে যারা দুর্ভোগে পড়ে, পঙ্গু হয়, তাদেরও আমরা কনট্রিবিউটিং সিটিজেন (অবদানকারী নাগরিক) হিসেবে সমাজে কাজে লাগাতে পারি। মানবতা লঙ্ঘন ও জেনেভা কনভেশন বাস্তবায়নের ব্যাপারে যাতে সোচ্চার আন্দোলন গড়ে ওঠে সেজন্য মিডিয়াকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।

ইন্টারন্যাশনাল কমিটি ফর রেড ক্রস (আইসিআরসি) এবং ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিকাব) এ সেমিনারের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বক্তৃতা করেন। আইসিআরসির কমিউনিকেশন ও প্রিভেনশন ম্যানেজার মিজ আনা স্ক্যাফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে আইসিআরসির বাংলাদেশ হেড অব ডেলিগেশন ইখতিয়ার আসলনভ, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মহাসচিব ফিরোজ সালাহউদ্দিন, ডিকাব সভাপতি রাহীদ এজাজ, সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিব প্রমুখ বক্তব্য দেন।

তিন পর্বে বিভক্ত সেমিনারের দ্বিতীয়পর্বে আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুজ্জামান ভূঁইয়া, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ডিন অধ্যাপক এবিএম আবু নোমান। এ পর্বে সভাপতিত্ব করেন ডিকাব সভাপতি রাহীদ এজাজ। শেষপর্বে বক্তৃতা করেন ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. লাইলুফার ইয়াসমিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here