বাংলা খবর ডেস্ক: উৎসবমুখর পরিবেশে রাজধানীতে চলছে ৯ দিনব্যাপী জাতীয় এসএমই মেলা-২০২০। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা পণ্য নিয়ে মেলায় এসেছেন। রঙ-বেরঙের সুতার তৈরি নকশা করা পোশাক, পাটজাত পণ্য, খাবার, জুতা, চামড়া পণ্য, প্লাস্টিক, হস্তশিল্প, কৃষি যন্ত্রপাতিসহ বিভিন্ন পণ্য মেলায় প্রদর্শনের পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতা আকর্ষণে পণ্য ভেদে বিভিন্ন হারে ছাড়ও দিচ্ছে বিক্রেতারা।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বুধবার (৪ মার্চ) থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে ১৩ মার্চ পর্যন্ত। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে।
অষ্টমবারের মতো এ মেলার আয়োজন করেছে শিল্পমন্ত্রণালয়ের অধীন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) ফাউন্ডেশন। মেলায় দেশীয় উদ্যোক্তাদের তৈরি বিভিন্ন পণ্য বিক্রির পাশাপাশি প্রচার, প্রসার ও বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মেলায় প্রদর্শন করা হচ্ছে।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের উদ্যোক্তারা অংশ নিয়েছেন মেলায়। যার বেশির ভাগই নারী উদ্যোক্তা। তারা বুটিক ও বাটিকসহ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সব পণ্য মেলায় এনেছেন। স্টলগুলোতে বুটিক ও বাটিক পণ্য মিলছে ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে।
স্টলে ঘুরে দেখা যায়, বেশি নজর কাড়ছে নারী উদ্যোক্তাদের তৈরি নিপুণ কারুকাজের পণ্য। মেলার মাধ্যমে এসব পণ্য সরাসরি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে বছরজুড়ে পণ্যগুলো বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শো-রুমে সরবরাহ করেন উৎপাদনকারীরা। মেলায় হস্তশিল্পের গৃহসজ্জার ননা সামগ্রী নিয়ে হাজির হয়েছেন নারী উদ্যোক্তা হাসিনা মুক্তা।
তিনি বলেন, প্রতিবছরই মেলায় অংশ নিই। মূলত চট, বাঁশ ও কনফ্লায়ারসহ বিভিন্ন কাঁচামাল দিয়ে তৈরি হস্তশিল্পর গৃহসজ্জার ননা সামগ্রী তৈরি করি। এছাড়া বিভিন্ন সেলাই ও নকশা করে নানান সৌখিন পণ্য যেমন- ব্যাগ, ম্যাট, কলমদানী, পাপোশ ইত্যাদি ছাড়াও ব্লক-বাটিকসহ নকশী কাঁথা, অ্যামবোটারের ননা ডিজাইন, শাড়ি, বিছানার চাদর, কুশনকভার রয়েছে।
এ দিকে মেলায় বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতি ও গৃহস্থলি পণ্য প্রদর্শন করছে দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠি আরএফএল গ্রুপ। মেলায় স্টলের দায়িত্বে থাকা মো. নবাব আলী জানান, কৃষি ও নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত হয় এমন প্রয়োজনীয় অনেক যন্ত্রপাতি আরএফএল তৈরি করছে। এগুলো টেকসই ও সাশ্রয়ী মূল্যে বাজারে সরবারহ করা হচ্ছে। এছাড়া বিশ্বমানের স্যানিটারি মালামালসহ গৃহস্থলি পণ্য আমরা তৈরি করছি। মেলায় এসব পণ্য দর্শনার্থীদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে। মেলায় অংশ নেয়ার মূল উদ্দেশ্য নিজেদের পণ্যের প্রচার, প্রসার ও বাজার সম্প্রসারণ বলে জানান তিনি।
মেলায় চামড়াজাত পণ্য প্রদর্শন করছে টো-লেদার। প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা কানিজ ফাতেমা বলেন, বিভিন্ন ধরনের চামড়ার জুতা তৈরি করি। এছাড়া চামড়ার ব্যাগ, মানি ব্যাগ, লেডিস ব্যাগসহ বিভিন্ন চামড়াজাত পণ্য তৈরি করি। মেলা উপলক্ষে প্রতিটি পণ্যে ৩০ শতাংশ মূল্যছাড় দেয়া হচ্ছে।
এবারের মেলায় সারা দেশের ২৯৬টি এসএমই উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের ৩০৯টি স্টোল অংশ নিয়েছে। এসব স্টলে উদ্যোক্তাদের নিজেদের তৈরি দেশীয় পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি হচ্ছে। মেলায় অংশ নেয়াদের মধ্যে ১৯৫ জন নারী ও ১০১ জন পুরুষ উদ্যোক্তা রয়েছেন। মেলায় দেশে উৎপাদিত পাটজাত পণ্য, খাদ্য ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, চামড়াজাত সামগ্রী, ইলেক্ট্রিকাল ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, আইটি পণ্য, প্লাস্টিক ও সিনথেটিক পণ্য, হস্তশিল্প, ডিজাইন ও ফ্যাশনওয়্যারসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প পণ্য প্রদর্শন করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, শনিবার (৭ মার্চ) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান থাকায় মেলা বন্ধ ছিল। এজন্য মেলার সময় একদিন বাড়ানো হয়েছে। মেলা চলবে আগামী ১৩ মার্চ পর্যন্ত।