খালেদা জিয়া দাঁড়াতে পারছেন না। গত সাড়ে ৩ মাসে তার ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসারসহ বেশ কিছু রোগের পরিক্ষা করা হয়নি অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার সকালে দলের নয়াপ্লটন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন।

খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা না দিয়ে স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটানোর মাধ্যমে অকালে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। তাকে চিকিৎসা না দিয়ে অসুস্থ অবস্থায় কয়দিন পর হুইল চেয়ারে করে আদালতে হাজির করে মানসিকভাবে হেনস্থা করা এই সরকারের একটি ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, অত্যন্ত ক্ষোভ এবং আশঙ্কার সঙ্গে লক্ষ্য করছি, জনগণের ভালবাসায় সিক্ত, জনগণের সমর্থনে নির্বাচিত ৩ বারের প্রধানমন্ত্রী দুইবারের বিরোধীদলীয় নেতা সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেতা খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সাজা দিয়ে একটি পরিত্যক্ত নির্জন কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশে দীর্ঘ একবছরের বেশি সময় ধরে।

তিনি আরো বলেন, সবাই জানেন তিনি যখন কারাগারে গিয়েছিলেন তখন সুস্থ অবস্থায় গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে কারাগারে গিয়েছিলেন। এরপরে দেখলাম তিনি অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়লেন। গত প্রায় সাড়ে তিন মাস দেশনেত্রীর অসুখগুলো আরও বেড়ে গেছে। বাম কাধে ব্যথা বৃদ্ধি পেয়েছে। ডান কাধে নতুন করে ব্যথা হচ্ছে। বাম-বাহু ও কব্জিতে ব্যথা অনেক বেড়েছে। ফলে কারও সাহায্য ছাড়া তিনি দাঁড়াতে কিংবা চলতে পারছেন না। প্রচণ্ড ব্যথা ও কাপুনির জন্য তিনি হাত দিয়ে কিছু ধরেও রাখতে পারছেন না।

আদালতের নির্দেশে করা মেডিকেল বোর্ড সাড়ে ৩ মাস পরে গত পরশু আদালতের নির্দেশে তাকে পরীক্ষা করতে গিয়েছিল। তারা পরীক্ষা করতে গিয়ে বিস্মিত হয়েছেন, গত সাড়ে ৩ মাসে তার কোনো রকম ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা হয়নি। এক্সরে করা হয়নি। ব্লাড প্রেসার মাপা হয়নি। অর্থাৎ কোনো চিকিৎসা করা হয়নি।

তিনি বলেন, আগে পরিবার প্রতি সপ্তাহে দেখা করতে পারতো, এখন ১৫ দিনের আগে কোনো মতে দেখা করতে দেওয়া হয় না। দলের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে ইতোপূর্বে কয়েকবার দেখা করেছি। ৪ মাস ধরে দলের পক্ষ থেকে কাউকে সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এমনকি তার আইনজীবীরাও সাক্ষাতের অনুমতি পাচ্ছেন না।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য দীর্ঘকাল ধরে পরিকল্পনা করে আসছে। যে মামলাগুলো একটার পর একটা দেওয়া হচ্ছে, এর কোনোটার কোনো ভিত্তি নেই। ইতোমধ্যে যে তিনি জামিন পেয়েছিলেন তারও কোনো সুবিধা তাকে গ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। আপনারা জানেন প্রায় ৩০ টি সম্পূর্ণ সাজানো মামলা। তার বিরুদ্ধে দিয়ে একটার পর একটা নিয়ে আসা হয় আর লোয়ার কোর্টে গেলে অনেক দিন পরে আবার তারিখ দেওয়া হয়।

অবিলম্বে সুচিকিৎসার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা তার চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার দলের পক্ষ থেকে বহন করতে রাজি আছি।

খালেদা জিয়াকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে নেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলেছি খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে এবং তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, দুই বারের বিরোধীদলীয় নেত্রী। এখনও তিনি এই দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। তার নিরাপত্তা, চিকিৎসা, ন্যায়বিচার তার প্রাপ্য।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here