গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের বিরুদ্ধে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ তুলে জুতাপেটা করতে সংগঠনের কর্মীদের নির্দেশ দিলেন এক ছাত্রলীগ নেতা কোটা ।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র ইমরানকে ‘পাকিস্তানের প্রেতাত্মা’ আখ্যাও দেন সরকার সমর্থক সংগঠনটির নেতা সৈয়দ মিজানুর রহমান।
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে উপাচার্যের বাসভবনে হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মিজান।
তিনি সমাবেশে উপস্থিত কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘বাংলাদেশের যেখানেই ইমরান এইচ সরকারকে পাওয়া যাবে, সেখানেই জুতাপেটা করে তার গায়ের চামড়া তুলে নিবেন।’
রংপুর মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ইমরানের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের মেয়ের সংসারে ভাঙন ধরার খবর প্রকাশের পরদিনই এই নির্দেশ দিলেন ছাত্রলীগ নেতা মিজান।
রোববার আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশ আক্রমণ চালালে রাবার বুলেটে আহত ছাত্র আবু বকর সিদ্দিকের মৃত্যুর গুজব রটেছিল, তখন ইমরান তা ফেইসবুকে শেয়ার করেন।
ফেইসবুকে ‘প্রোপাগান্ডা’ ছড়ানোর জন্য ইমরানকে গ্রেফতার করতেও সরকারের প্রতি দাবি জানান মিজান।
ক্যাম্পাসে মিছিলের পর অপরাজেয় বাংলায় অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবিদ আল হাসান, সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সও বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে উপস্থিত বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আবু বকরকে দেখিয়ে সোহাগ বলেন, ‘আবু বকর এখানেই আছে, কিন্তু একটি কুচক্রী গোষ্ঠী তাকে নিয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছে।’
পুলিশের হামলার পর কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের উপর ছাত্রলীগও চড়াও হয়েছিল রোববার রাতে। ওই রাতেই উপাচার্যের বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর হয়।
আন্দোলনকারীরা শাহবাগে অবস্থান নিয়েছিলেন, তাদের পিটিয়ে ও কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে তুলে দেওয়া হয়েছিল। তাতে অর্ধশত আন্দোলনকারী আহত হন।
আন্দোলনকারীদের ‘ষড়যন্ত্রকারী’ আখ্যায়িত করে ছাত্রলীগ সভাপতি সোহাগ দাবি করেন, তারা পুলিশকে আক্রমণ করার পরই পুলিশ তাদের উপর টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।
তিনি বলেন, ‘রাত যত গভীর হয়েছে আন্দোলনকারীদের ষড়যন্ত্র তত গভীর হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করা।’
ভিসির বাসভবনে হামলা নিয়ে সোহাগ বলেন, ‘ভিসির বাসভবনে যে হামলা ও তাণ্ডব হয়েছে, তা ২৫শে মার্চের কালো রাতকে হার মানিয়েছে।’
প্রিন্স বলেন, ‘রাত ১২টায় শুনলাম যে উপাচার্যের ভবনে আগুন দেওয়া হয়েছে। আমরা মধুর ক্যান্টিনে ছিলাম, সেখান থেকে উপাচার্য ভবনে গিয়ে দেখি সে এক অবর্ণনীয় দৃশ্য।
‘উপাচার্যের ভবনে তারাই হামলা করেছে যারা এর আগে ২৩ জানুয়ারি উপাচার্য অফিসে হামলা করেছিল। আমি তাদের একজনকে ধরে ফেলেছি।’
আন্দোলনকারীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা আবিদ বলেন, ‘যতদিন তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছে, ততদিন ছাত্রলীগ তাদের বাধা দেয়নি।
‘যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে ভিসির বাসভবন ভাংচুর করেছে, গায়ে হাত তুলেছে- সেটা কোনো বিবেকবান মানুষের কাজ হতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘আবু বকরের মৃত্যুর গুজবে কান দিয়ে আমাদের বোনেরা গভীর রাতে হলের গেইট ভেঙে বেরিয়ে এসেছে। গতকালও একটি প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছে যে ছাত্রলীগের হামলায় হলের ফ্লোর রক্তে ভেসে গেছে। এমন প্রমাণ যদি কেউ দিতে পারে, তাহলে ছাত্রলীগের পদ থেকে আমি পদত্যাগ করব।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here