রেলে পণ্য পরিবহনে দিল্লির প্রস্তাব, খতিয়ে দেখছে ঢাকা

0
84

মিজানুর রহমান:
করোনা পরিস্থিতিতে রেলপথে পণ্য পরিবহন করে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বিশেষত আমদানি-রপ্তানী স্বাভাবিক রাখার প্রস্তাব করেছে ভারত। বাংলাদেশের তরফে ওই প্রস্তাবের সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখতে (ফিজিবিলিটি স্টাডিজ) একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির রিপোর্ট আসার পর এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবে ঢাকা। কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে- করোনার কারণে যাত্রীবাহী বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী বা বন্ধন ট্রেন যতদিন বন্ধ থাকছে, ততদিন ওই রেল লাইন ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক রাখার একটি প্রস্তাব নিয়ে কাল দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। ভিডিও কনফারেন্সে ওই আলোচনায় ভারতজুড়ে কার্যত লকডাউন আর বাংলাদেশে অঘোষিত লকডাউন বা ছুটির এই কঠিন সময়ে ট্রাক যোগে পণ্য পরিবহনে নানা রকম সীমাবদ্ধতার কথা ওঠে আসে। কথা হয় ট্রাক ড্রাইভারদের ব্যক্তিগত অনীহা ছাড়াও বাধ্যতামূলক ১৪ দিন করে কোয়ারেন্টিনে থাকা সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে। ওই আলোচনার বিষয়ে ভারতীয় হাই কমিশন জানিয়েছে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রাখতে উদ্ভাবনী ধারণা খুঁজতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানান হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাস। হাই কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- গতকাল ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের উদ্যোগে বাংলাদেশের বাণিজ্য, পররাষ্ট্র ও রেলপথ মন্ত্রণালয়সহ জাতীয় রাজস্ববোর্ড ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন।

বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিলো বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা ও বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং উন্নয়ন। এতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ সারোয়ার মাহমুদ এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামান যোগ দেন। আর ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাসের নেতৃত্বে ভারতীয় কূটনৈতিকরা ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন।

বৈঠকটি ফলপ্রসু হয়েছে উল্লেখ করে হাইকমিশন জানায়, কোভিড-১৯ সংক্রমনের কারনে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এ চ্যালেঞ্জ উত্তরণে উদ্ভাবনী সমাধান বের করার বিষয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের সূত্র ধরে সরবরাহ ব্যবস্থা, পণ্যের চলাচলের সঙ্গে নিত্যপণ্যের আনা নেয়া, সমন্বিত চেকপোস্টে ও স্থল বন্দরগুলোতে বাণিজ্য সুবিধা, শুল্ক ও অশুল্ক বাধাগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি বিনিয়োগ সহজিকরণ নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাস বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক চমৎকার। আর বাণিজ্যের বহুমুখিতা অংশিদারিত্বের ভিত্তি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশিদার। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে দুই দেশের বাণিজ্য ১০ দশমিক ২৫ বিলয়ন ছাড়িয়েছে। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বের অনেক দেশের মত বাংলাদেশের সঙ্গেও ভারতের সরবরাহ ব্যবস্থায় বাধা এসেছে। এ জন্য ভারতীয় হাইকমিশানার সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রাখতে উদ্বাবনী ধারনা খুঁজে বের করার আহ্বান জানান বৈঠকে যোগ দেয়া বাংলাদেশী প্রতিনিধিদের। এদিকে রেলপথে পণ্য পরিবহনের প্রস্তাবের বিষয়ে দু’দিন আগে কথা হয় বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দীনের সঙ্গে। মানবজমিনের জিজ্ঞাসার জবাবে তিনি বলেন, করোনা নিয়ে সতর্কতার মধ্যেও ভারতের সঙ্গে আমদানী-রপ্তানী ফের চালু হয়েছে সীমিত পরিসরে। তবে এটি আরও বাড়ানোর চিন্তা-ভাবনা আছে। বিভিন্ন বিকল্প প্রস্তাবও রয়েছে। এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। চলতি সপ্তাহে এ বিষয়ে আলোচনার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা
দেশজুড়ে আরও দু’সপ্তাহ লকডাউন বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এ বিষয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে একটি নির্দেশিকা জারি হয়, যেখানে ভারতের বিভিন্ন এলাকাকে ৩টি জোনে চিহ্নিতকরণের কথা বলা হয়। ১৭ ই মে অবধি বাড়ানো ওই লকডাউনে রেড জোন পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। তবে গ্রিন ও অরেঞ্জ জোনের ক্ষেত্রে সরকার কিছুটা শিথিলতা আনবে বলে আভাস মিলেছে। অর্থাৎ হটস্পট এলাকাগুলো ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সেখানে কড়াকড়ি জারি থাকবে। আর ‘গ্রিন জোন’ ও ‘অরেঞ্জ জোন’ এলাকায় জনজীবন ও ব্যবসা-বাণিজ্য কিছুটা শিথিল হতে পারে। ওদিকে সোমবার বাংলাদেশের তরফেও ১৬ই মে পর্যন্ত অঘোষিত লকডাউন (ছুটি) বাড়ানো হয়েছে। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক রাখতে শর্তসাপেক্ষ শপিং মলগুলো মঙ্গলবার থেকে খুলে দেয়ার ঘোষণা এসেছে।

সূত্র: মানবজমিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here