রোহিঙ্গা ইস্যু এখন ঝুলে গেছে – মোমেন

0
823

বাংলা খবর:
বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ইস্যু এখন ঝুলে গেছে। আবার নতুন করে, নতুন কৌশলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্সন বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে এগুতে হবে। স্থানীয় সময় বুধবার রাতে নিউইয়র্ক’র ম্যানহাটনে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মাসুদ বিন মোমেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘের ৭৪ তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে আয়োজন করা হয় এ সংবাদ সম্মেলন। তিনি জানান, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ৭২-তম অধিবেশনে প্রদত্ত ৫ দফা প্রস্তাব ও ৭৩-তম অধিবেশনে পুনর্ব্যক্ত ৩ দফা এখনো প্রাসঙ্গিক। উপরন্তু রোহিঙ্গা বিষয়ে বিশ্ব নেতৃত্বের আগ্রহ, সার্বিক অবস্থান অব্যাহত রাখা এবং প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিতকরণে মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির জন্য এ বিষয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের জোরালো বক্তব্য ও অংশগ্রহণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তিনি জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, কানাডা ছাড়াও ওআইসি, আইসিজে প্রতিনিধি সহ আন্তর্জাতিক ফোরামের সাথে আলোচনা হবে।
বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের ফাস্ট সেক্রেটাররি (প্রেস) নূর এলাহী মিনার সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উপস্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মোহাম্মদ ও ইকোনমিক মিনিস্টার মনোয়ার হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জাতিসংঘের ৭৪তম অধিবেশনে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্ক আসছেন রোববার। তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। প্রধানমন্ত্রী বরাবরের মতো এবারো জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেবেন ২৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার। প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘ সফরকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে তার কোন আনুষ্ঠানিক বৈঠক না হলেও জাতিসংঘের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা হবে। এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। বৈঠকের আলোচনায় রোহিঙ্গা, আসাম, কাশ্মীর, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ প্রভৃতি ইস্যু প্রাধান্য পাবে। এছাড়াও জাতিসংঘের মহাসচিব সহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক হবে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক ত্যাগ করবেন ২৯ সেপ্টেম্বর রোববার।
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশন ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর)। এতে ১৯৩টি দেশের রাষ্ট্র বা সরকার অথবা তাদের প্রতিনিধিরা যোগ দিয়েছেন। এবারের অধিবেশন চলাকালীন সময়ে ৫টি সামিট ছাড়াও ৫ শতাধিক কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে। ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার থেকে আনুষ্ঠানিক বিতর্ক শুরু হবে।
সংবাদ সম্মেলনেমাসুদ বিন মোমেন বলেন, ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশন শুরু হয়েছে। এই উচ্চ পর্যায়ের অধিবেশনের সাধারণ বিতর্ক পর্ব আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর হতে ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। এ অধিবেশনে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে পৌঁছাবেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে তাঁর পরিবারের সদস্যবর্গের পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী, বাণিজ্য মন্ত্রী, পরিবেশ মন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্বায়ী কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্বায়ী কমিটির সভাপতি এবং কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি সফরসঙ্গী হবেন।
রাষ্ট্রদূত জানান, এবারের অধিবেশনে সাধারণ বিতর্ক পর্বের পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট তথা এসডিজি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু সভা অনুষ্ঠিত হবে।
জাতিসংঘের এ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ে বেশ কিছু ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভের পর নতুন করে সরকার গঠনের পর এই অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের নেতৃত্বে বিগত বছরগুলোতে অর্জিত বাংলাদেশের সাফল্যসমূহ তুলে ধরার পাশাপাশি দেশে চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও সুশাসনের ধারা অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশের কর্মপরিকল্পনা বিশ্ববাসীকে অবহিত করতে পারেন।
তিনি জানান, পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে জাতিসংঘ মহাসচিব কর্তৃক সকল দেশের সরকার প্রধান ও রাষ্ট্র প্রধানগণের জন্য আয়োজিত মধ্যাহ্ন ভোজ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কর্তৃক আয়োজিত অভ্যর্থনায় অংশগ্রহণ করবেন। প্রতি বছরের মত এবারও, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীগণ প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান আয়োজন করবে।
এছাড়াও এবারের সাধারণ অধিবেশনের সাইড লাইনে ২৬ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরমানু নিরস্ত্রিকরণ বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণ করবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা বিষয়ে ওআইসি কন্ট্যাক্ট গ্রুপ-এর সভা, কমনওয়েলথ পররাষ্ট্র মন্ত্রীগণের সভা, কমনওয়েলথ মিনিস্টারিয়াল গ্রুপ-এর সভাসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ক, ন্যাম, জি-৭৭, এশিয়ান কো অপারেশন ডায়ালগ,এল ডি সি গ্রুপ ইত্যাদি সভায় অংশগ্রহণ করবেন।
তিনি বলেন, এবারের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সমন্বিত পরিকল্পনা, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মাধ্যমে সকলের শিক্ষা, সার্বজনীন স্বাস্থ্য সহ সকল ধরনের চাহিদা পূরণে রাষ্ট্রসমূহের সহযোগিতামূলক অংশগ্রহণের বিষয়টি মাথায় রেখে বহুপাক্ষিক ফোরামের কার্যকারিতাকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি এসডিজি বাস্তবায়নে রাষ্টসমূহের সদি”ছা, অগ্রগতি ও এ যাবৎ গৃহীত পদক্ষেপকে গুরুত্বের সাথে পর্যালোচনা করা হবে। এ প্রেক্ষিতে, একটি শান্তিপূর্ণ ও মানবিক পৃথিবী প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টা, এমডিজি এর লক্ষ্য পূরণে অসাধারণ সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সমন্বিত উদ্যোগ ও পরিকল্পনা, এবং উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অনুকরণীয় সাফল্য আজ সর্বজনবিদিত। এর ধারাবাহিকতায়, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এই অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বেেউচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের অংশগ্রহণ বহুপাক্ষিক ফোরামে বাংলাদেশের বহুল প্রশংসিত দীপ্ত পদচারনাকে আরও সমুন্নত করবে।
পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন রাষ্ট্রদূত । তিনি জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক হবে। তবে সেখানে সকল বিষয়ে গভীর আলোচনায় যাওয়ার সুযোগ কম। আমরা আশা করছি প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে যাওয়ার পর ভারত সফরকালীন সময়ে দুই দেশের আলোচনার মাধ্যমে অমিমাংসিত সমসাগুলোর সমাধান হবে। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে রাষ্ট্রদূত মোমেন বলেন, বাংলাদেশের সাথে ইরান ও সৌদী আরবের সুসম্পর্ক রয়েছে। আমরাও চাইবো আলোচনার মধ্য দিয়ে ইরানের সাথে সৌদিরও সম্পর্ক ভালো হবে এবং সেক্ষেত্রে বায়লাদেশের কোন ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকলে বাংলাদেশ তা করবে।
রোহিঙ্গা শিবির এনজিও থাকা না থাকা সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত বলেন, সকল এনজিও-ই অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত নয়। তবে তাদের কর্মকান্ড নজরে রাখা হয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে সরকারী পর্যায়ে কতজন আসছেন তার কোন সঠিক হিসেব এখনো চুড়ান্ত না হলেও ১৩৩জন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল তাদের নিজ খরচেরই আসছেন বলে জানান মাসুদ বিন মোমেন।


LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here