ব্যাংকেও বাড়ছে নারী কর্মীর অংশগ্রহণ

0
81

১৯৮৬ সালে রাষ্ট্রীয় মালিকানার অগ্রণী ব্যাংকে চাকরি শুরু করেন জাকিয়া বেগম। ১৯৮৯ সালে বেসিক ব্যাংকে চাকরিতে যোগ দেন মরিয়ম বেগম। বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে জাকিয়া বেগম এখন অগ্রণী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক। মরিয়ম বেগম উপ-মহাব্যবস্থাপক। দু’জনেরই কর্মজীবনের শুরুর দিকে ব্যাংকে নারীর সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এখন চাকরিসহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে আসছেন নারীরা। ব্যাংকিং পেশায়ও পিছিয়ে নেই তারা। এ পেশায় এখন যারা যোগ দিচ্ছেন, তাদের প্রায় ২১ শতাংশ নারী। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ১৩ শতাংশের বেশি নারী।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর মোট জনবল এক লাখ ৬৯ হাজার ৮৭৫ জন। এর মধ্যে নারী কর্মী ২৫ হাজার ৭৭১ জন। এর মানে ব্যাংকিং পেশায় নারীর অনুপাত দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ১৭ শতাংশ। ২০ বছর আগে এর অর্ধেকেরও কম ছিল। এখন ব্যাংকগুলোতে ৩০ বছরের কম বয়সী যেসব কর্মী আছেন তাদের মধ্যে ২০ দশমিক ৯১ শতাংশ নারী। ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী কর্মীর মধ্যে নারীর হার ১৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ৫০ বছরের বেশি বয়সীর মধ্যে এ হার বেড়ে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশে উঠেছে। অগ্রণী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক জাকিয়া বেগম বলেন, ৩৪ বছর আগে তিনি যখন চাকরি শুরু করেন, তখন নারীর সংখ্যা ছিল খুব কম। এরপর মোট কর্মীর অনুপাতে নারীর অংশ বাড়ছে। ১৯৮৬ সালের তুলনায় নারীরা অনেক এগিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৪ দশমিক ২২ শতাংশ নারী কর্মী আছেন বিদেশি ব্যাংকগুলোতে। এসব ব্যাংকের তিন হাজার ৮৭৩ কর্মীর মধ্যে নারী আছেন ৯৩৮ জন। পর্যায়ক্রমে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর এক লাখ তিন হাজার ৭৮৭ জনের মধ্যে নারীর সংখ্যা ১৬ হাজার ৭৬ জন, যা ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ৫০ হাজার ৫০ জন কর্মীর মধ্যে নারী ১৪ দশমিক ৫১ শতাংশ। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের ১২ হাজার ১৬৫ জনের মধ্যে নারীকর্মী এক হাজার ৪৯৫ জন বা ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ।
বেসিক ব্যাংকের ডিজিএম মরিয়ম বেগম বলেন, এক সময় গৃহস্থালির কাজের বাইরে নারীর অংশগ্রহণ ছিল না বললেই চলে। বেসিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠার শুরুতে যখন তারা চাকরিতে যোগ দেন, তখন মাত্র কয়েকজন ছিলেন নারী। এখন প্রতিটি বিভাগে ওই সময়ের চেয়ে বেশি নারী আছেন। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। গৃহস্থালির বাইরে চাকরি, ব্যবসায় উদ্যোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারী অংশ নিচ্ছেন। তিনি ২০০৯ সাল থেকে বেসিক ব্যাংকে এসএমই ও নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করছেন। এটা তার জন্য বড় ভালো লাগার বিষয়।

এদিকে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের সদস্যের মধ্যে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ রয়েছেন নারী। উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে নারীর হার ৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। মধ্যবর্তী পর্যায়ে নারী আছেন ১৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। সূচনা পর্যায়ে আছেন ১৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। জানুয়ারি-জুন সময়ে যারা পেশা বদল করেছেন তাদের মধ্যে ১৩ দশমিক ৯২ শতাংশ ছিলেন নারী কর্মী। নারীরা শুধু ব্যাংকের চাকরিতে আসছেন তা নয়। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন চাকরি, কৃষি, ব্যবসায় উদ্যোগসহ নানা ক্ষেত্রে তাদের সফল অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে নারীর হয়রানি বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ, মাতৃত্বকালীন ছুটির নিশ্চয়তা, শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন, ব্যবসার জন্য কম সুদের ঋণসহ নানা কারণে নারীরা বিভিন্ন উদ্যোগে যুক্ত হচ্ছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here