কৃষি তথ্য সরবরাহে ব্যবহার হবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট: কৃষিমন্ত্রী

0
51

বাংলা খবর ডেস্ক: আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার সব সুবিধা দেশের কৃষি খাতে চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ ও গবেষণা করা হচ্ছে। কৃষকদের প্রযুক্তিভিত্তিক কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্তির জন্য ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। দেশের সামগ্রিক কৃষি খাতের উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে সম্প্রতি সমকালের কাছে এভাবেই সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। অভিজ্ঞ এই রাজনীতিক এর আগে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলেছেন। ছিলেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটিতেও। দীর্ঘদিন ধরেই দেশের খাদ্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আসছেন। নিজেও একজন কৃষিবিদ। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের কৃষি খাতকে প্রস্তুত করতে নিয়েছেন বিভিন্ন পরিকল্পনা।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এই সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে কৃষিকাজে ব্যবহার করা হবে। ইতোমধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহার শুরু হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন মৌসুমে আবহাওয়ার আগাম বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে কৃষকদের কাছে। অতিবৃষ্টি, বন্যা, খরা, কুয়াশার মতো ফসলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ আবহাওয়ার বার্তাগুলো আগেই পৌঁছে দেওয়া হবে। পাশাপাশি কোন সময়ে কোন ফসল চাষ উপযোগী, অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট সময় বের করে জানিয়ে দেওয়া হবে, কখন চারা রোপণ করলে বেশি উৎপাদন হবে। দেশের কোথায় কোথায় পানির প্রয়োজন রয়েছে, তা দেখে বিএডিসির সেচ পাম্প চালানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তালিকাভুক্ত কৃষকদের মোবাইলে এসব বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে। অন্যদিকে কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর জন্য ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন আধুনিক মেশিন কেনায় সরকার নগদ ভর্তুকি দিচ্ছে। আবার এসব মেশিন পরিচালনায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

যেসব কৃষিপণ্যে আমদানিনির্ভরতা রয়েছে, সেগুলোর উৎপাদন বাড়াতে মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমদানিনির্ভর পণ্যের কয়েকটির উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, আদা, সরিষা, ভুট্টা, ডাল উৎপাদনে বিশেষ বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেলা পর্যায়ে কৃষি-সংশ্নিষ্ট দপ্তরগুলো কৃষকদের সঙ্গে এ নিয়ে কাজ করছেন। সরকার একটি ভালো বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলায় কাজ করছে। যেখানে কৃষকরা সহজে তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে পারে। স্বল্প সুদে ঋণ বাড়ানো হবে। এ ছাড়া টমেটো, গাজরের মতো কৃষিপণ্য উৎপাদন বাড়াতে কাজ চলছে। আর আটা ও ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে যে পরিমাণ গম ও তেলবীজ চাষ করা দরকার, তার পুরোটা উৎপাদন বেশ কঠিন। এ জন্য এসব পণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ রয়েছে।

পেঁয়াজের আবাদ বাড়াতে বিশেষ কোনো উদ্যোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক ফসল আছে পচনশীল। পেঁয়াজ তার মধ্যে অন্যতম। ফলে যে পরিমাণ উৎপাদন হয়, তার পুরোটা বাজারে আসে না। আবার ব্যবস্থাপনার দক্ষতার অভাবেও কিছু ফসল নষ্ট হয়। সরকারের চেষ্টা রয়েছে ফসল যাতে কম নষ্ট হয়। এ জন্য সংরক্ষণাগার স্থাপন, কৃষকদের সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য নতুন জাতের উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে। চাষের পরিমাণ বাড়ানোর চেষ্টাও রয়েছে। পাশাপাশি দেশের চাষিরা যাতে ন্যায্যমূল্য পান, সে জন্য পেঁয়াজের ভরা মৌসুমে আমদানি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ থাকবে। আশা করা যায়, আগামীতে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়বে।

তিনি বলেন, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে নতুন ধরনের বীজ উৎপাদনের গবেষণায়। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে যেসব দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে ধরা হচ্ছে, বাংলাদেশ তার অন্যতম। পরিবেশের বিরূপ প্রভাবে আগামীতে অতিবৃষ্টি, বন্যা, খরা বেড়ে যাবে। এ ধরনের প্রাকৃতিক সমস্যা মোকাবিলা করতে পারে- এমন বীজ উৎপাদনে গবেষণা করা হচ্ছে। যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও দেশের কৃষি খাতের উৎপাদন ব্যাহত না হয়। বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও অতিবৃষ্টি সহিষ্ণু বীজ উৎপাদনে গবেষণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কিছু বীজ উৎপাদন করা হয়েছে। আরও নতুন নতুন জাতের বীজ উৎপাদনের কাজ চলছে।

শিক্ষিতরা যাতে কৃষিকাজে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, বাণিজ্যিকভাবে কৃষি উৎপাদন হয়, সে রকম বাজার ব্যবস্থা সৃষ্টি করাও সরকারের লক্ষ্য। কৃষকরা যাতে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পান, তা নিশ্চিত করতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ধানের বিষয়ে বেশ কিছু উদ্যোগ দৃশ্যমান। অন্যান্য ফসলের বিষয়েও কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here