শহীদ জোহা দিবস আজ

0
664

শহীদ জোহা দিবস আজ। ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি গণঅভ্যুত্থানের সময় শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে গিয়ে পাকিস্তানি সৈন্যদের নির্মম নির্যাতনে শহীদ হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) তৎকালীন প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মুহাম্মদ শামসুজ্জোহা।

ওইদিন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের দাবি এবং সার্জেন্ট জহুরুল হক হত্যার প্রতিবাদে ১৪৪ ধারা ভেঙে সকালে রাস্তায় নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তখন প্রধান ফটকের কাছাকাছি। আন্দোলন বড় হতে থাকে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে পাকিস্তানি সেনারা মিছিলে গুলি করতে উদ্ধত হয়।

খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ছাত্রদের সামনে দাঁড়ান। বলিষ্ঠ কণ্ঠে চিৎকার করে বলেন, ‘ডোন্ট ফায়ার, আই সেইড ডোন্ট ফায়ার! কোনো ছাত্রের গায়ে গুলি লাগার আগে যেন আমার বুকে গুলি লাগে।’

ছাত্রদের বাঁচাতে তিনি এভাবে চিৎকার করেছিলেন। এক পর্যায়ে ড. জোহা ছাত্রদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু তাতে কর্ণপাত না করে বেলা ১১টার দিকে ক্যাপ্টেন হাদী পিস্তল বের করে ড. জোহাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। গুলিবিদ্ধ ড. জোহাকে পরে রাজশাহী মিউনিসিপল অফিসে নিয়ে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

ড. জোহার রক্ত ঝরার মধ্য দিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে। পতন ঘটেছিল সামারিক জান্তা আইয়ুব খানের। ড. জোহার আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিতও রচিত হয়েছিল । মুক্তিযুদ্ধে প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় ড. জোহাকে।

দিবসটি শুধুমাত্র রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পালিত হয় ‘জোহা দিবস’ হিসেবে। ড. জোহার শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে আজ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর অংশ হিসেবে সকালে সূর্যোদয়ের সঙ্গে কালো পতাকা উত্তোলন, ড. জোহার সমাধি ও স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পাশাপাশি আলোচনা সভা, জোহা স্মারক বক্তৃতা, দোয়া অনুষ্ঠান, রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।

এদিকে ড. জোহার স্মৃতি রক্ষার্থে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর চার টাকা মূল্যের ডাকটিকেট চালু করা হয়। রাবি ক্যাম্পাসে একটি ছাত্র হলের নামকরণ করা হয় তার নামে। শহীদ শামসুজ্জোহা হলের সামনে রয়েছে স্মৃতি ভাস্কর্য স্ফুলিঙ্গ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করলে প্রশাসানিক ভবনের সামনে চোখে পড়বে জোহার সমাধি। সেখানে জোহা স্মৃতিফলক নির্মাণ করা করা হয়েছে। যা ‘জোহা চত্বর’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here