অভিযুক্ত আদনান মির্জাই স্কুলছাত্রী তাসফিয়াকে কৌশলে ‘রিচ কিডস গ্রুপ’র হাতে তুলে দেয়। এরপর তার লাশ চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সী’বিচে পাওয়া যায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আদনান মির্জা পুলিশকে এসব তথ্য জানিয়েছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। পুলিশ বলছে, ওই গ্রুপের চারজন এবং বড় ভাই ফিরোজ ও আকরামকে আটক করতে পারলেই হত্যার রহস্য উম্মোচন করা সহজ হবে।
‘রিচ কিডস গ্রুপ’ চট্টগ্রামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকভিত্তিক একটি গ্রুপ। আর এই গ্রুপের প্রধান হচ্ছে তাসপিয়ার প্রেমিক ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর ছেলে স্কুলছাত্র আদনান মির্জা।
এই গ্রুপে আরো রয়েছে নগরের ইংলিশ মিডিয়ামে অধ্যয়নরত কোটিপতি বাবার সন্তানরা।
এ ব্যাপারে সিএমপি পতেঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি-তদন্ত) গাজী মো. ফৌজুল আজিম বলেন, বুধবার রাতে আদনানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করে, তাসপিয়ার ফেসবুক তার বাবা বন্ধ করে দেয়ায় সে তার (আদনান) সাথে যোগযোগ করতো ইনস্টাগ্রামে।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর গোলপাহাড় মোড়ে চায়না গ্রিল নামে চাইনিজ রেস্টুরেন্টে তাসপিয়াকে নিয়ে প্রেমের এক মাস পূর্তি উৎসব করে আদনান। এরপর তাসপিয়াকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে দেয় সে।
ওসি বলেন, যাওয়ার সময় আদনানকে জানিয়ে যায়, তাসপিয়া নিজাম রোডের ৫নং সড়কে তার এক বান্ধবীর বাসায় জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যাবে। এরপর থেকে আদনান আর কিছু জানে না বলে পুলিশকে জানিয়েছে।
কিন্তু নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানা গেছে, মেয়ের সাথে সম্পর্ক মেনে না নেয়া এবং শাসানোর ‘প্রতিশোধ’ নিতেই আদনান তাসপিয়াকে তার গ্রুপের সদস্যদের হাতে তুলে দেয়।
ওই সূত্রটি জানায়, তাসপিয়াকে যে সিএনজিচালিত অটোরিকশাতে তুলে দেয় আদনান, সেই অটোরিকশার পেছনেই ছিল দুটি মোটরসাইকেলে চার যুবক। এ চারজন যুবক আদনানের পরিচালিত ‘রিচ কিডস গ্রুপ’র সদস্য। পরে নিজের দোষ আড়াল করতে তাসপিয়াকে তার পরিবারের সাথে খুঁজতে বের হয় আদনান।
আদনান চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার পদুয়া ইউনিয়নের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ইসকান্দর মির্জার ছেলে। চট্টগ্রাম মহানগরের খুলশী থানা এলাকার দক্ষিণ খুলশী মুরগী ফার্ম জালালাবাদ আবাসিকের রয়েল পার্ক বিল্ডিংয়ে আদনানদের বসবাস। স্কুলছাত্রী তাসপিয়া হত্যাকাণ্ডের ১৫ ঘণ্টার মাথায় তাকে আটক করে পুলিশ।
আদনান নগরীর সানশাইন গ্রামার স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণিতে পড়তো। একই স্কুলের নবম শ্রেণিতে পড়তো তাসপিয়া আমিন। দুইজনের ছিল বেশ জানাশোনা।
তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে আদনানকে তার বাবা ভর্তি করে দেন বাংলাদেশ অ্যালিমেন্টারি স্কুলে। ভিন্ন স্কুলে পড়লেও বন্ধুদের মাধ্যমে তাসপিয়ার ফেসবুক আইডি সংগ্রহ করে যোগাযোগ রক্ষা করতে থাকে আদনান।
তাদের সম্পর্কটি গত এক মাস আগে প্রেমে গড়ায়। বিষয়টি জেনে যায় তাসপিয়ার মা-বাবা।
এ কারণে কয়েকদিন আগে তাসপিয়াকে শাসান বাবা মোহাম্মদ আমিন। বন্ধ করে দেন তার ফেসবুক আইডি। একই সাথে আদনানকে ডেকে কড়া ভাষায় বলে দেন মেয়ের পথ থেকে সরে যেতে।
এই শাসানোটা ভালোভাবে নেয়নি আদনান। আর অবুঝ তাসপিয়াও মনকে বুঝাতে পারেনি বাবার বাধার কারণ।
তাসপিয়ার ব্যবসাযী বাবা মোহাম্মদ আমিন মঙ্গলবার বিকেলে নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন মসজিদে। বাসায় তাসপিয়ার মা নাইমা ব্যস্ত ছিলেন গৃহস্থালী কাজে। আর এ সময় বাসার কাউকে কিছু না জানিয়ে বেরিয়ে যায় তাসপিয়া।
নামাজ পড়ে এসে মেয়েকে বাসায় না পেয়ে বিচলিত হন বাবা। শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। ওইদিন সন্ধ্যায় আদনানকে ডেকে কথা বলেন তাসপিয়ার বাবা। আমিনের সাথে আদনানও তাসপিয়াকে খুঁজতে বরে হয়। এরপর মেয়েকে না পেয়ে রাত ১০টার দিকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয় আদনানকে।
তাসপিয়ার এক স্বজন জানান, রাত ১০টায় আদনাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার পর পরই তাদের বাসায় হাজির হন পুলিশের তালিকাভুক্ত দুই সন্ত্রাসী ফিরোজ ও আকরাম।
তিনি জানান, তারা আদনানকে ছেড়ে দিতে সময় বেধে দেন। মেয়েকে ফিরে পাবেন এই আশায় মোহাম্মদ আমিন পুলিশকে আদনানকে ছেড়ে দিতে বলেন।
এর পর রাত ১১টার দিকে থানা থেকে আদনানকে নিয়ে যান ‘বড় ভাই‘ ফিরোজ ও আকরাম। কিন্তু কথিত দুই বড় ভাই তাদের কথা মতো তাসপিয়াকে ফেরত না পাওযায় বুধবার আদনানকে আটক করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, আজ বৃহস্পতিবার আদনানকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে।
তাসপিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন জানান, আজ বৃহস্পতিবার তার মেয়ের ময়নাতদন্ত শেষ হবে। এর পরই লাশ নিয়ে যাবেন টেকনাফ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের ডেইলপাড়া গ্রামে। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
এর আগে বুধবার সকালে নগরের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের ১৮ নম্বর ঘাটে পাথরের ওপর থেকে তাসফিয়া আমিনের মরদেহ উদ্ধার করে পতেঙ্গা থানা পুলিশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here