মাদক মামলায়ও জি কে শামীমের জামিন বাতিল

0
95

বাংলা খবর ডেস্ক: অস্ত্র মামলার পর এবার মাদক মামলাতেও যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা জি কে শামীমের জামিন বাতিল করেছেন হাইকোর্ট।

রোববার (৮ মার্চ) দুপুরে বিতর্কিত ঠিকাদার জি কে শামীমের অস্ত্র মামলায় দেয়া জামিন মঞ্জুর করে দেয়া আদেশ প্রত্যাহার করা হয়। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মুজিবুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আগের আদেশ প্রত্যাহার করে এ আদেশ দেন। এর ফলে ওই মামলায় জি কে শামীমের জামিন আর থাকল না।

এর আগে সকালে এ দুই মামলাতে পাওয়া জামিন বাতিল চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। একই সঙ্গে তার জামিন সংক্রান্ত সকল নথি তলব করেন প্রধান বিচারপতি।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, জামিনের আদেশটি পুনর্বিবেচনার জন্য বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মুজিবুর রহমানের বেঞ্চের কার্যতালিকায় রাখা হয়।

এর আগে শনিবার (৭ মার্চ) জানা যায়, কঠোর গোপনীয়তায় যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ও বিতর্কিত ঠিকাদার জি কে শামীমকে অস্ত্র ও মাদক মামলায় ৬ মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। তবে জামিনের বিষয়ে জানা নেই বলে দাবি করেছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফজলুর রহমান খান।

গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নিকেতনের অফিস থেকে ৬ দেহরক্ষী ও বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা, এফডিআর ও স্বর্ণালঙ্কারসহ গ্রেফতার করা হয় যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তৎকালীন সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জি কে শামীমকে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, অর্থপাচার ও মাদক মামলা রয়েছে।

রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় জি কে শামীম প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবেই পরিচিত ছিলো। এছাড়া গণপূর্ত ভবনের বেশিরভাগ ঠিকাদারি কাজই ছিলো জি কে শামীমের নিয়ন্ত্রণে। গ্রেফতারের পর জি কে শামীমের বিষয়ে বেরিয়ে আসতে থাকে শত শত কোটি টাকার নানা অনিয়মের কথা। এছাড়া গত বছরের ২১ অক্টোবর জিকে শামীমের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন।

মামলায় জিকে শামীম অবৈধ উপায়ে মোট ২৯৭ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার ৫৫১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়। এসব মামলায় একাধিকবার জি কে শামীকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। মামলাগুলোর মধ্যে অস্ত্র ও মাদক আইনের মামলায় চার্জশিট হয়েছে। বাকিগুলো তদন্তাধীন রয়েছে।

জানা যায়, গ্রেফতারের ৬ মাস না যেতেই অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে গত ৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে ৬ মাসের আগাম জামিন নেন তিনি। তার জামিনের লিখিত আদেশ প্রকাশিত হয় ১২ ফেব্রুয়ারি। জি কে শামীমের জামিনের বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফজলুর রহমান খান জানান, তিনি জামিনের বিষয়ে কিছুই জানেন না। রোববার খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলেও জানান তিনি।

যদিও জামিন আদেশের একটি কপি ও কার্যতালিকার আলাদা আলদা দুটি নথি সংগ্রহ করে সময় সংবাদ। এতে দেখা যায়, মূল নামের পরিবর্তে আংশিক নাম ব্যবহার করে জামিনের আবেদন করা হয়। আইনজ্ঞরা জানান, জি কে শামীমের আইনজীবী ও আদালতের বেঞ্চ কর্মকর্তাদের যোগসাজসে বিষয়টি করা হতে পারে।

দুদক আইনজীবী বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির কার্যতালিকাটা বের করে দেখলাম ১৫ নাম্বার কোর্টের ১৩৫ নাম্বার সিরিয়ালে আছে। যেখানে নামটা সম্পূর্ণ দেওয়া নেই। যদি জামিন সত্যিই পেয়ে থাকে তাহলে রাষ্ট্রকে দ্রুত আপিল করতে হবে।’

বাসাবো ও এজিবি কলোনির স্থানীয়রা জানান, গ্রাম থেকে ঢাকায় আসার পর এজিবি কলোনি, হাসপাতাল জোন এবং মধ্য বাসাবোতেই পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন শামীম। ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের মাধ্যমেই তার রজনীতি শুরু। পরবর্তী সময়ে মির্জা আব্বাসের ভাই মির্জা কালু ও মির্জা খোকনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় এবং তাদের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে গণপূর্ত ভবনের ঠিকাদারি ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেন তিনি। ঢাকা মহানগর যুবদলের সহসম্পাদকের পদও বাগিয়ে নেন। বিএনপি আমলে গণপূর্ত ভবন ছিল তার দখলে। শামীম ছাড়া ওই মন্ত্রণালয়ের কোনো কাজ অন্য কারো পাওয়া ছিল দুঃসাধ্য ব্যাপার।

ক্ষমতার পালাবদলে শামীমও বদলে গিয়ে এখন কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা। গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কিংবা যুবলীগের পার্টি অফিস, বিয়ে বাড়ি কিংবা বন্ধুর বাড়ি, যেখানেই তিনি যান, সঙ্গে থাকে অস্ত্রধারী প্রটোকল বাহিনী। ভারী অস্ত্র নিয়ে ছয়জন নিরাপত্তারক্ষী আগে-পিছে পাহারা দিয়ে তাকে নিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন জি কে শামীম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here